কবিতা কি বিজ্ঞান? সে কথা আপাতত: পুরনো প্রশ্ন। ইতোমধ্যে বিজ্ঞান কবিতার রূপরেখা ও বিজ্ঞান কবিতার ভাবনা এই দুটি গবেষণা গ্রন্থের মাধ্যমে ধারণা পাওয়া গেছে বিজ্ঞান কবিতার। কবিতাই বিজ্ঞান। কবিতা এক নিখুঁত শিল্প। কবিতা যদি নিখুঁত শিল্প হয় তাহলে শিল্প কি কবিতা বা কবিতা কি শিল্প ? নাকি কবিতায় শিল্প একটি বিশেষ দিক। বিজ্ঞান-কবিতা ও শিল্প এখানে নন্দনতত্ত্ব কিভাবে আছে। বিজ্ঞান ও শিল্প বা কলার মধ্যে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক হচ্ছে বিজ্ঞান ও কলা বা নান্দনিক অনুভূতির অনুবদ্ধ বা পরম্পরা বা বিভিন্ন ব্যক্তিনির্ভর কলা বা নান্দনিক ধারণার অনুভূতি। কবিতায় শিল্প বা সৌন্দর্য শুধু অনুভব করার ব্যাপার, যার যার চোখে বা মনে যেমন দেখায় তেমন করে। এখানে বোঝার বা ব্যাখ্যা করার কোন ব্যাপার নেই। কবিতাও বিবর্তনশীল। মানুষ বিবর্তনশীল, মানুষের মন ও দেখার চোখ, চাওয়া পাওয়া, অনুভূতিও বিবর্তনশীল। বিবর্তন সূত্রের ধারায় বর্তমান কবিতা বিজ্ঞানকে ধারণ করে পরিবর্তিত হয়েছে। বিজ্ঞানে শিল্প বা কলার হয়ত সাবর্জনীন কোন সংজ্ঞা নেই। বিবর্তন বিজ্ঞানের আলোকে শিল্প বা শৈল্পিক অনুভূতিকে ব্যাখ্যা করা বা বোঝা যায় না। যার অস্তিত্ব সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত বা অনুভূত, তার কোন সংজ্ঞার প্রয়োজন নেই। শিল্প ও সৌন্দর্য এমনই এক সার্বজনীন ধারণা। এ ধারণার অস্তিত্বে বিবর্তনিক মনোবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় বিবর্তনের আলোকে মানুষের মনের সার্বজনীন শৈল্পিক ও নান্দনিক চেতনা উদ্ভবের কারণ খোঁজা। মানুষ নয় বরং এ মনোবিজ্ঞান কবির মনের শিল্প বা নান্দনিক চেতনার উৎস খুঁজলে কবিতা উৎপাদনের উপকরণ উপলব্ধ হবে। কবির মনই কবিতার প্রথম সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। কবিতা সেই চেতনার বর্হিপ্রকাশ।
রবীন্দ্রনাথ তার ‘কাব্যের অবস্থা-পরিবর্ত্তন’ প্রবন্ধে বলেছেন- এখনকার উপযোগী মহাকাব্য একজনে লিখিতে পারে না, একজনে লিখেও না। এখন শ্রমবিভাগের কাল। সভ্যতার প্রধান ভিত্তিভূমি শ্রমবিভাগ। কবিতাতেও শ্রমবিভাগ আরম্ভ হইয়াছে। শ্রমবিভাগের আবশ্যক হইয়াছে। পূর্বে একজন পন্ডিত না জানিতেন এমন বিষয় ছিল না। লোকেরা যে বিষয়েই প্রশ্ন উত্থাপন করিত, তাঁহাকে সেই বিষয়েই উত্তর দিতে হইত, নহিলে আর তিনি পন্ডিত কিসের? এক এ্যরিষ্টটল দর্শনও লিখিয়াছেন, রাজ্যনীতিও লিখিয়াছেন, আবার ডাক্তারিও লিখিয়াছেন। তখনকার সমস্ত বিদ্যাগুলি হ-য-ব-র-ল হইয়া একত্রে ঘেঁষাঘেঁষি করিয়া থাকিত। বিদ্যাগুলি একান্নবর্ত্তী পরিবারে বাস করিত, এক-একটা করিয়া পন্ডিত তাহাদের কর্ত্তা। পরস্পরের মধ্যে চরিত্রের সহস্য প্রভেদ থাক্, এক অন্ন খাইয়া তাহারা সকলে পুষ্ট। এখন ছাড়াছাড়ি হইয়াছে, সকলেরই নিজের নিজের পরিবার হইয়াছে; একত্রে থাকিবার স্থান নাই; একত্রে থাকিলে সুবিধা হয় না ও বিভিন্ন চরিত্রের ব্যক্তি-সকল একত্রে থাকিলে পরস্পরের হানি হয়। কেহ যেন ইহাদের মধ্যে একটা মাত্র পরিবারকে দেখিয়া বিদ্যার বংশ কমিয়াছে বলিয়া না মনে করেন। বিদ্যার বংশ অত্যন্ত বাড়িয়াছে, একটা মাথায় তাহাদের বাসস্থান কুলাইয়া উঠে না। আগে যাহারা ছোট ছিল এখন তাহারা বড় হইয়াছে। আগে যাহারা একা ছিল এখন তাহাদের সন্তানাদি হইয়াছে”।
রবীন্দ্রনাথের এই উক্তির বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে বর্তমান সময়ের কবিতায়। বর্তমানে কবিতার শ্রেণী বিভাজন হয়েছে। কবিতা এখন নানামুখী বিষয়ে বিবিধ উপকরণে সজ্জিত। অনেক কবি/ সাহিত্যিকদের ধারণা বিজ্ঞান ও কলা বা সাহিত্য পরস্পর বিরোধী। এখানে বিজ্ঞানে ব্যাপক অর্থে গণিত ও যুক্তি শাস্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ইংরেজ কবি কীট্স্ নিউটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে আলোকের সূত্রের দ্বারা রংধনুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি রংধনুর সৌন্দর্যকেই ক্ষুন্ন করেছেন। অথচ কীট্স্ই আবার অন্য এক প্রসঙ্গে বলেছেন সত্যই সৌন্দর্য্য। সত্য যদি সৌন্দর্য্য বা সুন্দর হয়, তাহলে রংধনুর মত সুন্দরকে যে গবেষক বর্ণনা করেছেন তার মন কতটা সত্য, সুন্দর আর রোমান্টিক! তা সহজেই অনুমেয়। অন্যান্য কিছু পাশ্চাত্য কবিও বিজ্ঞানের প্রতি তীর্যক মন্তব্য করেছিলেন যেমন ইউজিন কামিংস, এমিলি ডিকিনসন ও ওয়াড্সওয়ার্থ প্রমুখ। এমিলি ডিকিনসন যাঁর লেখা একটি লাইন হলো- “নিভৃত কোন এক প্রান্তরের ওপর রঙ্গীন আলোরছটা, যা বিজ্ঞান কখনই ছুঁতে পারবেনা, শুধু মানুষের প্রকৃতিই অনুভব করে...”। এমিলি ডিকিসনের কথাটা বিরোধী হলেও তিনি নিজের অজান্তেই এখানে আলোর কথা বলেছেন। আলো তো বিজ্ঞানের এক বিস্ময়। অনেক রকম ব্যাখ্যা রয়েছে আলোর। আর কবিতায় আলোর উপস্থিতি সর্বাগ্রে। কবিতা মানব জীবনের সমস্ত অন্ধকারকে তাড়িয়ে আলোর পথ প্রদর্শকের কাজ করে। এমিলির ধারণায় ইন্ধন যোগান বিজ্ঞান বিমুখী ফরাসী দার্শনিক রুশো। বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর রীতিমত অশ্রদ্ধাই ছিল। বিজ্ঞান ও শিল্প বা সাহিত্যের এই ঐতিহাসিক বিরোধের ওপর The Two Cultures and the Scientific Revolution (দুই সংস্কৃতি ও বৈজ্ঞানিক বিপ্লব) নামে বিখ্যাত বই লিখেছিলেন C. P. Snow| দুই সংস্কৃতি বলতে তিনি বিজ্ঞান ও শিল্প বা সাহিত্যকেই বুঝিয়েছেন। এই বইতে তিনি কবি ও সাহিত্যিকদের মধ্যে বিজ্ঞান এর প্রতি সাধারণ এক অবজ্ঞাসূচক