বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞান কবিতার আন্দোলন চলছে। কবিতাকে নতুনত্ব গঠন দেয়ার গবেষণা চলমান। সেখানে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তনের সাথে যোগ হচ্ছে বিজ্ঞান। আর সঙ্গত কারণে কবিতায় বিজ্ঞানের শব্দ ব্যবহার হচ্ছে। বিজ্ঞানের সব শব্দ সহজ নয়। বিজ্ঞানের কোনো বিষয়ের বা শব্দের সাথে পরিচিত না হলে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে ঐ বিষয় বা শব্দ দুর্বোধ্য বা কঠিন বলেই মনে হবে। আর এই অজানাকে না জেনে কবিতায় কঠিন শব্দ ব্যবহার করে কবিতাকে জটিল করা হচ্ছে এমন দোষ দেয়া ঠিক নয়। পড়াশুনা বা পরিশ্রম এখানে জরুরী। ব্যক্তির সীমাবদ্ধতা দিয়ে কবিতাকে বিচার করলে কবিতা দুর্বল হতে থাকবে। কবিতায় দুর্বোধ্যতা সময়ের দাবী। দুর্বোধ্য শব্দের অর্থ হচ্ছে বুঝতে না পারা। সাহিত্যে দুর্বোধ্যতা শব্দটি যে কোন জটিল শব্দের উপস্থিতি থাকলে হয়। অর্থাৎ এমন জটিল শব্দের অর্থ পাঠকের বোধগম্য নয়। এখন পাঠক বুঝে না এক রকম অর্থ ; আর কবি না বুঝলে আরেক রকম অর্থ। তবে একজন কবি হতে হলে যে গুণযুক্ত হতে হয় তা থাকলে সে সব কবির বুঝা মোটেও দুর্বোধ্য নয়। কবিরা চলমান বিশ্বের খোঁজ রাখে; পড়াশুনা করে। কিন্তু সাধারণ পাঠক হলে অনেক রকম কথা আছে। সব পাঠক একই মনের নয়। সব পাঠকের বুঝবার ক্ষমতা এক নয়। পাঠককে বুঝানো কবির মোটেই দায় নেই। কেননা, যে কবি সে তার মনের মাধুরী মিশিয়ে নিজের উপলব্ধি থেকে লেখে। সে লেখায় বাংলা, ইংরেজী, ফারসী, আরবী, জাপানী, চাইনিজ সহ পৃথিবীর বহুবিধ ভাষার শব্দ মালা থাকতে পারে। যার সাথে পাঠক পরিচিত নাও থাকতে পারে। কবিতা বুঝতে হলে পাঠককে আগ্রহ নিয়েই বুঝতে হবে। স্থির পাঠকরা বুঝার চেষ্টা করে। আর অস্থির পাঠক কোন মৌলিক পাঠক নয়। মৌলিক পাঠক হলে তার জন্য দুর্বোধ্য বলে কিছু নেই। কবিতায় দুর্বোধ্যতা সময়ের চাহিদা। সহজ ভাষার লেখায় রবীন্দ্রনাথের জুড়ি নেই। তিনি সহজ শব্দের দ্যেতনায় অসাধারণ ভাব সৃষ্টি করেছেন তার সৃষ্টি কর্মে। অপেক্ষাকৃত ভাবে নজরুল তার লেখায় প্রচুর বিদেশী ভাষার শব্দ ও কঠিন শব্দ ব্যবহার করেছেন। দুর্বোধ্য বললে তো মূলত: নজরুলের সাহিত্যের মধ্য দিয়েই তার যাত্রা শুরু। আর সে সময় নজরুল যদি ভিন্ন উপস্থাপন বা ভিন্ন আঙ্গিক সৃষ্টি না করতেন তবে রবীন্দ্রনাথের লেখার পরে তো আর কোন কিছুই লেখার প্রয়োজন ছিলো না। এমন কোনো বিষয় নেই যা রবীন্দ্রনাথ ভাবেননি। তিনি একাধারে দর্শন, ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র, বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্প, আধ্যাত্মিকতা, ব্যক্তিগত-পারিবারিক-সামাজিক ও অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় অর্থাৎ সৃষ্টি জগতের সকল কিছুই তার লেখায় চিন্তা চেতনায় ধারণ করেছেন। বর্তমান সময়ের কবি বা সাহিত্যিকগণ যে সব শব্দ ব্যবহার করছেন তা অভিধান ভুক্ত। এখন তো আঞ্চলিক ভাষার অভিধানও রয়েছে। এজন্য কবিদের নতুন শব্দ ব্যবহার মোটেও দুর্বোধ্য করেনি লেখাকে। বরং প্রাঞ্জলতা দিয়েছে পৃথক বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। কেননা বর্তমান সময়ের কবিরা বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে বাস করছে। তাদের চিন্তা চেতনায় বিজ্ঞান ভীষণ ভাবে প্রভাব ফেলছে। সুতরাং দুর্বোধ্যতা সময়ের চাহিদা। বরং কবিদের গুরু দায়িত্ব নতুন নতুন শব্দ উদ্ভাবন করে বাংলা সাহিত্যকে আরো গতিশীল করা। এরই সাথে আধুনিক বিশ্বের সাথে বাংলা সাহিত্যকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস অনেক বর্ণিল, অনেক ছন্দিত এবং সংঘাতপূর্ণ। চর্যাপদ থেকে বিজ্ঞান কবিতা, ভাষা ও সাহিত্যে বাংলা সাহিত্যের জন্ম, দিক পরিবর্তন ও সমৃদ্ধি অর্জনে সিলেটের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃতি বিদ্যায় কাশীর পর সিলেটের স্থান। পন্ডিত জওহরলাল নেহরু সিলেটকে বলেছেন জেলা হলেও ব্যতিক্রম, রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-শ্রীহট্ট শ্রী ভূমি, সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছে ইশ্বরের তেসরা খেল। বিদ্যা সাগর বলেছে সিলেটিরা চতুর। চর্যাপদের জন্ম সিলেট, বরাক ও আসামের পাহাড়ে। বৈষ্ণব সাহিত্য ও ধর্মের প্রবর্তক নিমাই সন্যাসী ও সঙ্গীরা সিলেটি। মহাভারতের প্রথম অনুবাদক সঞ্জয় গৌর সিলেটি। মধ্যযুগের পুঁথি সাহিত্যের কোরেশী মাগর ঠাকুর, সৈয়দ সুলতান, সৈয়দ আলাওল, রবীন্দ্রনাথ পুত্র রথীন্দ্রনাথের সংস্কৃতির শিক্ষক