বিপদে আছি -০৯

তারিখ : ২২/০৪/২০১৮


কবিতা পড়াতেই বেশী আগ্রহ ও স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। আর দায় থেকে মতামত রাখি। ভালোবেসে মতামত রাখি খুব কম। তবে রাখি। যারা আমার একনিষ্ঠ বন্ধু ভক্ত। ইদানিং কবিতা লেখা ধীর হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ হঠাৎ লেখা হয়।

কবিতা লেখার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মধ্যে অভিধান পড়ি। কত যে অজানা শব্দ আছে। যা এখনো কবিতায় ব্যবহার করতে পারিনি। কত যে নতুন শব্দ তৈরী করা দরকার। কত যে নতুন উপমা তৈরী করা দরকার। ভাবতে থাকি। তবে ইদানিং ‍উপমা গুলোও বদলে যাচ্ছে। কেননা ফুল আর আগের মত সুবাস ছড়ায় না। ফুল আর ভালবেসে নিজের বাগানে লাগানো বা পরিচর্যা করার সময় ও জায়গা নেই অনেকেরই। শহুরে মানুষদের তো আরো কম এসব সুবিধা। এক সময় গ্রামে থাকতাম। একটা কোনো পছন্দের ফুল গাছ কোথায় কারো বাগানে দেখলে সেটা কখন যে চুরি করবো তার চিন্তায় অধীর থাকতাম। অথচ সেই ফুল আজ আর হাতে নেই না। হাত ভরে প্লাস্টিকের ফুল। ফুল আর কাউকে দেই না। যাদের দিয়েছি। তারা মূল্যবান মনে করতে পারেনি সারা জীবনের জন্য। তারাও জরা জীর্ণ জীবনের টানে ব্যতিব্যস্ততায় ঘিরে আছে। তবুও দূর থেকে ফুল দেখি, ভালোবাসি, সুগন্ধি অনুভব করি। সারাক্ষণ সবকিছু তো এই ফুলের মতই সুন্দর, কচি কোমল আর সহজ মনে করার ভাবনায় থাকি। যদিও তা কখনোই হয়ে ওঠে না। তবুও তো মনে মনে স্বপ্নে বিভোর থাকা। নতুন ফুলের নাম খুঁজি উপমা দিবো কবিতায়। কবিতায় গুণযুক্ত করার জন্য কত ফুলকে মিলানোর চেষ্টা করি কবিতার সাথে।

নদী দেখার কত ইচ্ছে মনে সারাক্ষণ। একটা ছোট খাল দেখলে দাড়িয়ে নদী দেখার সাধ মেটাই।  যতটা সম্ভব দেখি। শ্বশুর বাড়ী গেলে ঝিনাই নদী অন্তত একবার দেখে আসি। যাবার রাস্তায় ব্রহ্মপুত্র নদ  বাবার বাড়ীর দিকে ডাকাতিয়া ছোট বেলায় অনেক দেখেছি। এখন নামটাই ইতিহাস। তারপর কাটাখালি, রহমতখালী, ভুলুয়া ও জরিরদোনা আর পরিচিত পদ্মা, মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, ‍বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী  স্বাভাবিক চলাফেরায় দেখা হয়।  ঘুরতে ঘুরতে  ভৈরব নদ,  সুরমা , রূপসা,  কুমার নদ, বঙ্গোপসাগর দেখেছি।  সবতো মনে নেই।  তবে আশংকা হচ্ছে যেভাবে প্রকৃতি উজাড় হচ্ছে তাতে নদী ও ফুলের উপমা দিয়ে কবিতা গুণ যুক্ত হবার সময়টা শেষ হয়ে যাচ্ছে। উপমা দিতে হবে বর্তমানের যা কিছু চোখে দেখা। তাই দিয়েই অলংকার ও উপমা সাজাতে হবে।

কবিতা লেখার শুরুর দিকে নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর কবিতার ক্লাস তিনবার পড়লাম। কিছুতেই

দিদি আসুন
ময়দা ঠাসুন
আজকে রবিবার।
মোহনভোগের
সঙ্গে লুচি
জমবে চমৎকার!  