মনোভাব ও বৈজ্ঞানিকদের বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকার না করার প্রবণতার প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ক্রিস্টফার সাইক্স্ (Christofer Sykes) এর লেখা No Ordinary Genius নামক বইতে; বিজ্ঞানী ফাইনম্যানকে তাঁর এক শিল্পী বন্ধু হাতে একটা ফুল ধরে তাঁর দিকে তাক করে বলেন, “একজন শিল্পী হিসেবে আমি এই ফুলের সৌন্দর্য হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম, আর তুমি এটাকে ভেঙ্গে চুরে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এর সৌন্দর্যকেই বিলীন করে দাও”। এর উত্তরে ফাইনম্যান বলেছেন একজন শিল্পী ফুলে যে সৌন্দর্য দেখতে পান, তিনিও সেই একই সৌন্দর্য দেখতে পান, কিন্তু উপরন্তু তিনি ফুলের ভেতরকার সৌন্দর্যকেও দেখতে পান, যেমন কীভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ দ্বারা ফুলের পাপড়ি গঠিত হয়, কীভাবে বৈবর্তনিক উপযোজনের কারণে কীটপতঙ্গকে আকর্ষণ করার জন্য ফুলের সুন্দর রঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে এই সব যা থেকে তাঁর শিল্পী বন্ধু বঞ্চিত।
কবি যতটা স্বাভাবিক বাহ্যিকতায় ততোটা স্বাভাবিক নয় ভেতরে। কবির ভেতরে বসবাস করে ব্ল্যাকহোল। কবি তার দশদিকে যা পায় সবই এই মন নামক ব্ল্যাকহোলে ধারণ করে। এখানে এক অদৃশ্য আলো কবির ভেতরের উপাদানকে বাইরে কবিতা আকারে বের করে দেয়। যেখানে ব্ল্যাকহোল সব কিছু নিজের দিকে টেনে নিয়ে হজম করে ফেলে। সেখানে কবি এর বিপরীত মুখী। কবি বাইরের সবকিছুকে ব্ল্যাকহোলের মতই টেনে নেয়। কিন্তু ব্ল্যাকহোল সব গিলে ফেললেও কবি তা পারে না। কবির ভেতরে যে স্নায়ু উদ্দীপক ক্রিয়া করে সে উদ্দীপক কবিকে অস্থির করে তোলে। আর এ অস্থিরতা থেকেই কবি কবিতা রূপ দিয়ে অস্থিরতার ভাষা প্রকাশ করে। ভাবের জারক রসায়নে রেঁধে কবিতাকে পাঠকের উপজীব্য মনের খাদ্য হিসাবে প্রকাশ করে। সব গ্রহের মহাকর্ষ পৃথিবীর মত নয়। যেসব গ্রহের মহাকর্ষ টান পাগলা টাইপ, তারাই ব্ল্যাকহোল। কিন্তু কোনো ব্যক্তি দেখবে না কেন ব্ল্যাকহোল। কারণ এটির আকর্ষণ এমনই পাগলা টাইপ গ্রহ থেকে আলোকেও বের হতে দেয় না ব্ল্যাকহোল। টেনে ধরে রাখে মাটির কাছে। আর কোন বস্তু থেকে আলো না গেলে দেখা যাবে না। এজন্য দেখাও যায় না। নভোচারী না দেখে সোজা ব্ল্যাকহোলের দিকে অথবা ওটার আশপাশের দিকে এগুতে থাকে। যখনই ওটার টানের মধ্যে পড়ে; টান খেয়ে গ্রহের মাটিতে আছড়ে পড়ে। শেষ পর্যন্তও সে দেখতে পায় না গ্রহটাকে। এজন্যই এই জিনিসের নাম ব্ল্যাকহোল। গ্রহের মত কবির মধ্যেও মহাকর্ষ কম বেশী কাজ করে। সব মহাকর্ষ যেমন পাগলাটে নয়। সব কবিও কবিতায় পাগলাটে নয়। এর ভিন্ন প্রকার রয়েছে। যাদের ভেতর পাগলাটে টান কম আছে তাদের কবিতাও তেমনি দুর্বল। আর যাদের পাগলপনায় কবিতা কবিকে গিলে খায় সে সব কবিতা একদিন জ্বলে উঠে মহাকর্ষ টানের মতই। সব গিলে খেয়ে ফেলে আপাদমস্তক। চারপাশের সব বাধা অতিক্রম করেই পৌঁছে যায় ইস্পিত লক্ষে। কবি তার ভেতরে মহাকর্ষ বলের মতই এক আর্কষণ অনুভব করে। যে কারণে সাধারণ মানুষ কোনো প্রকার তাড়না অনুভব করে না। কিন্তু কবির সামনে একটা গাছের পাতা পড়লেও কবি তা অবলোকন করে। কবি ভাবতে থাকে। কবিকে ভাবনা অনেক দূর নিয়ে যায়। এই ভাবনাই কবিকে অস্থির করে তোলে। এই অস্থিরতা ব্ল্যাকহোল। কবিকে ব্ল্যাকহোল গিলে খেতে পারে না। কবি জিতে যায়। আর কবি যখন কবিতা লেখার তাগিদ অনুভব করে তখন তা মহাকর্ষ বল। আর কবিতা লেখা হয়ে গেলেই কবি মুক্তি পায়। ব্ল্যাকহোল যাদের গ্রাস করে তাদের আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠে না। এমন অনেকেই আছেন কবি কবি ভাব নিয়ে থাকে। কবিতার মাথামুন্ডুও নেই ভেতরে। কিন্তু ভাবে সাবে কবি কবি। আবার কেউ কেউ এই ভাব সাব থেকে এলেবেলে লেখে। সেগুলোকে নানা কৌশলে ছলে বলে কবিতা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এমন কিছু কবি নামদারী বর্তমান কাব্য জগতে বিরাজমান। এদের কেউ কেউ এমন ভাবসাব ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। কেউ কেউ সুনাম কুড়ায়। কেউ কেউ মনের খোরাক জোগায়। কেউ কেউ উদ্দেশ্য হাসিল করে।
বিশ্ব সাহিত্যে বিজ্ঞান কবিতার বিভিন্ন দিক উন্মোচিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে বিজ্ঞান কবিতার ইতোমধ্যে প্রবন্ধের বই হিসাবে কবি হাসনাইন সাজ্জাদীর ‘‘বিজ্ঞান কবিতার রূপ রেখা” এবং কবিতা গ্রন্থ হিসাবে রীনা তালুকদারের ‘‘বিজ্ঞান কবিতা” ও প্রবন্ধের বই ‘বিজ্ঞান কবিতার ভাবনা’ নামে বই প্রকাশ হওয়ায় একটা ধারণা পাওয়া গেছে। কবি নূরুল হুদা লিখেছেন - ‘প্রগতিশীলতা, বিজ্ঞানে ও সাহিত্যে’ প্রবন্ধ। কবি আমিনুল ইসলাম চর্যাপদ পত্রিকার হেমন্ত-১৪২২ সংখ্যায় ‘কবিদের বিজ্ঞান চেতনা’ শিরোনামে প্রবন্ধ লিখেছেন। এছাড়া রীনা তালুকদারের বিজ্ঞান কবিতা অনেক প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। বিশ্ব সাহিত্যে সবচেয়ে বড় উৎস হিসাবে www.poetrysoup.com সাইটটি পাওয়া গেছে। এই সাইটে অনেক বিজ্ঞান কবি ও কবিতার সন্ধান পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায় জাপানী স্টাইলে বিজ্ঞানের সমন্বয়ে হাইকু, সেনরু ও মুক্ত ছন্দের কবিতা লেখা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দেশ ও ভাষার কবিরাও প্রত্যেকের পারিপাশ্বিক পরিস্থিতি তথা জাপানের প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও ফুকুশিমার পারমানবিক চুল্লির বিস্ফোরণ এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার হামলা বা বৈশ্বিক ভাবে অন্যান্য দেশও জাতির স্বাধীনতার সংগ্রাম ও সামাজিক জীবন যাপনের চিত্র উঠে এসেছে। এই সব কবিতা মুক্ত ছন্দে, ধাঁ ধাঁ, দার্শনিক চিন্তা চেতনা, পিরামিড কবিতা, রকেট কবিতা, অন্তমিলে পদ্য, ছড়া, শিশুতোষ, সনেট, লিরিক, লিমেরিক সহ সকল রীতিতেই লেখা। তবে অনেক কবিতা, ছড়া, সনেট বা অন্যান্য বিষয় ভিত্তিক কবিতা ও নির্মেদ রিপোর্টধর্মী কবিতা যেভাবে কবি হাসনাইন সাজ্জাদীর ইতোপূর্বে প্রকাশিত বিজ্ঞান ভিত্তিক কাব্যগ্রন্থ ‘‘সময় বদলে গেছে-২০০৭, ভালবাসার বড় কিছু-২০১১ ও একশ কোটি তেজস্ক্রিয়তা-২০১২” এবং প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘জাপানে বঙ্গবিদ্যা ও বাংলাদেশের বিজ্ঞান কবিতা-২০১৬-তে প্রকাশিত হয়েছে। এসব গ্রন্থে বিজ্ঞান অনেকটা অগ্রসর ছিলো। ছড়াকার জগলুল হায়দারের ‘‘আন্তনেটের ডটকম-২০০৫” প্রকাশিত হয়েছে। কবি সাবিরা সুলতানার ‘‘রোদের দিকে-২০১১” কবি ফরিদুজ্জামানের- বিজ্ঞান ভিত্তিক ও অন্যান্য ছড়া গ্রন্থ ‘চেতনার ঢেউ’-২০১১ সালে প্রকাশিত গ্রন্থেও বেশ কিছু বিজ্ঞান কবিতা আছে। কবি সামসুন্নাহার ফারুকের মনিটরে প্রিয় মুখ-২০১৪ সালে প্রকাশিত বইয়ে বিজ্ঞান কবিতা রয়েছে। ‘মেঘে মেঘে বিজুলির চমক’- শ্যামসুন্দর সিকদার, মজনু বৃদ্ধি বিশদ এর লেখা ‘কবিতায় বিজ্ঞান ও সাহিত্য দর্শন এবং কবিতা’, কবি শিলা চৌধুরীর ‘অদূরে বিপ্লব’ ২০১৫ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থে বিজ্ঞান কবিতা রয়েছে। রীনা তালুকদারের ২০১৪ সালে নারীবাদী কবিতা-১, ঋতুবৈচিত্রের কবিতা-১ ছাড়াও ২০১৫ সালে একক বিজ্ঞান কাব্যগ্রন্থ ‘বিজ্ঞান কবিতা’ প্রকাশের পর চলতি বছর আরো দুটি একক বিজ্ঞান কবিতার বই- প্রেমের বিজ্ঞান কবিতা এবং সাত মার্চ শব্দের ডিনামাইট প্রকাশিত হয়েছে। সে দিক থেকে বাংলায় রচিত মুক্ত ছন্দের কবিতা, পদ্য, ছন্দবদ্ধ কবিতা- ছড়া, শিশুতোষ, সনেট, হাইকু, সেনরু, লিমেরিক, লিরিক, পদ্য ব্যাকরণিক কলা মেনে অলংকার সজ্জিত যথাযথ শব্দ শৈলী রক্ষা করে বিজ্ঞানকে সমন্বয় করে রচিত হয়েছে। আসলে বিজ্ঞান কবিতার সঠিক রীতি কি; দেখা যায় অনেক কবিতাই খুব দুর্বল বা ভুল রীতিতে লেখা এই বিষয়ে www.poetrysoup.com -এই সাইটে মতামত প্রকাশ করে বলেছে- একটি কবিতায় বিজ্ঞানের অনেক Component ব্যবহার করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে বাংলা কবিতা বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-প্রকৃতি, ঋতুবৈচিত্রের রূপ, বাংলা ভাষায় বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক আঞ্চলিক ভাষার বহুল ব্যবহার, ভাষা ও আঞ্চলিক সংস্কৃতি, লোক ঐতিহ্য, জলবায়ু, অষ্টিক জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন রকম শরীর ও মুখের রং বা চেহারার আকৃতি, আচরণগত পার্থক্য সেই সাথে বাংলা ভাষার শব্দের আবেদন চতুরমুখী হওয়ায় কবিতায় আবেদন ও মোহমায়া বা আবেগ বেশী। পাঠককে আচ্ছন্ন করতে সক্ষম। তবে সঠিক অনুবাদ না হওয়ায় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলা কবিতার পরিচিতি পর্যাপ্ত নয়। বেশীর ভাগ ভাবানুবাদ হওয়ায় কবির মূল বক্তব্য বদলে যায়। ফলে কবিতার যে মূল উপজীব্য বিষয় সেটি অনেকটা ফুটে ওঠে না। তাছাড়া মনে হচ্ছে বাংলা অনেক শব্দই ইংরেজী শব্দের সাথে সমন্বয় না হওয়ায় সরাসরি অনুবাদ কম হচ্ছে। অথবা কবিতা অনুবাদে আগ্রহ কম এমন হতে পারে। বর্হিবিশ্বের ভূ-প্রকৃতি, জীবনযাপন, আচরণ, ভাষা ও সংস্কৃতি দেশভিত্তিক। অনেক দেশের সংস্কৃতি ঐতিহ্য প্রায় মিল থাকায় এবং সমুদ্র, বরফ, আগ্নেয়গিরি, মরু অঞ্চল, ফুল-পাখির পাথর্ক্য আর আকাশ, নদী, বৃষ্টি-বাতাস, পাহাড়, বনভূমি, চাঁদ-তারা সারা বিশ্বেই এক রূপ। এসব তুলনা করলে বাংলা কবিতা বিশ্বে যে কোনো সাহিত্যের কাতারে দাঁড়াবার যথেষ্টই যোগ্য। বাংলা শব্দের অন্তর্মুখী-বর্হিমুখী ও চতুর্মুখী প্রকাশ ভঙ্গির কারণে বিজ্ঞান সমন্বয় খুব সহজ বলা যায় না। কিন্তু যারা কবিতায় ফানাফিল্লাহ অবস্থান তাদের জন্য কঠিন কিছুই নয়। মানুষ যখন দৈনন্দিন জীবনে আরাম আয়েশে বিজ্ঞানকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ব্যবহার করছে। সেখানে কবিতায় ব্যবহারিক বিষয়ে চলতি রূপ মোটেই কঠিন নয় বরং আশাবাদী দিক। বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহার কবিতাকে আরো বেশী প্রানবন্ত ও উচ্ছল করে তোলে।
পূর্বে অগ্রজ কবিদের বিজ্ঞান ব্যবহার ছিলো অসচেতন ভাবে এবং তৎসময়ের আলোকে। বিশেষ করে আশির দশকের আগে লেখা কবিতায় বিজ্ঞান অসচেতন ভাবেও কবিতায় এসেছে। এটা বিজ্ঞান কবিতা হিসাবে লেখা নয়। বরং এখানে কবি তার স্বাভাবিক জীবনে ব্যবহারিক বা চারপাশের পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত উপকরণে কবিতাকে সাজিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ছুরি, কাঁচি, তলোয়ার, সিন্দুক, জাহাজ, চন্দ্র, সূর্য, তারা, নক্ষত্র এই জাতীয় হালকা বিজ্ঞান ব্যবহার হয়েছে। যা বিজ্ঞান কবিতার জোয়ার বলা যায় না। বা কবি সচেতন চেতনা থেকে প্রলুব্ধ হয়ে বিজ্ঞান কবিতা লিখেছেন বলা যায় না। কেননা এসব প্রকৃতিগত ভাবে প্রাপ্ত বিধায় বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয় প্রকৃতি বা স্বাভাবিক চেতনার প্রভাব। সে যুগটাও বিজ্ঞানের অগ্রসর যুগ ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞান কবিতায় বিজ্ঞানের অনেক বেশী উপকরণে সমৃদ্ধ। পূর্বের কবিরা যখন লিখেছেন তখন বিজ্ঞানের আবিস্কার এতটা অগ্রসর হয়নি। যতোটা হয়েছে ততোটাও কবিতায় ব্যবহার হয়নি। এই সময়ে এসে বিজ্ঞানের উল্লেখ যোগ্য অগ্রগতি কবিতাকেও দিয়েছে একটা প্রাঞ্জল আধার। শুধু ব্যবহারের দিকে খেয়াল করেই তা কবিতায় উপস্থাপন করতে হয়।
অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠন আশির দশকের শেষের দিকে অর্থাৎ ১৯৮৮ সাল থেকে বিজ্ঞান কবিতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় কবি শেখ সামসুল হকের চমৎকার সাহস কাব্যগ্রন্থে বিজ্ঞান এসেছে। কবি শেখ সামসুল হক কবিতাকে আধুনিক ধারায় রবীন্দ্র প্রভাব এবং সমুচ্চয়ী অব্যয় পদের ব্যবহার মুক্ত করার জন্য প্রকৃতির চেয়ে মননের চিন্তা চেতনার আশ্রয়ে সংগ্রাম, প্রতিবাদ, বিজ্ঞান আশ্রিত প্রেম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে কবিতার অঙ্গসৌষ্ঠব সমৃদ্ধ করেছেন। তার বর্তমান সময়ের কবিতায় পূর্বের তুলনায় অগ্রসরমান বিজ্ঞানকে ধারণ করে আঙ্গিক পরিবর্তন করছেন। যদিও তার সমসাময়িক অনেকের কবিতাতেই অল্প পরিমাণ হলেও বিজ্ঞানের ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু কবি শেখ সামসুল হকের মত অন্যরা সচেতন বা সাংগঠনিক ভাবে বিজ্ঞানকে কবিতায় সমন্বয় করার আন্দোলনে যুক্ত ছিলো না। সে দিক থেকে কবি শেখ সামসুল হককে বাংলা সাহিত্যে বিজ্ঞান কবিতার পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে চিহ্নিত করা যুক্তিসঙ্গত মনে করি। ১৯৮৮ সালে কবি শেখ সামসুল হক অনুপ্রাসের গবেষণা ও মূল্যায়ণ বিষয়ক সহ-সভাপতি কবি হাসনাইন সাজ্জাদীকে কবিতার বাক্ বদলের জন্য গবেষণা কাজের দায়িত্ব প্রদান করেন। হাসনাইন সাজ্জাদী সে সময় ‘নতুন প্রজন্মের কবিতা’ শীর্ষক গবেষণা পত্র প্রস্তুত করেন। সে সময়ের আলোচনা ও গবেষণায় বিজ্ঞান যুগে বিজ্ঞান কবিতার ধারণাটি ওঠে আসে। আর কবি শেখ সামসুল হক তখন থেকেই বিজ্ঞান কবিতার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে অনুপ্রাণিত করায় কবি হাসনাইন সাজ্জাদী বিজ্ঞান কবিতার চর্চা ও প্রচার শুরু করেন। এই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞান কবিতার রূপ রেখা দিয়ে গবেষণা প্রবন্ধের বই বের করেছেন একুশে বইমেলা-২০১৪ যার দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে। ১৯৮৬ সালে কবি সাজ্জাদী শিশুকিশোর সংগঠন বিকিরণের মুখপত্র হিসাবে বৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারণায় বিচ্ছুরণ পত্রিকা প্রকাশ করেন। কবি হাসনাইন সাজ্জাদীও ১৯৮৮ সাল থেকে অনুপ্রাসের একনিষ্ঠ ও বলিষ্ঠ একজন কাব্যমোদী হিসাবে বিজ্ঞান কবিতার পক্ষে প্রবন্ধ লিখেছেন ১৯৮৯-৯০ সালে মিয়া মুসা হোসেন সম্পাদিত তৎকালীন ‘দৈনিক পত্রিকা’ সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। বিশ্বব্যপী আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন স্টাডিজ বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পবিত্র সরকারের সভাপতিত্বে চর্তুথ ‘আন্তর্জাতিক বঙ্গবিদ্যা সম্মেলনে’ কবি হাসনাইন সাজ্জাদী বিজ্ঞান কবিতার প্রবন্ধ -‘বিজ্ঞান যুগে বিজ্ঞান কবিতা’ র্শীষক গবেষণাপত্র ১২-১৩ ডিসেম্বের, ২০১৫ অনুষ্ঠিত সম্মেলনে উপস্থাপন করেছেন। এই সম্মেলনে অন্যান্য বিষয়ে মোট ১৯৯টি প্রবন্ধ তালিকা থেকে কবি সাজ্জাদীই ব্যতিক্রম হিসাবে বাংলা কাব্য সাহিত্যের বিজ্ঞান কবিতা নিয়ে পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ‘বিজ্ঞান যুগে বিজ্ঞান কবিতা’ প্রবন্ধটি উপস্থাপন করে বিশ্বের কাছে বাংলা কাব্য সাহিত্যের এই নতুন সংযোজনকে তুলে ধরেছেন। কবি সাজ্জাদী তার উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলেছেন- ‘‘মিথ্যা স্বপ্ন দেখানো কবির কাজ নয়। সমূহ বিপদ সম্পর্কে আগাম সতর্কবাণী করে তার জাতিকে বাঁচাবেন কবি। স্বপ্ন দেখিয়ে ঘুম পাড়িয়ে কারো মধ্যে অলসতা তৈরী করে কোন কবি জাতির বিবেক হতে পারেন না। ... বিজ্ঞানের সুফল কূফল নিয়ে জনসচেতনতা তৈরীর বিষয়বস্তু বিজ্ঞান যুগের বিজ্ঞান কবিতার উপপাদ্য বিষয় বলে বিবেচিত হবে। তবেই কবিতায় আমরা যুগ সমস্যার সাধারণ এবং সত্য ভাষণ লাভ করবো। কবিতার নান্দনিকতা ও ভেতর এবং বাইরের সৌন্দর্য খর্ব না করেও প্রাগসর চিন্তা ও ভাবনায় আমরা বিজ্ঞান কবিতা লিখতে চাই।” এক সময় বাংলা সাহিত্যকে জাপানে পরিচিত করেছেন অধ্যাপক কাজুও আজুমা। তবে বঙ্গবিদ্যার পুরোধা ছিলেন শিক্ষানুরাগী ৎসুয়োশি নারা। বঙ্গবিদ্যার বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক মাসাইউকি উসাদা। রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্য জাপানীদের কাছে সুপরিচিত। আর বর্তমান সম্মেলনে কবি হাসনাইন সাজ্জাদীর প্রবন্ধের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের বিজ্ঞান কবিতা জাপানীদের আলোচনা, গবেষণা ও চর্চার বিষয়বস্তু হিসাবে জনপ্রিয় হচ্ছে। বঙ্গবিদ্যা সম্মেলন থেকে জানা যায় জাপানে বর্তমানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করছেন- চীনের পেইজিং বিদেশী বিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ছাত্র- শিক্ষকগণ। (এদের মধ্যে মিনোরি ইয়োশিকাওয়া, মিকাকো ওমাতা, তারিতা সুযুকি, রিসাকো ওদা, কোযুয়ে কাতো, নোদোকা শিনোহারা, ইউকি সো, তাকুইয়া