শ্রীবর্ধন বিদ্যানব সিলেটি। সিলেটি মণিপুরী নাচ দেখে রবীন্দ্রনাথ শিল্পী দল নিয়ে শান্তি নিকেতন ও বিশ্বে পরিচিতি দেন। মরমী গানের হাছন রাজা, আমির সাধু, বাউল গানে শাহ আবদুল করিম সম্রাট, দর্শনের জেসি দেব, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, সাংবাদিক ভাস্বর গৌরী শংকর, ডন পত্রিকার আলতাপ হোসেন সিলেটি। প্রাচীনকালে জাতের সংঘাত, ধর্মের সংঘাত, প্রাধান্য বিস্তার এসব পরিবেশ থেকেই চর্যাপদের জন্ম। চর্যাপদের মাধ্যমেই বাংলা সাহিত্যের জন্ম। প্রাচীনকালের কাব্যছিল ধর্ম ও দেবদেবী নির্ভরশীল। মহাকবি হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসি ছিল দেবতাদের গুণকীর্তনে ভরপুর। ভারতবর্ষের কাব্য ছিল ধর্মকথা। উচ্চ বর্ণের হিন্দুর সাথে বৌদ্ধ সহজিয়াদের সংঘাতবৌদ্ধরা ছড়িয়ে পড়ে পাহাড়ী সিলেট, বরাক উপত্যাকা, আসাম জনপদ থেকে নেপাল পর্যন্ত। লোকজন পালিয়ে পালিয়ে জীবন যাপন করেছে আর অনুভব করেছে এভাবে পালিয়ে ধর্ম রক্ষা হবে না। এজন্য বানীকে লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। শুরু হয় বাণী লিপিবদ্ধ করা। সাজন-ভজন পদ্ধতিকে সর্বভারতীয় বর্ণমালা দেব-নাগরীতে লিপিবদ্ধ করা শুরু করে। চর্যাপদের ২৩-২৪ জন সাধুর পরিচয় পাওয়া যায়। সিলেট, বরাক ও আসামের পাহাড়ী অঞ্চলে রচিত চর্যাপদে অঞ্চলভিত্তিক মাটি ও মানুষের জীবন চিত্র ফুটে উঠেছে। চর্যাপদ রচিত হয় সপ্তম শতক থেকে একাদশ শতক পর্যন্ত। একাদশ-দ্বাদশ শতকের মধ্যেই বাংলা লিপির উদ্ভব ঘটে। এই বাংলা লিপি বর্তমানে বিশ্ব বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে অতীব জনপ্রিয়। চতুর্দশ শতকেও বাংলা ততোটা জনপ্রিয় হয়নি। দেব নাগরীর লিপির সাথে বাংলা লিপির তখন প্রতিযোগিতা ছিল। সংকটকালে সিলেট, বরাক ও আসাম অঞ্চলের মানুষের হাতে সিলেটি নাগরী বলে একটি স্বতন্ত্র লিপির আবিস্কার ঘটে। এ অঞ্চলের মানুষের নাগরিক চেতনা, ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রবাহমানতায় নতুন সাহিত্য মাত্রা যোগ করে। মধ্যযুগে বাংলালিপি বাংলার একটি বড় অংশে আধিপত্য বিস্তার করে। এতে সিলেট নাগরী লিপিতে সিলেট, বরাক ও আসাম অঞ্চলের মানুষের চাহিদা পূরণ করে এবং এ লিপিতে পুঁথি সাহিত্য, ধর্মীয় নীতি কবিতা, আখ্যান কাব্য, মরমী সংগীত ও লোক সাহিত্যকে লিপিবদ্ধ করে। মধ্যযুগ পর্যন্ত এ লিপির জনপ্রিয়তা। আনুমানিক ৭০০ বছর এ লিপি ঘরে ঘরে সমাদৃত হলে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ভাষা সংকট প্রবল হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা না করার ষড়যন্ত্রে জন্ম নেয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা, রোমান হরফে বাংলা চালু করার চক্রান্তে ভাষা আন্দোলনের তীর লাগে সিলেটি নাগরী লিপির গায়েও। নাগরী লিপি হারিয়ে যায় কিন্তু বাংলা বর্ণমালার খুঁটি মজবুত হয়। কিন্তু সিলেট, বরাক ও আসাম অঞ্চলের ঘরে ঘরে চর্চা হয়েছে নাগরী লিপি। গোলাম কাদির, মুছাব্বির ভূইয়া ও মোহাম্মদ সাদিক ৩টি পৃথক পিএইচডি গবেষনা করে নাগরী লিপি ও সাহিত্যের উপর। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ফার্সী ভাষায় লেখা দলিলের ওপর বাংলা ইংরেজীর পাশে সিলেট নাগরী লিপিও ব্যবহার হতো। সিলেটি নাগরী লিপি লুপ্ত। কিন্তু যুদ্ধজয়ী বাংলা বর্ণমালা বিশ্বজয়ী। বৈষ্ণব সাহিত্যে সিলেটের সংযুক্তি আরো রোমাঞ্চকর। ১৫ শতকে সিলেটের ঢাকা দক্ষিণের নিমাই সন্নাসী ওরফে শ্রী চৈতন্য দেবের জন্ম পিতার কর্মস্থল নবদ্বীপে। কাটোয়ায় গিয়ে নিমাই সন্নাসী বিষ্ণুর অনুসারী হয়ে প্রবর্তন ও প্রচার করেন বৈষ্ণব ধর্মের। ১৪-১৫ হাজার পদাবলী রচিত হয়। এর মধ্যে ৬-৭ হাজার পদাবলী সাহিত্য মানের দিক থেকে খুবই উৎকর্ষ ছিল। বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধি ও পূর্ণতা দান করে। এই পদাবলী সাহিত্যই বাংলা সাহিত্যের প্রাণ ভ্রমরা। মধ্যযুগের এই পদাবলী সাহিত্য ধাবিত হয় নবধারার কাব্য বিহারী লালের হাত দিয়ে গীতি কবিতায় উৎকর্ষতা লাভ করে। এ ধারায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলী রচনা করে নোবেল জয়ী হন। পরবর্তী আধুনিক কাব্যযুগেও গীতি কবিতা তার জনপ্রিয়তা হারায়নি। শ্রীহট্ট পুত্র শ্রীচৈতন্যদেবের জন্ম বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। শ্রীহট্ট পুত্র সঞ্জয় গৌর মহাভারতের প্রথম বাংলা অনুবাদ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিলিপি হয়ে যায়। সঞ্চয় গৌরের কৃতিত্ব হারিয়ে যায়। বাংলা