আম্র শাখের মুকুলগুলি ঝড়ে
পড়েছিলো এক এক করে
বৈশাখী ঝড়ে কেপে কেপে উঠেছিলো
দখিন কোনের চিত্রা গাছটা
কাটফাটা রোদে চুরমার হয়েছিলো
ফসলের মাঠ, ধানের খেত,
নদী, নালা, পুকুর-
যেন এক তৃষ্নাত্ব মনের করুন ব্যাকুলতা।
মনে হয় সেই দিন গুলোই ভালো ছিলো
যখন একা নিসঙ্গতা
সঙ্গ দিয়ে গিয়েছিলো নির্জনে
বসে ছিলো মোর অশান্ত মনে
বলেনি কোন কথা
তবু যেন জীবনের সকল প্রশ্নের
সদুত্বর দিয়ে গিয়েছিলো সে
যেন বলছিলো আবার দেখা হবে
ব্যর্থ প্রহসন।।
আজ আবার ফুটেছে ফুল, ঝাউ বনে লেগেছে দোলা
নীল দিগন্তে উড়ছে সাদা হাস, সাদা বক
মুখর পাল তুলে ছুটে চলেছে নৌকা
আজও তবু মনে পড়ে জীবনের প্রথম প্রনয়।।
__________
মনে নেই শেষ বার কখন দেখেছিলাম তাকে
সন্ধ্যের শিশির ভেজা ঘাসে
মনে পড়ে পশ্চিমের আকাশটা
লাল হয়ে ছিলো তখনো
আলতা রাঙ্গা পায়ে পিচ বিছানো রাস্তাটা পেরিয়ে
সে এসে দাঁড়ালো কাছে
বলল, "কখন এলে? অনেকখন বসিয়ে রেখেছি বুঝি।"
হঠাৎ যেন বুকটা কেপে কেপে উঠলো
যেননি দখিনা বাতাসে দুলে উঠে মল্লিকা বন।
যেন অনেক কথার মালা একসাথে চেপে বসলো
বুকটার উপর
আবার প্রশ্ন এলো, কি হলো কথা বলছ না যে?"
কথা আর কোথায়
সব যে তোমার ওই দুটো চোখে মিশে
একাকার হয়ে গেছে।
_________________
মাঝে মাঝে মনে হয় স্বপ্ন গুলোই সত্যি
মাঝে মাঝে মনে হয় মিথ্যে গুলোই
স্বপ্নের জাল বুনে চলেছে
আর তার মাঝে যে বিবর্ন রং টা
আপছা অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে
মনে হয় সে যেন বড্ড চেনা
যেন হাজার বছরের পরিচয়ের সোপান
বয়ে নিয়ে চলেছে
কিন্তু কেমন যেন ঝাপসা ছায়াঢাকা
কায়াহীন।
হঠাৎ আবার বিদুৎ ছটার মত জ্বলে উঠে
হাওয়াম মিলিয়ে যায়
যেন বলতে চায় অনেক কথা
কিন্তু সবই অব্যক্ত
স্মৃতির পটে কেবল মাথা ঠুকরে মরে।
_________________
ভালো লাগতো তার কৌতুহল গুলোকে
প্রবল আবেগের দিকে ঠেলে দিতে
তার সন্দেহ গুলোকে এক
গতিহীন প্রবাহ দান করতে।
যেমনি নদীর জল সমুদ্রে গিয়ে পড়ে
আর সেই দূর্লভ মুহুত্বে যখন সে
অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিতো
তখন তার চুলে হালকা হাতের ছোয়া-
মনে পড়ে সে দিন যখন শেষ সন্ধ্যায়
শেষ বারের মত দেখেছিলাম তাকে
মুখে ছিলোনা কথা
অন্তরের আবেগ গুলো যেন
অগ্নি উৎপাটিত আগ্নেয়গীরির মত
উপচে উঠছিলো।
বিকেলটা যখন সন্ধের হাত ধরে
রাতে এসে মিশলো-
সে বলল, "এখন যেতে হবে"
"এখনি! আর একটু কি থাকা যেতো না?"
চোখ দুটো স্থির তাকিয়ে আছে আমার দিকে
চাহনিটা বড্ড চেনা---
শেষ বার শুনেছিলাম তার চুড়ির শব্দ
শেষ বার দেখেছিলাম তার চোখে
কাজলের আলপনা
একটু যেন ভিজে হয়ে উঠেছিলো আবেগে
একটু যেন নিস্তব্ধতায়
শান্ত হয়ে উঠেছিলো চারপাশ।
__________________
তারপর দিগন্ত মাঠের শূন্যতাটা যেন
ঠাই দাঁড়িয়ে ছিলো
কালো আকাশটার নিচে
শূন্য পুুকুরের শীতল জলরাশির মত
সময়টাও যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রাস্তার লেম্পপোষ্ট গুলো একা
ঝড়া পাতা উড়ছে বাতাসের দোলায়।
একবার মনে হলো সে বুঝি আবার ফিরবে
একবার যেন মনের অজান্তেই
মুখটা পেছন ফিরে গেলো
সে কেবল
এক জনশূন্য পৃথিবীর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা
এক টুকরো বেদনা।