বৃন্দাবনের শরদিন্দু

বৃন্দাবনের শরদিন্দু
কবি
প্রকাশনী আলপনা
প্রচ্ছদ শিল্পী রীনা তালুকদার
স্বত্ব লেখক
সর্বশেষ সংস্করণ ২০১১
বিক্রয় মূল্য ১৩০/-

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

রীনা তালুকদার -এর ‘‘বৃন্দাবনের শরদিন্দু”
-বিভাস চৌধুরী

--------------------------

কাব্যগ্রন্থের নামকরণেই গ্রন্থের কবিতাগুলোর অন্তর্নিহিত মর্মকথা ফুটে ওঠেছে। বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ যেমন তার মোহনীয় বাঁশীর সুরে গৃহবধূ রাধিকাকে গৃহ ছাড়া করেছিলেন, প্রেমের আবেশে পাগল করেছিলেন, বিরহ যন্ত্রনায় কাতর করেছিলেন সই বিশাখার সাথে দোলাচল বৃত্তি করে ভৎর্সনা সয়েছিলেন, ভোগ-উপভোগ সব শেষ করে অবশেষে রাধিকার সাথে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে তাকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় পাড়ি জমিয়েছেন। সে শোক যন্ত্রনায় উন্মাদ রাধিকা যেমন করে সুরে সুরে গানে গানে ছন্দে ছন্দে কানাইকে কিছুক্ষণ ভৎর্সনা করেছেন। আবার তার বংশীধ্বনি ও প্রেম ভালোবাসার স্পর্শ অনুভব করে গুনকীর্তন করেছেন। উক্ত কাব্য গ্রন্থের নায়িকারেও তেমনি ভাবে কখনো বিরহ কাতর, কখনও স্মৃতি রোমন্থনে, কখনও বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় আহত বলে মনে হয়। যেমন তার বিসর্জন কবিতায় হতাশাগ্রস্ত কবি বলেছেন :

প্রেম যে এমন করে বিনাশে সংসারে
তারে কি বুঝতে পারে প্রেম যে যখন করে।”

অন্যত্র তিনি বলেছেন -
যে ভালবেসে কাছে নেয়
সেই ব্যথা দিয়ে দূরে ঠেলে দেয়।

ভালবাসা দুপক্ষ থেকে না হলে প্রেম হয় না। একপক্ষীয় ভালবাসা শুধুই প্রতীক্ষা, সুদূরের কুহেলিকা, ফানুস, আশা-নিরাশার দ্বন্দ্ব হৃদয়কে কেবলই ক্লান্ত, শ্রান্ত-পরিশ্রান্ত ও কাতর করে তোলে। তবুও হাল ছাড়েনা অবুঝ এ অন্তর। না পাওয়া নিশ্চিত জেনেও হার মানতে চায়না। এ অর্ন্তদ্বন্দ্বের সে যে কত জ্বালাময় তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝতে পারে না। ‘জন্মান্তরের সাধ’ কবিতায় তাই কবি বলেছেন :
সমস্ত দরদ দিয়ে তোমাকে
বসাতে পারি কৃষ্ণরাজ সিংহাসন
কিন্ত তোমাকে পাব
সে দুঃস্বপ্ন দেখা কখনো হবে না।”

বিরহকাতর কবির হৃদয় আশাহত হয়নি- হারানো ধন পাবার প্রত্যাশায় তিনি ‘‘তোমার বিরহে” কবিতায় লিখেছেন-
তুমি আসো তবে,
পাখী আর নদীরা জাগুক নিংশঙ্ক চিত্তে আরবার।
বিচ্ছেদ বিরহে কবি অন্তরের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ভুলে প্রশান্তির অন্বেষনে মানসদেবতার কাছে নিজেকে সমর্পন করতে আহবান জানাচ্ছেন ‘‘ভালবাসার বহু রং” কবিতায় -
তোমাকেই ভালবাসবো
সব ঘৃণা কলঙ্ক অপবাদ
মন সীমান্তের দূরে রাখবো।