সাহিত্যের মধ্য আকাশ জুড়ে বৈষ্ণব সাহিত্য। বাংলা সাহিত্যের আরেক অধ্যায় ইসলামী দর্শন সাহিত্য। যে সাহিত্যকে সমদ্ধি করেছে দার্শনিক দেওয়ান মোঃ আজরফ। লোক সঙ্গীত ও লোক সাহিত্যকে হবিগঞ্জের দিনারপুরের কোরেশী মাগন ঠাকুর (দেওয়ান নুরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর পূর্ব পুরুষ) ও সুলতানশীর সৈয়দ সুলতান ভিত্তি দিয়েছে। আর আশরাফ হোসেন সাহিত্য রত্ন, চৌধুরী গোলাম আকবর সাহিত্য ভূষণ ও চৌধুরী হারুন আকবর লোক সাহিত্যকে দিয়েছে পূর্ণতা। প্রয়াত নুরুল হক দেওঘরী কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ প্রতিষ্ঠা করে সিলেটে সাহিত্য ভান্ডার গড়েছে। রম্য সাহিত্য পূর্ণতা পেয়েছে সৈয়দ মুজতবা আলীর দক্ষতায়। হারানো নাগরী লিপির সাহিত্যকে বাংলা লিপ্যান্তর করে গবেষক মোঃ আবদুল মান্নান ও মোস্তফা সেলিম নতুন করে উদ্ধার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আধুনিক কবিতার ধারার সিলেট সন্তান কবি দিলওয়ার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক সুপরিচিত নাম। ফ্রান্সের কবি শার্ল বোদলেয়ারই প্রথম পাপ, অন্ধকার ও তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে শুরু করেন আধুনিকতাবাদী কবিতা আন্দোলন। শার্ল বোদলেয়ারের আধুনিকতাবাদী কবিতা বঙ্গ ভারতে পরিচিত করেন ২০ শতকের ৩০ দশকের পাঁচতারকা কবি বুদ্ধদেব, জীবনানন্দ দাশ, অমিয় চক্রবর্তী, সুধীনদত্ত ও বিষ্ণুদের শ্লোগান ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী, রবীন্দ্র উত্তর ও শার্ল বোদলেয়ার অনুকরণে কবিতা হবে আধুনিক এবং সমকালীন।তারপর ধাপে ধাপে স্বাধীনতা আন্দোলন, জাতিগত বিভেদ, সবল-দুর্বলের বৈষম্য। পরবর্তীতে কবিতায় আঞ্চলিকতার ব্যবহার। তারপর যতিচিহ্ন আন্দোলন, কমযতি ব্যবহার, বেশী যতি ব্যবহার, পরিমিত ব্যবহার। তারপর ক্ষুধা বিরোধী আন্দোলন, দুঃখবাদী আন্দোলন। কবিতার আংঙ্গিকগত বিষয়ে ত্রিশের পর সেই রকমই থাকল। কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে বিষয় ও প্রকৃতির। বর্তমান সময়টা বিজ্ঞান কবিতার যুগ। আর কবিতা হবে বিজ্ঞান কবিতা। বিজ্ঞান কবিতায় হবে সমকালীন সমস্যার সমাধান। কবি সত্য দ্রষ্টা, কবি ক্রান্তিদর্শী। মানুষের দুঃখ কষ্ট, পাওয়া না পাওয়াকে ধারণ করবেন কবি। কবি কবিতায় দিবেন সংকটকালীন সমস্যার সমাধান। কবি হচ্ছে জাতির সংকটকালীন সমসাময়িক সমস্যায় সঠিক ও যোগ্য প্রতিনিধি। বিশ্বে ইলিয়াড, ওডিসি, হোমার ও মাইকেলের মহাকাব্যও ধর্মীয় নির্যাস। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন চর্চাপদও ধর্মীয় নির্যাস। অক্ষরবৃত্ত ও মাত্রবৃত্তের সফল কারিগর ঝোঁকমুক্ত বহুমাত্রিক ছন্দ ব্যবহার করে বিদ্যা সুন্দর কাব্য রচনা করে প্রচলিত রীতি ভেঙ্গে লৌকিক বিষয়কে কবিতায় এনে বিপ্লবী ভাবনায় তীক্ষè বচনে প্রণয় উপাখ্যান রচনা করেন। এখন ধর্ম নয় শুধু দীর্ঘ সময়ে কবিতা যা কিছু রীতি নীতি ছিল সেগুলোকে ছেটেছুটে বিজ্ঞানকে যথার্থ করে কবিতাকে নবআঙ্গিকে রচনার প্রয়াসই বিজ্ঞান কবিতা। বিজ্ঞান কবিতার যুগ। ভাবে বিজ্ঞান মনস্কতা, ভাষায় ও ছন্দে মুক্তক ছন্দের ব্যবহারিক অগ্রসরতা হচ্ছে বিজ্ঞান কবিতার মৌল-ভিত্তি। অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠন বাংলা কবিতাকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে কবিতার নতুন দেহ গঠনে ১৯৮৮ সাল থেকে শুরু করেছেন বিজ্ঞান কবিতা আন্দোলন। এই আন্দোলনের উদ্যোক্ত ও অনুপ্রেরণায় ফরিদপুরের কৃতি সন্তান কবি ও সাংবাদিক শেখ সামসুল হক বিজ্ঞান কবিতার আন্দোলনকে আরো গতিশীল করে তুলেছেন অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠনের মাধ্যমে। চর্যাপদেই বাংলা কবিতার প্রাচীন যুগ। তারপর মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ শেষে বর্তমান সময় বিজ্ঞান কাব্য যুগ শুরু হয়েছে। বাংলা কাব্য সাহিত্যে চর্যাপদ, মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব সাহিত্য, নাথ সাহিত্য, পুঁথি সাহিত্য, পাশ্চাত্য অনুকরণে নতুন ধারায় প্রাক আধুনিক সনেট যুগ, গীতি কবিতার যুগ শেষে আধুনিক যুগে পৌঁছে ধারাবাহিক পথ পরিক্রমায় কবিতায় একই লেবু কচলানো হচ্ছে। চলছে কবিতার বন্ধ্যাত্ব কাল। উত্তর আধুনিক যুগ বলে অনেকে ভ্রমে ঘোরাচ্ছেন বাংলা কবিতার পাঠককে। বর্তমান সময়টা বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান মনষ্কতাই বাঙালী জাতির ভবিষ্যৎ মুক্তির পথ। বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনের