তোমাদেরকে কবিতা লিখতে দেখে আমি ভেবেছিলাম
যুদ্ধ টা বুঝি শেষ হয়ে গেছে,
আরব সাগরের জলে ডুবে গেছে
শত্রু সেনার টর্পেডো জাহাজ,
শত্রুর বিমানগুলো শান্তির পতাকা উড়িয়ে
ফিরে গেছে নিজেদের স্থল সীমায়।
আমি ভেবেছিলাম মৃতপ্রায় অলকানন্দা গাছটায়
বুঝি নতুন করে ফুল ফুটেছে।
ডালিম গাছটার ডালে বসে
একাধারে ডেকে যাচ্ছে মাছরাঙ্গা আর পানকৌড়ি,
যে সারস পাখিটি একাকী বসে থাকত বাবলা গাছটার ডালে
সে বুঝি কোনো নতুন সঙ্গী খুঁজে পেয়েছে।
তোমাদেরকে ছবি আঁকতে দেখে আমি ভেবে ছিলাম
সামনের বৈশাখে বুঝি বট তলায় আবার মেলা বসবে।
ফেলে আসা শরতের বিকেল কাশ ফুলের গায়ে দোলা দিতে দিতে
হারিয়ে যাবে গোধূলীর আবছায়ায়।
ঝরা বকুলের পথে হেঁটে চলা সেই কিশোরী
এইবার বুঝি তার মায়াবী চোখ তুলে তাকাবে।
আমি ভেবেছিলাম মানুষগুলো হয়তো বুঝতে পেরেছে
জীবনটা ভোগের জন্য নয়,
বুঝতে পেরেছে হিংসা শুধু নিজের জীবনকে নয়
পুরো সমাজটাকেই বিষের সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়
আমি ভেবেছিলাম মানুষ আর কখনো স্বর্গে যেতে চাইবে না
স্বর্গটাই নিজ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসবে।
এর পর আমি পেছনে ফিরে তাকালাম
ঐ উঁচু পাহাড়ের ঢাল টার গায়ে-
দেখাম একটা বার তের বছরের বালক
একটা ছয় ফুট লম্বা পাথরে খোদায় করে চলেছে অনর্গল।
এই ছেলেটিকে কি আমি চিনি? না তো-
আগে তো দেখিনি তাকে কখনো
কিন্তু তার প্রাণান্ত চেষ্টায় পাথরে চিরে যে মুখটি ভেসে এলো
সে তো আমার বড্ড চেনা।
হঠাৎ কোথা থেকে আচমকা এক বোমারু বিমান
হুরমুর করে উড়ে চলে গেলো মাথার উপর দিয়ে।
ভয়ে আর আতঙ্কে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম।
একটা বোমা ফাটল দূর পাহাড় টার উপর-
এরপর আর একটা। এভাবে প্রায়
ছয়টা বোমার শব্দ শুনেছিলাম আমি
কতখন যে লুটিয়ে ছিলাম মাটিতে মনে নেই।
একটু পর যখন সবকিছু শান্ত হয়ে এলো আমি উঠে দাঁড়ালাম
দেখলাম তখনো তোমরা কবিতা লিখছ বসে,
তখনো দুই জন লোক অশ্বথ গাছটার নিচে বসে ছবি আঁকছে
আর সেই ছেলেটা তাকে তো কোথাও দেখতে পেলাম না
শুধু দেখলাম লাল রক্তে ভিজে আছে তার অসমাপ্ত পাথরের মূর্তি।
ছেলেটা কি তবে হারিয়ে গেলো?
কাজটা শেষ না করেই হারিয়ে গেলো।
হঠাৎ দেখলাম সেই দূর পাহাড়ের উপর থেকে
একটা চৌদ্দ পনেরো বছরের ছেলে এসে দাঁড়ালে মূর্তিতার সামনে।
মাটি থেকে হাতুড়ে আর বাটালী তুলে নিয়ে
খোদাই করতে লাগলো সেই অদ্ধসমাপ্ত পাথরের মূর্তি-
আমি বুঝলাম যুদ্ধ টা এখনো শেষ হয়ে যায়নি।