এসব মাথায় কাজ করেনি। তারপর পড়লাম  মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এর বাংলা কবিতার ছন্দ আরো গুলিয়ে গেলাম।  তারপর শ্রীশচন্দ্র দাশ - এর সাহিত্য-সন্দর্শন পড়লাম। তারপর পড়লাম  মাহবুবুল আলম -এর বাংলা ছন্দের রূপরেখা। ধীরে ধীরে মাথা সোজা হতে লাগলো। কয়েকবার পড়লাম। তারপর আবার নীরেন্দ্রনাথের সেই বই পড়লাম। এবার মাথায় কিছুটা ঢুকতে আরম্ভ করলো। তারপর পড়লাম  জীবনানন্দ দাশ -্এর কবিতার কথা। মাথা আরো কাজ করতে শুরু করলো। পড়লাম হাসান আলিম -এর  ছন্দ বিজ্ঞান ও অলংকার -এটা পড়ে দেখলাম কেবল আরবী সাহিত্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তারপর পড়লাম অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর এর  ভাষা ও বাংলা সাহিত্য জিজ্ঞাসা । এমনতরো আরো অনেক রবীন্দ্র নাথের ছন্দের বই নির্ঘণ্ট:ছন্দ। তারপর  
অকারণ ব্যাকরণ - স্বরোচিষ সরকার
আবৃত্তি নির্মিতি - মাহিদুল ইসলাম
আবৃত্তি মঞ্জরি - ফয়জুল্লাহ সাঈদ
আবৃত্তি প্রসঙ্গ অনুষঙ্গ - নাসিম আহমেদ
সঙ্গীত মুকুল (শাস্ত্রীয় সংগীত)- জগদানন্দ বড়ুয়া
হুমায়ুন আজাদের- কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী ।
কবিতা লেখার জন্য আরো আরো, এখনো হাতে যা পাই পড়ি। আমাদের চেয়েও তরুণ দুই তিনজনও লিখেছে ছন্দের বই। সেগুলো পড়লাম। রাহুল সাংকৃত্যায়নের ভোলগা থেকে গঙ্গা, মানব সমাজ, মরগ্যানের আদিম সমাজ যতই পড়ি ততই মনে হয় আরো কত অজানা। মাহমুদ সামসুল হকের কবিতায় অঙ্গ সুষমা -চমৎকার বই কবিতার জন্য। এর সাথে দর্শন শাস্ত্রের বেশ কটি বই। চমৎকার বই মফিজুর রহমান রুন্নু ‘র লেখা - জীবন ও বিবর্তন, মোহাম্মদ আবু তাহের -এর লেখা  জীবন ও ধর্ম , আশরাফ হোসেনের আধ্যাত্বিকতা, খোন্দকার রফিউদ্দিনের ভাবসঙ্গীত,  স্টিফেন হকিং-এর কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।  মহাজাতককে নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকলেও তার কোয়ান্টাম মেথড পড়ে ভাল লাগলো। শেখার আছে।  

সব বই পড়ার দরকার নেই। কেননা ব্যস্ততর জীবনের এত সময় কোথায় ? শুধু দরকারী বই গুলো পড়া আবশ্যক। না হলে নিজেকে ফাঁকা লাগে।

তবে ছন্দ বুঝার দিক থেকে সহজতর ভাবে এগিয়ে আছে  মাহবুবুল আলম -এর বাংলা ছন্দের রূপরেখা। সরল ভাষা যে কেউ বুঝতে সক্ষম।

কেনো লিখলাম এত কথা। লিখলাম না পড়ে কি ভাল কবিতা লেখা যায় ? এটি বার বার মনে উঁকি মেরে যায়।


(চলবে)