জন্য বিজ্ঞান চেতনার কবিতা চর্চা হচ্ছে। আন্দোলন চলছে বিজ্ঞান কবিতার। ২০ শতকের ৮০ দশক থেকে শুরু হয় ঢাকায় বিজ্ঞান কবিতার আন্দোলন। আর এখন বিশ্বময় তা ছড়িয়ে পড়েছে এবং জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশের কবিতার শূন্য দশক ছিল বিজ্ঞানবাদী কবিতার দখলে। যা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে চলছে। কবিতা ধারণ করে ইতিহাস ঐতিহ্যকে দৃশ্য হোক অদৃশ্যে হোক। কবিতার বিবর্তনের ইতিহাসে অগ্রজ অনেক কবির অবদান অস্বীকার করার কোনো যুক্তি নেই। কবিতার ভালো হলে কবিও মূল্যায়িত হয়। ভাল কবিতা কবিতার পুষ্টি গুণে ভাল হয়। এই গুণের জন্য কবির অধ্যাবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলা হাজার বছর আগের যে ভাষায় কথা বলি, গান গাই, প্রিয় মানুষকে আদরের সম্ভাষণ জানাই বা আবেগের স্নিগ্ধ ও কোমল প্রকাশ ঘটাই, দুঃখবোধ জানাই। আমরা বাংলাদেশি আর এদেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষের মুখের ভাষা, মাযের ভাষা, প্রাণের ভাষা, মমতার ভাষা- বাংলা। যুগে যুগে সিদ্ধাচার্য, চন্ডীদাস, মাইকেল, আলাওল, বিহারীলাল, লালনশাহ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বুদ্ধদেব, বিষ্ণুদে, সুধীনদত্ত, জীবনানন্দ, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুকান্ত, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ থেকে বর্তমান সময়ে কবিদের কাছে তাদের কবিতার মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করছে। আর প্রাণের ভাষার সাহিত্য পৃথিবীর প্রথম সারিতে ঠাই করেছে। মাতৃভাষার জন্য প্রাণ গেছে কত শত বাংলা জননীর সাহসী সন্তানের। স্বাধীন বলেই প্রাণখুলে মন ভরে কথা বলতে পারার আনন্দ উপভোগ করছি। ইন্দো-আর্য ভাষা, সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত ভাষার মাধ্যমে বাংলা ভাষার উদ্ভব। বাংলার উদ্ভব ঠিক কত সালে, কখন সেটা গণনা করা না গেলেও ধারণা খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাদের শেষ প্রান্তে এসে মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষাগুলোর বিভিন্ন অপভ্রংশ থেকে যে আধুনিক ভারতীয় ভাষা সমূহের উদ্ভব ঘটে, তার মধ্যে বাংলা একটি। কতিপয় ভাষাবিদ অনেক আগে প্রায় ৫০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বাংলার জন্ম বলে একমত পোষণ করে।
বাংলা ভাষার ইতিহাসকে সাধারণত ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। (ক). প্রাচীন বাংলা ৯০০ বা ১০০০ খ্রিস্টাব্দ -১৪০০ খ্রিস্টাব্দ : লিখিত নিদর্শনের মধ্যে চর্যাপদ। (খ). মধ্য বাংলা (১৪০০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ -এ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ লিখিত নিদর্শন চন্ডীদাস রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। (গ). আধুনিক বাংলা ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে- ক্রিয়া ও সর্বনামের সংক্ষেপন। যেমন তাহার - তার; করিয়াছিল- করেছিল। এক পর্তুগীজ মিশনারী পার্দ্রি বাংলা ভাষার প্রথম অভিধান ও ব্যাকরণ রচনা করে ১৭৪২ সালে। ইংরেজ ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হালহেড প্রাচ্যবিদ ১৭৭৮ সালে বাংলার আধুনিক ব্যাকরণ রচনা করে- A Grammar of the Bengal Language। যেটি ছাপাখানার হরফ ব্যবহার করে প্রকাশিত প্রথম বাংলা প্রন্থ। বাঙালীর মধ্যে রাজা রামমোহন রায় ছিলেন প্রথম ব্যাকরণ রচয়িতা। তাঁর গ্রন্থের নাম "Grammar of the Bengali Language"-১৮৩২ সালে প্রকাশ। বাংলাদেশের একমাত্র স্বীকৃত রাষ্ট্র ভাষা হল বাংলা এবং ভারতীয় সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত ২৩টি সরকারী ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম ভাষা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারী ভাষা হচ্ছে বাংলা আর অাসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকার ৩ জেলা কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে স্বীকৃত সরকারী ভাষা হচ্ছে বাংলা। আর সিয়েরা লিওনে সম্মানসূচক রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায় বাংলাভাষা। দক্ষিণ আফ্রিকা ও লাইবেরিয়াতে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অবদানে কিছুটা বাংলাভাষা ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫১-৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত "ভাষা আন্দোলনের" ভিত্তি ছিল বাংলা ভাষা। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাংলা ভাষী হওয়া সত্ত্বেও উর্দুকেই সাংবিধানিক ভাবে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এর প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়। কিন্তু পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও ভাষাগত পার্থক্য ছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষীদের মধ্যে জনরোষ সৃষ্টি হয়। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষী মানুষ এ সিদ্ধান্তকে মেনে না নিয়ে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার ঘোষণায় আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে ওঠে। পুলিশ ১৪৪ ধারা জারী করলে মিটিং-মিছিল ইত্যাদি এবুশে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের জনগনের কাছে গৌরবজ্জ্বল দিন। একুশে ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। আর ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্য দেশ সমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। বাংলা ভাষার সুদিন এখন। ইন্টারনেট থেকে। উইকিপিডিয়াতে বাংলা ভাষার অবস্থান ৪০তম। এখানে বাংলা ভাষার ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, বাংলা বর্ণের উৎপত্তি, বাংলাদেশ বিষয়ক খবর, বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের জীবনীসহ বিশাল তথ্য ভান্ডার বাংলা ভাষাকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেছে। ‘বাংলাপিডিয়া’ এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় বিশ্বকোষ। বাংলাদশের প্রকাশিত বাংলা পত্রিকার অনলাইন সংস্করণও বাংলায় প্রকাশিত হয় বা হচ্ছে। বাংলায় প্রথম ব্লগ সামহোয়্যার ইন ব্লগের পাশাপাশি অনেক ব্লগেই ইচ্ছে মত যে কোনো ব্যক্তি নিজস্ব স্টাইলে ভূবন তৈরি করতে পারে। Project Gutenberg -এর মত তৈরি হচ্ছে অনলাইন বাংলা সাহিত্য আর্কাইভ। বাংলা ভাষা ও ভাষা আন্দোলন বিশ্বের কাছে বাংলা, বাঙ্গালী ও বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি ইতিহাস নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরছে। রক্তঝরা একুশ বাঙ্গালীদের উম্মাদ ও উচছাসের কেন্দ্র বিন্দু। এর সাথে বাংলা হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার অগ্নিবাণে ভগ্ন ও দগ্ধও হচ্ছে। বিদেশী কোনো ভাষার শব্দ গ্রহণ অবশ্যই যেকোনো ভাষাকে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু কোনো ভাষা সংস্কৃতির উপর আঘাত করলে তা থেকে সাবধান থাকা ভাল। তবে ভাল অর্থে ভাল শব্দ গ্রহণে উৎসাহ থাকা সমৃদ্ধির লক্ষণ। ইংরেজী ভাষা প্রতি নিয়ত বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা থেকে নতুন নতুন শব্দ গ্রহণ করে ইংরেজী ভাষাকে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করছে। বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। একুশে বাঙ্গালীর পরিচয় শ্লোগান নিয়ে ৫২’র ভাষা শহীদদের স্মরণে ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমী আয়োজন করছে অমর একুশে বই মেলা। এ মেলা বাঙালীর মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় বাঙ্গালীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ডাকে এক বিস্ময়কর গেরিলা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণায় এ দেশকে স্বাধীন করেছে ১৬ ডিসেম্বরে। কবিরা স্বাধীনভাবে বাংলা শব্দ ব্যবহার করছে কবিতা ও সাহিত্যের যেকোনো শাখায়। এ ভাষা মাধুর্যতা, আবেদন, নিবেদন, মমতা, কোমলতা এত বেশী যা বিশ্বের আর কোনো ভাষায় নেই। বিজ্ঞান পৃথিবীর দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির সাথেই জড়িয়ে আছে। যেহেতু পৃথিবীর প্রাচীন সৃষ্টি বলে একটা ইতিহাস আছে। এই ভাষার শব্দ বা বাক্যের সাথে বিজ্ঞানকে কাব্য বা সাহিত্যে শ্রুতিমধুর ও কোমলতা বা মসৃণতার প্রলেপ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারলে এ দেশের ভাষার পাশাপাশি সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্য আরো সমৃদ্ধ হবে নিঃসন্দেহে। আর সাহিত্যেও সৃষ্টি হবে নতুন যুগের এবং নতুন করে নতুন কিছু নির্মাণ। পোলিশ কবি চেসোয়াভ মিউশ ‘ডেডিকেশন’ কবিতায় বলেছে- What is Poetry Which Does Not Save/ Nations or মিউশ, যদিও পোল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেনি, তবু তিনি নিজেকে পোলিশ কবি বলেই মনে করতেন। কারণ তিনি নেটিভ মাতৃভাষা পোল ভাষাতেই লিখতেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বলেছেন যে, ভাষাই তাঁর স্বদেশ। পোল্যান্ডে তিনি জন্মগ্রহণ করেনি, বসবাসও করেনি বহু বছর। তিনি জন্মগ্রহণ করে লিথুয়ানিয়ায়, ১৯১১ সালে কৃষক পিতামহের ছোটো তালুকে। মিউশ এই গরিব লিথুয়ানিয়াকে আখ্যায়িত করেছেন ‘কবিতা এবং পুরাণের দেশ’ বলে। নেটিভ রেল্ম গ্রন্থে তিনি আরো বলেছেন, যখন ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় রাজ্যের পতন আর উত্থান হচ্ছিল আকছার, সে-সময়ে লিথুয়ানিয়া ছিল কুমারী অরণ্যে ছাওয়া এক অঞ্চল যেখানে উপকূলে মাঝে মধ্যে ভাইকিংদের জাহাজ ভেড়ানো ছাড়া আর কিছুই ঘটত না। তিনি বলেছেন, ‘মানচিত্রের জ্ঞানসীমানার বাইরে এটা ছিল বাস্তব অপেক্ষা অধিক পৌরাণিক।’ আর বাঙ্গালী কবি আবদুল হাকিম বলেছেন-‘যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’। মাতৃভাষার চেয়ে শ্রুতি মধুর আর কিছু নেই। কিন্তু এ ভাষাকে সমৃদ্ধ ও অন্য ভাষার আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা উভয় দায়িত্বই রয়েছে সংশ্লিষ্ট ভাষা ভাষীদের। তাই যথাযথ ভাবে ভক্তি, শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় এ ভাষার মর্যাদা রক্ষা করে সবচেয়ে সুন্দরতম শব্দের যথাযথ বিন্যাসে বিজ্ঞানের সমন্বয়ে কবিতা হবে বিজ্ঞান আশ্রিত।
কবিতা কেবল অর্থ বোঝার জন্য পাঠক পড়ে না। অনেক পাঠক ভালো লাগার জন্যও কবিতা পড়ে। কবিতার সুর ও ছন্দ যেমন পাঠক-শ্রোতার মন ও কানকে আমোদিত করে, আর এর চিত্রকল্প পাঠকের দৃষ্টির সাথে মনকেও বিমোহিত করে। উল্লেখ্য হচ্ছে কবিতার রসমাধুরী ও আবেগ মানুষের প্রাণকে আলোড়িত, বিলোড়িত, উচ্চকিত ও উজ্জীবিত করে। কবিতা দুর্বোধ্য হলে পাঠকের নজর কম থাকে। দুর্বোধ্য কবিতার পাঠক কম হলেও সত্য হচ্ছে অনেক কবিতা আছে যেগুলো আপাতদৃষ্টিতে দুর্বোধ্য মনে হয়। কিন্তু একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লে দুর্বোধ্যতাকে হৃদয়ঙ্গম করা যায়। কবিতার পাঠোদ্ধারের ব্যাপারটি সব পাঠকের বেলায় একই রকম আয়াস সাধ্য নয়। আর কিছু কবিতা আছে দুরূহ, যেগুলোর ভেতরের অর্ন্তনিহিত ভাবের জন্য গোয়েন্দাগিরি করেও লাভ নেই। স্বভাবতই এসব কবিতা পাঠকপ্রিয়তা পায় না। কবিতা কেবল পড়ার জন্য নয়। বোধ্য বা দুর্বোধ্য যা হোক, কবিতার শরীরে যে দৃষ্টিনন্দন আভরণ থাকে তা পাঠক দৃষ্টিকে নন্দিত করে। কোনো কোনো উপমা বা চিত্রকল্প পাঠকের ভালো লাগতে পারে। এ জন্য কিছু অসংলগ্ন বোধের কবিতাও পরিবেশনের কারণে দৃষ্টিনন্দন হতে পারে। সেখানে চোখের ভালো লাগাই সব নয়। আর একটি বিষয় হলো ছন্দ। কোনো পদ্য দুর্বোধ্য বা খাপছাড়া ভাব নিয়ে গড়ে উঠলেও; এতে ভালো ছন্দ থাকলে তা পাঠককে দোল দিয়ে যায়, মন ছুঁয়ে যায়, আমোদিত করে। কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখ হচ্ছে সার্বিক রসাস্বাদনের ব্যাপারটি। কবিতাটি হৃদয়ঙ্গম না করতে পারলে তা পাঠককে চূড়ান্তভাবে প্রণোদিত করবে না, তার চিত্তকে উজ্জীবিত করবে না। এ জন্যই সহজ-সরল কবিতারই পাঠক বেশী। আবার কবির মন যদি পাঠকের হৃদয়ের চাহিদা ও অভিব্যক্তির সাথে মিশে যেতে না পারে, যদি তার অপরিচিত অনুষঙ্গ নিয়ে কবিতার দেহ গঠিত হয়। কিংবা জনসম্পর্কহীনভাবে অহংতাড়িত হয়; সে ক্ষেত্রে কবিতা সহজবোধ্য, অলঙ্কৃত ও ছন্দোবদ্ধ হলেও অনেকাংশে পাঠক নন্দিত হয় না।
বিজ্ঞানের নানবিধ আবিস্কার কবির চিন্তা চেতনাকে বহুবিধ বিষয়ে ধাবিত করছে। কবি তার চেতনা শক্তিতে আগামী পৃথিবীর ছবিটা দেখতে পান। বিজ্ঞান কবিতায় উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অলংকার ও বক্রোক্তি ইত্যাদি ভাবে ব্যবহার হচ্ছে। যেখানে কবিতার নান্দনিক আদলের উপর একটা নতুন প্রলেপ। যা সকলের দেখার চেয়ে, বুঝার চেয়ে এবং জানার চেয়ে আধুনিক। ভারতের কান্তিলাল পান্ডে ৩ ভাগ করেছেন শিল্পকলার- বস্তু ব্রহ্মবাদ, রস ব্রহ্মবাদ, নাদ ব্রহ্মবাদ। বস্তু ব্রহ্মবাদ-বলতে চিত্রকলা। রস ব্রহ্মবাদ-স্থাপত্য ও নৃত্যকলা, সাহিত্য, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি। সঙ্গীতকে নাদ ব্রহ্মবাদ বলা হয়েছে। আর নন্দনতত্ত্ব হচ্ছে সৌন্দর্য্য চেতনা। সৌন্দর্য্যের সাথে জড়িয়ে আছে দৈনন্দিন জীবনযাপনের আচরণ, ক্রীড়া ও বিজ্ঞান। সৌন্দর্য উপযোগীতা বা উপকারিতাহীন নয়। এজন্য নান্দনিকতার ব্যাখ্যায় মানুষের জীবনের সাথে যেভাবে বিজ্ঞান জড়িয়ে আছে কবিতাতেও সেভাবে জড়িয়ে আছে। নকশা বা চিত্রের বহু আগেই প্রযুক্তিগত নন্দন তত্ত্বের বা সৌন্দর্য