অনেকদিন পর আমাদের দেখা।
গুণে গুণে চার বছর অথবা
একশো ছাব্বিশ কোটি চৌদ্দ লক্ষ চার হাজার মূহুর্ত!

দেখা হওয়ার পরপর-ই আমরা আলোচনা করছি
নিজেদের স্ব স্ব এবং তুলনামূলক পরিবর্তন নিয়ে।

তুমি শুরুতেই বললে,
"রুদ্র তুমি আগের চেয়ে অনেক মোটা হয়েছো
তবে তোমার সে তেজস্বী ভাব কমেছে অনেক।"
আমি হেসে বললাম, " কমেছে বুঝি?
তা বয়সের বর্গের সমানুপাতিক
নাকি ব্যস্তানুপাতিক হারে?"
তুমি বললে, " অংক আমি কখনো বুঝিনি,
এক আর শূন্যে ভর করে তাই
আজও আমি দিন গুণি।
জটিল হিসাব তোমারই থাক,
ও অংক আমি কখনো বুঝিনি।"

আমি বললাম,
"তোমার স্বাস্থ্যও অনেক ভালো হয়েছে দেখছি!
রান্নাতে বেশ মন দিয়েছো?
তখন তো তুমি চা টাও ঠিকমতো করোনি কখনো!"
কত করে বলতাম লেবু চায়ে লিকার হবে অল্প,
রং আসার সাত সেকেন্ডের মধ্যে নামিয়ে তাতে
এক চিমটি লবণ, ভালোবাসার চামচে দু-চামচ চিনি
আর বিরহি লেবুর রস আন্দাজ মতো!

তুমি বললে," বাদ দাও তো রুদ্র,
ওসব জটিল রসায়ন আর কতো?
"আচ্ছা এখনো কি একা আছো?
কালি পড়েছে চোখের নিচে, রাত জাগো?"

দুজনে মিলে হাটছি অনেক,
সমাজকে লুকিয়ে হাসছি, হাটছি।
পথ রোধ করছে কত চেনা মুখ,
বাঁকা চোখ তাদের বলছে যেন
- এখন আর তোমাদের মানায় না এ সুখ।"

একে অপরের পাশে থাকার আনন্দ গায়ে মাখছি,
বাঁকা চোখগুলোর টিপ্পনীও যেন আমরা আমলে নিচ্ছি।

খুব করে দুজনেই চাইছি এ মূহুর্তের যেন শেষ না আসে।
কিন্তু সময় যেন থামতেই চায় না, থেমেছে কবে?
তখনও তো কতো চেয়েছি থামাতে ওকে,
তা না পেরে গেছি আমি থামাতে তোমাকে।
যেন থামতেই চাওনি,
থেমেছো কবে?

- "আমার কিছু করার ছিলোনা রুদ্র।
শুনো না, দুজনে একটু রিকশায় উঠি?
আমরা তো মাত্র দুবার উঠেছি রিকশায়।"

(আমি বললাম)- হুম, মনে আছে,
গোধূলি আর তরুণ সন্ধ্যায় ইদের রাতে,
আমি যেন বিশ্ব জয়ের গর্ব নিয়ে
তাকিয়ে ছিলাম রাস্তার পাশের ছেলেগুলোর দিকে।

তুমি বলেছিলে,
রিকশা চড়ার আরো দুটো সুন্দর সময় আছে-
রাত তিনটা একত্রিশ মিনিটে,
শীতের রাতে, একটু ভয়ে তুমি থাকবে আমার পাশে।

আর বলেছিলে,
নতুন দিন দেখবো দুজনে রিকশায় বসে
সূর্য যখন চুমু খাবে শিশিরের গায়ে।
.
.
.
(ক্রিং, ক্রিং, ক্রিং ক্রিং ক্রিং!)
উফফ!
এই ড্রাইভার, কি হলো, বেল দাও কেন এতো?
- এই!
- এই!
- এই বাবা! উঠো, উঠো, স্কুলে যাবো!
লেট হলে আজও মিস বকা দিবে।

(আমি বলছি),"অপরাজিতা,আরেকটু ঘুমাই প্লিজ।"

-" বাবা উঠো, চার বছর হয়
প্রতিদিন তুমি মাকে এভাবে ডাকো।
কই শুনে মা তোমার কথা?
আমায় স্কুলে দিয়ে কোথায় যে হারিয়ে গেল,
আর সে ফিরলো না তো!"

আমি একটু স্বাভাবিক হয়ে বললাম,
"সরি রে মা, তোর মা আর কখনো আসবেনা।
স্কুল শেষে একবার দূর থেকে দুজনে দেখে আসবো ওকে। "

অপরাজিতা,  দূরত্বের বয়স আজ একশো ছাব্বিশ কোটি চৌদ্দ লক্ষ চার  হাজার মূহুর্ত!!