তোদো, ইয়ুকি ইয়ামাগুচি, শিহো ওনোযাওয়া, ইয়ুতো মোরিইয়ামা, নাৎসু ফুজিওয়ারা, শিওরি সাইতো, ইয়ুযুনো নারিসাওয়া, রিন্তারো তাকাসে, সুমিয়ে ইয়ামাদা, কেন তাকামোরি, আইয়ুমি কারিইয়া, চীনের পেইজিং বিদেশী বিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দং ইউছেন প্রমুখ) কবি হাসনাইন সাজ্জাদীর সাথে অনেকের কথোপকথনে উঠে এসেছে বিজ্ঞান কবিতা নিয়ে তাদের আগ্রহের কথা। এরই মধ্যে অনুপ্রাসের ফেসবুক পাতায় চীনের পেইজিং বিদেশী বিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মিনোরি ইয়োশিকাওয়া, মিকাকো ওমাতা, তারিতা সুযুকি, রিসাকো ওদা যুক্ত হয়েছেন। চীনের পেইজিং বিদেশী বিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য ৬ষ্ঠ বঙ্গবিদ্যা সম্মেলনে বিজ্ঞান কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য কবি হাসনাইন সাজ্জাদীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আর এ সম্মেলন বাংলাদেশে হবে আগামী বছর (২০১৭ সালে) ডিসেম্বর মাসে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে অনুপ্রাস কবিদের অনেকেই বিজ্ঞান কবিতার উপর প্রবন্ধ উপস্থাপনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এছাড়া কবি হাসনাইন সাজ্জাদী ২০০৫ সালে (১৩-১৪ আগস্ট) ভারতের মেঘালয় ও আসাম বিজ্ঞান কবিতা নিয়ে প্রচারণা করেন। পরবর্তীতে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিন্টুদাস, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মৃণালকান্তি ও আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক অমিতাভ চক্রবর্তী বিজ্ঞান কবিতা নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কবিতা নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন একজন শিক্ষার্থী। ২০০৭ সালে সিঙ্গাপুরের বুনলে এভিনিউর কফিশপে ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারী বিজ্ঞান কবিতার থিওরী উপস্থাপন করেন। ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর নেপালের মাছি নগর মিউনিসিপ্যাল সেন্টারে কবি ও সাংবাদিক সম্মেলনে বিজ্ঞান কবিতার ধারণা পেশ করেন। ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর থাইল্যান্ডের ১১ নং সুকুম্ভিত সড়কের হোটেল রাজধানীতে বিজ্ঞান কবিতার থিওরী উপস্থাপন করেন। ২০১২ সালের ৭ জুলাই এবং একই বছরে ১২ ডিসেম্বর রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে বিজ্ঞান কবিতার থিওরী প্রকাশ করেন। বর্তমানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ড. সুরঞ্জন মিদ্দে বিজ্ঞান কবিতার সুহৃদ। ২০১৩ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারী ও ১২ মার্চ কলকাতায় পার্ক স্ট্রীটের একটি রেস্তোরায় বিজ্ঞান কবি সৈয়দ হাসমত জালাল ও বিজ্ঞান লেখক ও অনুবাদক শ্যামল চক্রবর্তীর সাথে বিজ্ঞান কবিতার বিষয়ে মতবিনিময়, আলোচনা করেন এবং বর্তমানেও যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে কলকাতায় বিশ্ব বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনে উপস্থাপন করেন বিজ্ঞান কবিতার থিওরী। একই সময়ে ১১ মার্চ কলকাতা প্রেসক্লাবে এ বিষয়ে মতবিনিময় করেন। ২০১৫ সালের ৮ জুলাই ভারতের চেন্নাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বিজ্ঞান কবিতা বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন। ২০১৫ সালের ১১ জুলাই শ্রীলংকার কলম্বোতে সার্ক সাংস্কৃতিক সদর দপ্তরে বিজ্ঞান কবিতার থিওরী প্রচার করেন।
পৃথিবীতে বিজ্ঞানের শুরুর সময়টা মোটেও সুখকর ছিলো না। ঠিক সেভাবেই বিজ্ঞান কবিতার এই আন্দোলনের সৈনিকদেরও অনেক তিরস্কার সয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে হয়েছে। দর্শনশাস্ত্রের ধারণা থেকে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক জগতে আসতে অণুকে প্রায় ১৮৫০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। অস্ট্রিয়ার বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী লুডভিগ বল্জম্যান (১৮৪৪-১৯০৫) তাপবলবিদ্যার (Thermodynamics) যাবতীয় বিষয়ের আণবিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানের নতুন একটি শাখা (Statistical Mechanics) সৃষ্টি করলে বিজ্ঞান জগতে বস্তু বা অণুর ধারণাটি বাস্তব রূপ পায়। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞানের উপকরণ কেবল অভিজ্ঞতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং বুদ্ধিমত্তাও এর অন্তর্ভুক্ত। তবে অভিজ্ঞতা দিয়ে স্যার আইজ্যাক নিউটন আর বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই আলবার্ট আইনস্টাইন প্রমাণ করেছেন- তড়িৎ চৌম্বিকতামূলক তরঙ্গই কেবল নয় আলোকরশ্মি অনেক সময় অণুর মত ব্যবহার করে। পরবর্তীতে আলোকরশ্মির প্রকৃতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫) দেখালেন যে আলোর গতিবিধির কোনও ঠিকঠিকানা নেই একেক সময় একেক রকম ব্যবহার করে। কখনো তরঙ্গ, কখনো কণা। কণার কথা আগেই বলেছেন নিউটন। তিনি তুলনা করেন অনেকটা বিলিয়ার্ড বলের সরলরেখায় চলার মত। কিন্তু আলো যে দুটোই হতে পারে সেটা তখনো তার চিন্তা চেতনায় কাজ করেনি। যদিও সপ্তদশ শতাব্দীর বিজ্ঞান তখনো খুব অগ্রসর হয়নি। আইনস্টাইন এই আলো কণাটির নাম দিলেন- ফোটন (Photon) গবেষণাতে দেখানো হলো আলোকরশ্মি একটা বিশেষ ধাতুনির্মিত পাতের উপর বর্ষিত হতে থাকলে একটা পর্যায়ে সেই পাত থেকে একটি দুটি ইলেক্ট্রন ছিটকে পড়বে। অনেকটা ঢিল ছুড়ে দেয়াল থেকে চূন খসে ফেলার মতই। এই সরল ধারণাটি দ্রুত পরিমার্জিত হয়ে বর্তমান কোয়ান্টাম তত্বে রূপান্তরিত হয়। এ তত্ব এমনই যুগান্তকারী যে আগেকার শত শত বছরের বিজ্ঞানকে প্রায় অস্বীকার করার অবস্থানে নিয়ে যায়। সাধারণ দৈনন্দিন জীবনের জন্যে নতুন তত্বের চেয়ে পুরনো তত্ব, অর্থাৎ গ্যালিলি-নিউটন-ম্যাক্সওয়েল তত্ব সম্পূর্ণই কার্যকর। আইনস্টাইন এই যুগান্তকারী ধারণা থেকেই মানুষের কল্পনাকে আরো এগিয়ে নিয়ে গেলেন। কালে কালে উৎসারিত হয় এক অভিনব বিজ্ঞান যার নাম কোয়ান্টাম তত্ব। কোয়ান্টাম বিজ্ঞান মানুষের বুদ্ধি বা অভিজ্ঞতাকে ছাড়িয়ে একেবারে অণু পরমাণুর জগত নিয়ে সংসার পেতেছে। কোয়ান্টাম তত্বের মুল বিষয় হল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা, যেমন- ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন ও ফোটন। এরা নিউটন-গ্যালিলির নিয়মকানুন একেবারেই মানে না। আর সাধারণ বিজ্ঞানের ক্ষেত্র হল মানুষের পরিচিত পৃথিবী, গ্রহ তারা, পাহাড় পর্বত, আকাশ-সাগর, স্থল ও বস্তুজগত। মূলত মানুষও কণার সমষ্টি। মানুষ অগণিত কণার সমষ্টি যে পরিশেষে কণার কোনও পৃথক অস্তিত্ব থাকে না। তখন কোয়ান্টামের জগত ছেড়ে যেতে হয় নিউটনের জগতে। কিন্তু কণার জগত এক বিশাল ও বিচিত্র। সে জগত শুধু মানুষের দৃষ্টির বাইরেই নয় বুদ্ধিবৃত্তিরও বাইরে। সাধারণ বুদ্ধিমত্তা সেখানে কোনো কাজে লাগে না। আর এই কণা আকারে ক্ষুদ্র হলেও তুচ্ছ নয়, কেননা মানুষ এই তুচ্ছ কণা দিয়ে তৈরি। মানুষের ভেতরকার প্রতিটি কণাই মানুষের নিজের চেয়ে হাজারগুণে বেশি শক্তিশালী। অনেক অনেক কণা একত্র না হওয়া পর্যন্ত পৃথক পৃথক কণারও নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। একটা বস্তুকে ২ খন্ডে ভাগ করে তারপর ৪ খন্ড, তারপর ৮, ১৬, ৩২? এভাবে ভাগ করলে শেষে দেখা যাবে বস্তু একদম নিঃশেষ হতে পারে না। সবশেষে এমন একটা কিছু দাঁড়াবে যা হয়ত চোখেই দেখা যাবে না। একটা পর্যায়ে এসে ঐ বস্তুকে আর ভাগ করা সম্ভব হবে না। এই অবিভাজ্য বা অখন্ডনীয় বস্তুটির নাম এটম অণু। গ্রীক Atomos (যার আক্ষরিক অর্থ অকর্তিত) থেকে এর উৎপত্তি। গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস (খৃ:পূ: ৪৬০-৩৭০) অনুমান করে প্রথম বলেছেন বিশ্বব্রহ্মান্ডের মূল উপাদান হচ্ছে কণা। সুক্ষèাতিসুক্ষè কণা, যা খালি চোখে দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে ডেমোক্রিটাসকে অণুর জনক বলা যায়। যদিও তার এই ধারণা সে যুগে সহজভাবে গ্রহণ করেনি। বিশেষ করে বিজ্ঞানী প্লেটো (খৃ:পূ: ৪২৭-৩৪৭) এটম শব্দটি কেউ উচ্চারণ করলে ঘোর বিরোধিতা করতেন। তিনি পদার্থের আণবিকতা তত্বেও বিরোধী ছিলেন। প্লেটোর মৃত্যুর পর প্রথম প্রকাশ করেন দার্শনিক এপিকিউরাস (খৃ: পূ: ৩৪২-২৭০)। তাকেও কেউ সমর্থন করেনি। এটমের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রবক্তা রোমানীয় লুক্রেটিয়াস (খৃ:পূ: ৯৮-৫৫) যাঁর প্রণীত বইর চাহিদা এখনো অনেক।
কোয়ান্টাম তত্বের অন্য বিস্ময় হচ্ছে অর্বুদ কোটি অণু না হলে একটা জলবিন্দু হয় না, আর একটি জলবিন্দু অণুর পর্যায়ে বিপুল কোনও বিবর্তন না ঘটলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কোনও বিস্ফোরণ ঘটাতে পারবে না। প্রতিটি বস্তুরই এই একই ধর্ম। মানুষের মূল পরিচয় আর অস্তিত্ব নিয়ে ভাবলে বার বার মনে হবে আমি কে? আমিতো কেউ নই? আমি মূলে একটি বিন্দু যার নিজস্ব কোনও অস্তিত্ব নেই। আমি একটা স্রোতের অংশ, একটা প্রবাহ। কোয়ান্টাম তত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে আমি কিছু নই, অথবা সবই। কেউ নই, নয়তো সবাই। আমি একাধারে সৃষ্টি ও স্রষ্টা, নির্মাণ ও ধ্বংস। প্রকৃতির বোধের অতীত দ্বৈততার বিচিত্র লীলাভূমিতে মানুষই বিস্ময়কর বিজ্ঞান। এখানেই মানুষের উৎস, নিজস্ব পরিচয়। মানুষ হাঁটছে, চিরকাল ধরে হাঁটছে, কারণ ওটাই মানুষের প্রকৃতি। পৃথিবীর সবকিছু মানুষকে ঘিরে। আর কবিতা মানুষের জীবন যাপনের গল্প কথার নির্যাস। কবি ও বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লিখেছেন গণিতজ্ঞ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, ড. কুদরত-এ-খুদা, ড. আবদুল্লাহ আল মুতী ও ড. আলী আসগর প্রমুখ। বিশ্বসাহিত্যের জগত বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং -এর মেয়ে ব্রিটিশ সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক লুসি হকিং বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতে সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি ২০০৭ সালে-‘সিক্রেট কি টু দি ইউনিভার্স’, ২০০৯ সালে প্রকাশ করেন- ‘জর্জ’স কসমিক ট্রেজার হান্ট’, ২০১১ সালে ‘জর্জ অ্যান্ড দি বিগ ব্যাং’, ২০১৪ সালে ‘জর্জ এ্যান্ড দি আনব্রেকেবল কোর্ড’ প্রকাশ করেছেন। ওমর খৈয়াম (১০৪৮-১১২৩) প্রাচ্য (পারস্য) মনীষী। তাঁর মনন ও মেধা আপন স্বকীয়তায় প্রোজ্জ্বল। জ্ঞানের যতগুলো শাখায় তিনি ছোঁয়া দিয়েছেন প্রতিটি শাখাকেই করেছেন সমৃদ্ধ। আর জ্ঞান পিপাসুদের করেছেন ঋদ্ধ সমৃদ্ধ। বীজ গণিতের আবিষ্কারক, প্রথম সৌর পঞ্জিকার আবিষ্কারক এ বিজ্ঞানী ছিলেন একজন জ্যোতির্বিদ। তিনিই প্রথম পারস্যে মান মন্দির স্থাপন করেন। তিনি অনেক গ্রহ নক্ষত্র আবিস্কার করেছেন। তিনি কবি ও দার্শনিক হিসাবেও ছিলেন আলোচিত