হতাশা-বঞ্চনা-বিলাপ সব কিছুই কবি মানসকে পরাভূত করতে পারেনি, তাই তিনি এই ভেবে আবেগে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন যে হৃদয়ের পরম প্রিয়জন অদৃশ্যে থেকেও তাকে দৃঢ়ভাবে হৃদবন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন, তারই প্রকাশ ‘কানাইর চরণে প্রেম’ কবিতায় নূতন করে নিবেদনের মাধ্যমে প্রেম কবির কাছে কখনো অমৃত কখনো গরল আবার কখনো মরীচিকা কখনো বা বিরহ-বেদনা নিয়ে আসে অত্যাচার অনাচার হয়ে যখন অন্তরে ঠাই দেয়া মনটাকে তিনি কাছে পান না, স্পর্শ করতে পারেন না অপরিচিত মন এসে দেহটাকে অনাধিকার হরন করে নে, মনটা পরে থাকে সুদূরে অন্যমনের কাছে ‘সন্ধি’ কবিতায় কবি বলেছেন-

তোমাকে আপন মনে করার
কোনও যুক্তি নেই
-- তবুও হয়েছে এক সন্ধি
শুধুমাত্র এক বিছানায়
রাত কাটাবার।”
এমনি করে প্রেম ভালবাসার তৃপ্তি -অতৃপ্তি, বঞ্চনা -বিরহ -বিচ্ছেদ -বেদনা বিক্ষোভ ইত্যাদি নিয়ে কবির অনেক গুলো কবিতা রয়েছে যেমন ঃ প্রেম আছে তবুও, হাঙর, স্থায়িত্ব, আসক্তি ইত্যাদি।

পৃথিবীতে প্রতিটি সমাজই পুরুষ শাসিত। সব সমাজেই নারীরা পুরুষ শাসনে অধিকার বঞ্চিত- অত্যাচারিত নিপীড়িত ও নির্যাতিত। তাই সমাজ সভ্যতা আজ ধবংশ প্রাপ্ত, মানব সভ্যতা অন্ধকার গহ্বরে নিপতিত। অথচ এ সমাজ সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল -পুরুষদের এক প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তা হলো ‘‘নারীর নিরাপত্তা ও শান্তি বিধান করবে পুরুষরা।” কিন্তু পুরুষরা সভ্যতা ও মানবতার গতিপথ ঘুরিয়ে আদিম অসভ্যতার অন্ধকার গহ্বরে নিয়ে যাচ্ছে। তাই কবির ক্ষোভ বিক্ষোভ যত পুরুষ শাসনের বিরুদ্ধে কোথাও ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে, কোথাও সামাজিক ও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে। যেমন : ‘লিঙ্গ চিহ্ন’ কবিতায় বলেছেন -
চাইনা কোনো হাতে কাঁকন
মনে যত বৃক্ষ বাকল
অধিকারের শাসন শোষন

‘সভ্যতার অসভ্য বাঁধন’ কবিতায় বলেছেন -

নারীকে যতটা রং তুলিতে আঁকো
নগ্নতাকে অতিশয় ; নগ্ন করে
আদিম রক্তরসে উত্তরাধিকার খোঁজো।

এমনি করে পুরুষ শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং নারী স্বাধীনতার জন্য আস্ফালন কবির বহু কবিতায় বিষয়বস্তু রূপে ধরা দিয়েছে। ‘এক নারী’ কবিতায় তিনি বলেছেন-
নারীদের সিঁদুর থাকলে হিন্দু বলি
পুরুষ চিনবো কি করে ..
সবারই একজ্বালা, এরা নারী
পুরুষের ভোগের সামগ্রী।

এসব বিষয় ছাড়াও কবি স্মৃতিচারণ করে কবিতা লিখেছেন, দেশপ্রেম প্রকাশ করে লিখেছেন, অতি সাধারণ বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন যেমন- ‘সুই সুতার কষ্ট কথা” আবার কোন কোন কবিতায় কবি প্রকাশ করেছেন যে নারীর জীবন শুধুই দুঃখ বেদনায় ভরা। নারীদের মনবাসনা চিরদিন অতৃপ্তই থেকে যায়। কারণ পুরুষ তা কোনদিনই বুঝবেনা বুঝার চেষ্টাও করে না। বুঝলেও তাকে মূল্যায়ন করে না আর নারীরা ! অবলাজাতি যতই ঐকবদ্ধ হোক পুরুষ শাসন বা ক্ষমতাকে ডিঙ্গিয়ে কিছু করতে পারে না। ।

ভূমিকা

তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