তত্ত্বের জন্ম হয়েছে। ২০ শতকের দিকে প্রযুক্তিতে নন্দনতত্ত্ব ও সৌন্দর্য তত্ত্বের ধারণার বিস্তার ঘটে। ১৯৪৭ সালে ম্যানচেস্টারের সমাজ বিজ্ঞানী ও শিল্পতাত্ত্বিক জন রাস্কিন নান্দনিক বিষয়ের ফলাফল উৎপাদিত বস্তুর ক্ষেত্রে কি প্রভাব ফেলে বর্ণনায় করেছে। তার সে ব্যাখ্যা উইলিয়ামস মরিস সমর্থন করেন। প্রকৌশলী ফ্রাঞ্চ রেউলোর দৃঢ়ভাবে শিল্প ও প্রকৌশলের মধ্যে বিভাজনের বিরোধিতা করেছেন। এই মতবাদকে সমর্থন দিয়েছে ২০ শতকে স্থপতি হেনরি ভানদে ভেলদে ফ্রাঞ্চ রেউলোর মতামতাকে। তিনি কোন কোন বস্তু প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যকে ‘শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যের’ সাথে যুক্ত করে ব্যবহারিক, যুক্তিগ্রাহ্য সুন্দর শিল্পতাত্তিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে শৈল্পিক উপাদান প্রবর্তনের মত দেন। তাহলে কবিতা যদি রস ব্রহ্মবাদ-স্থাপত্য ও নৃত্যকলা, সাহিত্য, কবিতা, প্রবন্ধ হয় তাহলে বিজ্ঞান ও কবিতা এক অবিচ্ছেদ্য বিষয়। স্থাপত্য হলো গাছ হলে শিল্প হলো ফুল। উভয়ে উভয়ের পরিপূরক। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-‘ভাব পেতে চায় রূপের মাঝারে অঙ্গ/ রূপ পেতে চায় ভাবের মাঝারে ছাড়া।’ চিত্রকলা স্টুডিও-তে, মনের ক্যানভাসে আর বিজ্ঞান ল্যাবরেটরিতে তৈরী হয়। শিল্প পুরোপুরি কল্পনা প্রসূত। আইনস্টাইন বলেছেন- কল্পনা বিশ্বব্রহ্মান্ডে ঘুরে বেড়ায়, জ্ঞানের পরিধি সীমিত। বিজ্ঞানী তার কল্পনা আংশিক রূপদান করতে পারে। কিন্তু একজন শিল্পী তার কল্পনাকে সম্পূর্ণ উপস্থাপন করতে পারে। কবিরা কবিতা শিল্পী। তার কল্পনার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। আর কবিতার সাথে বিজ্ঞান সম্পর্ক মানুষের যাপিত জীবনের নিরিখে অবিচ্ছেদ্য। অর্থাৎ উভয়ে উভয়ের পরিপূরক। জীবন থাকলে আরাম আয়েশ থাকতে হবে। মানুষ ভোগ বিলাসী। আর তাই বিজ্ঞান পরিপূরক হচ্ছে ব্যবহারিক মূল্যায়নে। কল্পনা মানুষকে কতদূর নিয়ে যায় মানুষ নিজেও জানে না। ইউরোপের সূচনা লগ্নে পিকাসো তার চিত্রকলায় আইস্টাইনের থিউরি আব রিলেটিভিটির ব্যবহার করে কিউবিক পদ্ধতিতে একজন আর্ট ডিলারের প্রতিকৃতি আঁকেন। পরবর্তীতে ডাচ শিল্পী জোহেনেস ভারমিব ‘The Astroriomer’ ১৭ শতকে নতুন কাঠামো চিত্রিত করে ‘ তৈলচিত্রের মাধ্যমে মাইক্রোস্কোপ ও টেলিস্কোপ’ আঁকেন। যা পরবর্তী সময়ে বিশাল সৌরজগত সম্পর্কে জ্যোর্তিবিজ্ঞানের দরজা আরো উন্মুক্ত হয়ে যায়। আবার শিল্পী জোহেনেস ভারমিব -এর এই ছবি দেয়ালে টানানো হলে সম্মুখে কিছু বস্তু সাজিয়ে সৌরজগতের আবহ সৃষ্টি করা হলে বর্তমানে প্লোনোউরিয়ামের ধারণা জন্ম দেয়। একটি ভালো কবিতা আরো একটি ভাল কবিতার জন্ম দেয়। কবিতার বিবর্তন ডারউইনকে সত্য প্রমাণিত করে।
সংস্কৃতে কবিকে সত্যদৃষ্ট ও ক্রান্তিদর্শী বলা হয়েছে। কবি সত্যই প্রকাশ করবেন কবিতায়। সব রসাত্মক বাক্যই কাব্য। কেউ বলে বস্তু প্রধান ও অলংকার প্রধান কাব্য কাব্য নয়। সংস্কেতে বলা হয়েছে কাব্যং বাক্যংমলমকৃতম অর্থাৎ অলংকারকে কাব্যের উদ্দেশ্য ভাবা হয়েছে। একসময় কবিতা থেকে অলংকার মুক্তির আন্দোলনও হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ কবিতায় রস ও রূপকে মূল্যায়ন করেছেন। আবার অনুপ্রাস ও সমাসবদ্ধতার কারিশমা তার কবিতার উজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করেছে। সংস্কেতে বলা হয়েছে কাব্যং বাক্যং রসাত্মকম অর্থাৎ কাব্যকে রসাত্মক বাক্য হতে হবে। মহৎ কবির চিন্তা চেতনা মহৎই হয়। মধ্যযুগে কবিতাকে বিষ্ণুর অংশ চর্তুবর্গফল প্রাপ্তির উপায় হিসাবে গন্য করা হতো। প্রত্যেকটি ভাষার ছন্দ আলাদা। ভৌগলিক রেখা অনুযায়ী ঋতুবৈচিত্র ও মানুষের জীবন যাপন পৃথক। কবিতার অক্ষর বা বর্ণ স্থির শব্দ স্থির হলেও কবির হাতে তৈরী হয় নতুন শব্দ। কবি তার ইচ্ছেমত শব্দ ব্যবহার করে ইতিহাস ঐতিহ্যকে নতুন রূপ দিবেন। যা অন্যের চেয়ে পৃথক। কিন্তু অগ্রজ পথ মনে রেখে নতুন পথের সন্ধান থাকতে হবে কবিতায়। যে আবিস্কার করে গেছে একজন সে পথের মধ্যে কার্পেটিং ব্যতীত নিজের কারিশমার বর্হিপ্রকাশ ঘটানো সম্ভব নয়। নিজেকে স্বতন্ত্র ভাবতে হলে অবশ্যই নতুন এক মত পথের সন্ধান করতে হবে। পৃথিবীতে সৃষ্ট প্রাকৃতিক সব বিষয়ে প্রাকৃতিক ছন্দ বিরাজমান। কবিকে খেয়াল করতে হবে প্রাকৃতিক ছন্দের সাথে কবির নিজের মনের অদৃশ্য ছন্দকে যথাযথ ভাবে খাপ খাইয়ে ব্যবহার করলে কবিতা পাঠকের মনকে ছুঁয়ে যাবে নদীর ঢেউয়ের মত তীরের মাটির গা ছুঁয়ে। নদীর চলার