ব্যক্তিত্ব। আলেকজান্ডার পোপ বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার বর্ণনায় কবিতা লিখেছেন। বিংশ শতাব্দীর কবি মিরোশ্লাভ হলুব একজন কবি ও প্রকৌশলী। ভারতের বিজ্ঞানী ড. এ পি জে আবদুল কালাম বিজ্ঞান কবিতা লিখেছেন। বিশ্ব সাহিত্যের নেটভিত্তিক কয়েকটি সাইট ও ফেসবুক আইডি রয়েছে। সাপ্তাহিক শারদীয়া পত্রিকা ২০১২ সাল থেকে কাব্য বিষয়ক বিজ্ঞান প্রবন্ধ এবং বিজ্ঞান কবিতা ছেপে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞান কবিতার এ আন্দোলনকে সহযোগিতা করছে। বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েব সাইট যেমন- www.scientiphilia.com , উন্মুক্ত বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ডট অরগ্, ভিসস চ্যানেলের মাইকেল ভালা পাই ভিডিও, ডিসকোভারি, চ্যানেল- এনিমেল প্লানেট, হিস্টরী অব কালচার, মুক্ত বিশ্বকোষ, উইকিপিডিয়া, এএফপি, বিবিসি, বিজনেস ইনসাইডার, সায়েন্টিফিক আমেরিকান ও ডেইলি সায়েন্স, বিজ্ঞান একাডেমী, বিজ্ঞান সাময়িকী- জিরো টু ইনফিনিটি, বিজ্ঞান বাংলা, গ্যাক্টিকা ম্যাগাজিন এসব মিডিয়ায় বিজ্ঞানের বিস্তর খবরাখবর জানা যায়। বাংলাদেশে কবি হাসনাইন সাজ্জাদীর বিজ্ঞান কবিতার ফেসবুক আইডি - MOVEMENT OF SCIENCE POETRY, The Road Map of Science Poetry, Biggan Kobita Andolon . অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠনের বাংলায় ফেসবুক গ্রুপ-বিজ্ঞান ভিত্তিক নিউজ এবং ইংরেজীতে- Poems of Science- Onuprash National Poetry Organization, Bangladesh এছাড়া অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠন ফেসবুকে বিষয়ভিত্তিক কবিতার পাতা তৈরী করে কবিতা স্টোর করেছে বিশ্বব্যাপী অনুপ্রাসের অগণিত ভক্ত ও পাঠকদের জন্য। এই পাতা গুলোর নাম- প্রেমের কবিতা, রাজনৈতিক কবিতা, গীতি কবিতা, আধ্যাত্মিক কবিতা, পাঁচমিশালী কবিতা, বৈশাখী কবিতা, বর্ষার কবিতা, বসন্তের কবিতা, একুশের কবিতা, স্বাধীনতার কবিতা, বিজয়ের কবিতা, মে দিবসের কবিতা, নারীবাদী কবিতা, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের কবিতা, সনেট পাতা, ছড়া পাতা, অনু কবিতা, লিমেরিক, হাইকু/ সেনরু, মা-কে নিয়ে কবিতা, বাবা -কে নিয়ে কবিতা, নিবেদিত কবিতা, অনুবাদ কবিতা, প্রবন্ধ পাতা কবি/ বিশেষ ব্যক্তিত্ব পরিচিতি ও বিজ্ঞান কবিদের স্ব-নামে পাতা ইত্যাদি। এটিও একটি নতুন দিক্ নির্দেশনা বিজ্ঞান কবিতার আন্দোলনে। বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান কবিতার এই আন্দোলন ব্যাপক ভাবে বিস্তৃতি লাভ করে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে উত্তর আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের নেটভিত্তিক ‘ইভেন্ট হরিজন’ ম্যাগাজিন (Event Horizon Magazine- Science Poetry Competition) পুলিৎজার-২০১৫ পুরস্কারের জন্য চুড়ান্ত তালিকায় মনোনীত কবি এলান স্যাপিরো (Alan Shapiro) -এর বিচারিক নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী ৫০০ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত বিজ্ঞান কবিতা প্রতিযোগিতার আহবান জানিয়েছে। এই আহবানে সাড়া দিয়ে অনুপ্রাসের একঝাঁক বিজ্ঞান কবি প্রতিযোগিতার শর্তানুযায়ী বিজ্ঞানভিত্তিক ৩টি ইংরেজী কবিতা পাঠিয়ে অংশ গ্রহণ করেছে। 2000 কবিতায় প্রতিযোগিতায় জমা পড়েছে সেখানে মায়া ক্যাথারিন পোপা’র ( Maya Catherine Popa) কবিতা বিজয়ী হয়েছে একই ভাবে অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠন সাধারণ কাব্য সাহিত্যে ১টি, বিজ্ঞান কাব্য সাহিত্যে ১টি সহ মোট দুটি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন প্রদানের আহবান জানিয়েছে। বিশ্বব্যাপী পরিচিত সংগঠন ইউনাইটেড রিলিজিয়ন ইনিসিয়েটিভ-এ অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠন- সিসিকে ফেলোশীপ প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সায়েন্স পোয়েট্রি বাংলাদেশ-সিসি-কে ফেলোশীপ প্রদান করেছে। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান কবিতার আন্দোলন। ২০১৩ সাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় পূর্বের তুলনায় নিয়মিত ভাবে অনুপ্রাসের প্রতিমাসের সাহিত্য আড্ডায় বিজ্ঞান কবিতা বিষয়ে আলোচনা, সমালোচনা ও বিজ্ঞান কবিতার নতুন নতুন গ্রন্থ প্রকাশের অনুষ্ঠান চলমান রয়েছে। বর্তমান সময়ে তরুণ কবিদের কবিতায় বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের সর্বত্র আমরা বিজ্ঞান কবিতার এই শ্লোগানকে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। ‘বিজ্ঞান কবিতার ভাবনা’ প্রবন্ধ গ্রন্থটি সরকারী ভাবে সারাদেশের পাবলিক লাইব্রেরী সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছে। বিজ্ঞান কবিতার এ আন্দোলনের সফলতা দেখা যায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যারা সচেতন কবি তাদের লেখায় ফুটে ওঠেছে। বিজ্ঞান কবিতা আন্দোলন করতে গিয়ে প্রথম দিকে বিজ্ঞান কবিতার সৈনিকরা বিভিন্ন ভাবে তিরস্কৃত হলেও বর্তমানে বিজ্ঞান কবিতাকে সবাই সাদরে গ্রহণ করেছে। এটি একটি আশার দিক। বিজ্ঞান কবিতা চর্চায় অনেকেই যুক্ত হয়েছেন যাদের নাম হয়ত এখন অনেক। দিন দিন আরো বেড়েই চলছে এই তালিকা। তবে এ ক্ষেত্রে সরব- কবি আল মাহমুদ, রবিউল হুসাইন, শহীদ কাদরী, নির্মলেন্দুগুণ, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, শেখ সামসুল হক, খোশনূর, সামসুন্নাহার ফারুক, ফরহাদ মজহার, সোহরাব হাসান, হেলাল হাফিজ, মতিন বৈরাগী, আসলাম সানী, হাসনাইন সাজ্জাদী, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, শ্যামসুন্দর সিকদার, এ এফ আকরাম হোসেন, মোঃ আখতারুজ্জামান চিরূ, আলমগীর রেজা চৌধুরী, আমীর আবদুল্লাহ, শেখ আবদুল হক চাষী, রাসেল আশেকী, খায়রুল আনাম, বদরুল হায়দার, মনি খন্দকার, স্মৃতি ভট্টাচার্য, আমিনুল ইসলাম, ফরিদুজ্জামান, রীনা তালুকদার, জহীর হায়দার, এ কে এম নুরুল ইসলাম, মেহেরুন্নেছা খান, গিয়াসউদ্দিন চাষা, ইকবাল হুসাইন তাপস, ইব্রাহিম ভূঁইয়া, রোকসানা কামাল, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, রণদীপম বসু, সরকার মাসুদ, ইমরুল ইউসুফ, আযাদ নোমান, মাসুদ খান, মআব সিদ্দিকী, আসাদুজ্জামান খোকন, সরদার আল আমিন, জাকির আবু জাফর খান, মাহবুবুর রহমান বাদশা, কামরুল হাসান, আশিক আকবর, রাকা দাশগুপ্ত, শামীমুল হক শামীম, রনজু রাইম, আয়েশা জেবিন, তোফায়েল তফাজ্জল, কিশোয়ারা সুলতানা, রাসেল তালুকদার, আনোয়ার মাহমুদ, ইউনুস ফার্সী, আফরিনা পারভিন, জরিনা নেকলেস, ফাহিমা ফারুক, মাসুম মুহাম্মদ, অনন্ত সুজন, জাহিদ সোহাগ, মোস্তফিজ কারিগর, জোয়ানা জেসমিন, শাহানা সিরাজী, অঞ্জনী রানী দেবী, গীতা রানী বিশ্বাস, মিশকাত উজ্জ্বল, কবি ও ছড়াকার- জগলুল হায়দার, এম আর মনজু, সেজান মাহমুদ, মঈন মুরসালিন, জাকির মজুমদার, ইমরান পরশ। ভারতের রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়, বীরেণ মুখার্জী, বিনয় মজুমদার, সাকিল আহমেদ, সৈয়দ হাসমত জালাল, সমর চক্রবর্তী, সুবীর সরকার, সমর রায় চৌধুরী, অমিতাভ চক্রবর্তী, ডাঃ তারক মজুমদার, উমাপদ কর, সোনালি বেগম, সুরুজ দাশ, মানিক সাহা, সুব্রত দাম, দীপঙ্কর কুন্ডু, সমাধান দেবনাথ প্রমুখ। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে আরো অনেক বিজ্ঞান কবি। এই তালিকার বিস্তৃতি ঘটছে প্রতিমুহূর্তে। তবে উল্লেখ্য যে, বিজ্ঞান যুগসন্ধিক্ষণের কবি হিসাবে প্রথম যারা সচেতন ভাবে বাংলাদেশে বিজ্ঞান কবিতা নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম কবি শেখ সামসুল হক, কবি খোশনূর, কবি হাসনাইন সাজ্জাদী, কবি সামসুন্নাহার ফারুক, কবি রীনা তালুকদার ও কবি শিলা চৌধুরী। বিজ্ঞান কবিতার আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়িয়ে এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বিজ্ঞান কবিতার থিওরী আবিস্কারক হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্ব সাহিত্যে একচ্ছত্র দাবীদার। কবি কাজী মহিউদ্দিন সৌরভকে ধন্যবাদ। তিনি ইতোমধ্যে অনেকগুলো বিজ্ঞান কবিতার অনুবাদ করেছেন। মানসম্পন্ন অনুবাদকদের প্রতি উদার আহবান বিজ্ঞান কবিতাকে ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসুন। বিভিন্ন ভাষায় আপনাদের সুন্দর ও সঠিক অনুবাদ বিশ্বব্যাপী বাংলা সাহিত্যের নতুন সংযোজন বিজ্ঞান কবিতার আরো বিস্তৃতি ঘটাবে। আর বিশ্ব সাহিত্যকে নেতৃত্ব দিবে বাংলা বিজ্ঞান সাহিত্য। বিজ্ঞান কবিতা এগিয়ে যাক। জয় হোক বিজ্ঞান কবিতার।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি ঃ
১। কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - স্টিফেন ডব্লুু হকিং, অনু.- শত্র“জিৎ দাশগুপ্ত-১৯৯৩
২। মহাকাশে কী ঘটছে - আবদুল¬াহ আল-মুতী-১৯৯৭
৩। রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞান - সুব্রত বড়–য়া
৪। কেমিষ্ট্রি - মোঃ জোবায়দুর রহমান ও পরিমল চন্দ্র দে
৫। এনভায়রণমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট -মোঃ সোহরাব হোসেন, মৌমিতা চৌধুরী, মোঃ রোকনুজ্জামান
৬। দি ট্রিটমেন্ট গাইড - ডাঃ মিজানুর রহমান কলে¬াল ও ডাঃ আসলাম হোসেন অশ্র“
৭। কোয়ান্টাম মেথড - মহাজাতক
৮। বাংলা কবিতায় অঙ্গ সুষমা - মাহমুদ শামসুল হক
৯। রবীন্দ্র-প্রকৃতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ- মুহম্মদ নূরুল হুদা
১০। ফরিদপুরের লৌক সাহিত্য- শেখ সামসুল হক
১১। চমৎকার সাহস (কাব্যগ্রন্থ) - শেখ সামসুল হক
১২। মনিটরে প্রিয় মুখ - সামসুন্নাহার ফারুক
১৩। বিজ্ঞান কবিতার রূপ রেখা (প্রবন্ধ) - হাসনাইন সাজ্জাদী
১৪। বিজ্ঞান কবিতার ভাবনা (প্রবন্ধ)- রীনা তালুকদার
১৫। বিজ্ঞান কবিতা - রীনা তালুকদার
১৬। প্রেমের বিজ্ঞান কবিতা - রীনা তালুকদার
১৭। সাত মার্চ শব্দের ডিনামাইট - রীনা তালুকদার
১৮। অদূরে বিপ্লব- শিলা চৌধুরী
১৯। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কাব্যে বিচ্ছিন্নতার রূপায়ন - এম আবদুল হালিম
২০। কথা সাহিত্যে রবীন্দ্র রুচি ও অন্যান্য পদ্য - ইজাজ হোসেন
২১। জ্যামিতি পরিচয়-রচনা ও সম্পাদনাঃ শ.ম.গোলাম কবীর
২২। বিজ্ঞান বই, সপ্তম শ্রেণী
২৩। জাগ্রত (সাহিত্যের ছোট কাগজ)- সম্পাদক ঃ রীনা তালুকদার
২৪। দৈনিক পত্রিকা ও অন্যান্য প্রকাশিত পত্রিকা, www.scientiphilia.com, ভিসস চ্যানেলের মাইকেল ভালা পাই ভিডিও, চ্যানেল- ডিসকোভারি, এনিমেল প্লানেট, হিস্টরী অব কালচার, মুক্ত বিশ্বকোষ, বাংলা পিডিয়া, উইকিপিডিয়া, এএফপি, বিবিসি, বিজনেস ইনসাইডার, সায়েন্টিফিক আমেরিকান, একবিংশ শতকের ডারউইন ও ডেইলি সায়েন্স, বিসিএস গাইড, ইন্টারনেট, প্রকাশিত সংকলন।
(অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠনের ‘একুশের বিজ্ঞান কবিতার সংকলন -2016 এ প্রকাশিত)