ছন্দ আছে, ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানো মৌমাছিরও ছন্দ আছে। বাতাসেরও আছে ছন্দ। প্রজাপতির ছন্দ আছে। পশু -পাখিদের জীবনেও ছন্দ আছে। মরু ভূমির উটের চলায় ছন্দ আছে, আমাজানের জঙ্গলে সাপের চলায়ও ছন্দ আছে। আফ্রিকার মানুষেরও ছন্দ আছে। সমুদ্রেরও ছন্দ আছে। মরুভূমির উটের চলা আর বাংলাদেশের নদীর নৌকার ছন্দ এক নয়। আর মানুষের জীবন যাপন সেতো ছন্দ ছাড়া চলতেই পারবে না। তবুও প্রত্যেক দেশ কাল পাত্র ভেদে, পরিবেশ ভেদে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি ভেদে ছন্দ ভিন্নরূপ কবিতারও তাই। বেঁচে থাকা জীবন নিয়ে তুমুল হুটোপুটি মহানন্দে লুকোচুরি লুকোচুরি করা, অভিযান মুখর করে তোলা, আনন্দে কোলাহল মুখর হওয়া, চঞ্চল হওয়া, বেদনার কালিক ঝড়ে চুপসানো পাখির বুকে অঙ্কুরিত আশার আলো জাগার শুভঙ্কর প্রেরণা, নির্মম নিস্পেষিত লাঞ্ছনায় তীব্রতর বিদ্রোহ করার দাহ্য আর অতিশয় আবেগে সুক্ষè গোপন কুঠুরীর প্রিয় মানুষের কবোষ্ণ নৈকট্যের আশ্রয় কানাৎ হলো কবিতা তান্ত্রিক অভিচারক্রিয়ায় একটা প্রক্রিয়া আছে যা সমস্ত কু-থেকে যোগী বা তান্ত্রিকের শরীরকে রক্ষা করে তাকে আভিচারিক ভাষায় গা-বন্ধ বা বশ করা বলে কবিতা এমনই বশ করার বা শরীর বন্ধের মাদুলী। কবিতার সঙ্গে যার জীবন যাপন বা যোগমিলন তার আত্মার মধ্যে এক বিশাল অন্তঃসলিলা শক্তি বিরাজ করে। এ সুপ্ত শক্তিই কবির জীবনের ওম। কবিতো কবিতার শরীর নিসৃত সেই অমোঘ আরতির ওমে লালিত পালিত। কবির ভাবনা মন্ডল কবিতাময়, যোগনাদ মুখরা হয়ে ওঠে। সৃজন কাতরতায় কবিকে সৃষ্টির দিকে যাত্রার বাঁশির সংকেত দেয়। কবির অনির্দেশ যাত্রার সঙ্গী কবিতা নামের অলৌকিক সঙ্গীর সুখ। যে কবির সঙ্গে হরপল লীলামুখরা। কবি পায় কবিতায় অবগাহনসুখ। বিজ্ঞান কবিতার গাড়ী চলছে বিশ্বময়।
কবিতারও প্রাণ আছে। আমরা দেখি উদ্ভিদ যেমন কথা বলতে পারে না, চলতে পারে না। কিন্তু উদ্ভিদ বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু প্রমাণ করেছেন উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে। তেমনি কবিতা পড়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া হলে অর্থাৎ মানুষ যদি হাসে-কাঁদে, আনন্দ -বেদনা প্রকাশ করে, উচ্চসিত হয় তবে কবিতারও প্রাণ আছে। তাই কবিতাকে প্রাণময় করে তুলতে অবশ্যই বিচ্ছিন্নতা প্রয়োজন। অর্থাৎ কবির নিজস্ব একটা বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার। যা তার কবিতাকে অন্যদের কবিতা থেকে আলাদা করে পাঠকের কাছে পরিচিত করবে। এজন্য অপরিচিত বা বিজ্ঞান ভিত্তিক শব্দ ব্যবহার কিছুটা নতুনত্ব তৈরী করতে পারে বিধায় কবিতায় ব্যবহৃত শব্দ সংশ্লিষ্ট পাঠকের অপরিচিত হলে দুর্বোধ্য লাগবেই। আবার পাঠক নিজস্ব অলসতায় জানার আগ্রহকে মূল্যায়ন না করলে সে পাঠকের কাছে সব কিছুই দুর্বোধ্য মনে হবে। মানুষের চারপাশ জুড়ে বিজ্ঞান যেভাবে দিনে দিনে নিজস্ব সাম্রাজ্য গড়ে তুলছে সেদিক থেকে বিবেচনা করলে বিজ্ঞানকে সর্বত্রই জীবনের সাথে সমান্তরাল করার কোনো বিকল্প নেই। তাই বিজ্ঞানকে বহুল ব্যবহারের মাধ্যমে লিখিত ও ব্যবহারিক উভয়ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারলে মানুষের জীবন ও জীবিকার যে বিশাল ব্যবদান রয়েছেন তা কমে আসবে। আর এতে করে মানুষ সচেতন হবে। জনসংখ্যা জনশক্তি হিসাবে বেরিয়ে আসবে। তবেই বিশ্ব আরো উন্নত বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাবে। দুর্বোধ্যতা সাহিত্যে বিশেষ করে কবিতায় নতুন গতি সঞ্চার করেছে। সাহিত্য সষ্ট্রাকে নিত্য নতুন ভাবনায় নিমর্জ্জিত করছে। কবিতায় দুর্বোধ্যতা আরো ব্যাপক ভাবে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। প্রতি নিয়তই নিত্য নতুন শব্দের ঝংকারে বেজে ওঠছে কবিতা। বরং কবিতা বর্তমানে মানুষ শোনার চেয়ে মনে গেঁথে নেয়। পাঠক চায় সুগঠিত পাঞ্চ লাইন। যেখানে চিন্তার খোরাক যোগায়, রস্বাদন করে। কবিতা দেবপূজা, বন্দনাগীত সহ বিভিন্ন সময়ের মুদ্রা ছাপ হতে বেরিয়ে এসে যুগের বিবর্তনে যুগের প্রতিনিধিত্ব করছে। কবি মানুষের সৃষ্টি নয়। কবি স্বয়ং নিজেকে আবিস্কার করেন। তাই কবির খেয়াল বিচিত্র রকমের লেখায়ও সে ছাপ অঙ্কিত হয়। কবি হচ্ছে দেখা আর না দেখা জগতের সমন্বয়ে উপস্রষ্টা। বিজ্ঞানের সব কিছু ব্যবহার করে জীবনের আয়েশের জন্য কিন্তু বলবে বিজ্ঞান কবিতা কি? সারারাত রামায়ণের শ্লোক শুনে বেয়াকুপ যে প্রশ্ন করে-সীতা কার বাপ ?
কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক