বিপদে আছি- ০৫
তারিখ : ১৪/০২/২০১৮...
লিখিয়ে এক বন্ধু বললেন - রাজনীতি টিতি আমরা এখানে আনতে চাই না। এখানে আমরা সবাই কবিতা লিখি।। এখানে আমরা সবাই থাকবো। যা হোক এমন কথা কখনো কখনো ভাল লাগে। কিন্তু বিশ্লেষণ করতে গেলে মাথাটা এলোমেলো লাগে। সত্যিই কী তাই। কবিতায় রাজনীতি নেই ? তাহলে স্প্যানিশ যুদ্ধে, অক্টোবর বিপ্লবে, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সিরাজদ্দৌলার পতন, বৃটিশ হটানো, সাতচল্লিশের ভাগ, একাত্তর, মিয়ানমারের হত্যা যজ্ঞ। ইতিহাসের এসব দিন গুলি কবিতায় কী করে কী করে এমন অমর সব শব্দ মালায় জড়িয়ে থাকলো ? আর এই একাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশে আবার পঁচাত্তর ঘটানো, আবার একুশে আগষ্ট জন্ম হলো কবিতায় এর ছায়া কী করে স্থায়ী আবাস পেলো ?
যখন বহু আগে চীনা দার্শনিক লূ্্য সান বললেন- ''কবিতায় রাজনীতিই প্রথম"। তখন কবিতায় রাজনীতি নেই, এই কথা কী ভাবে সমর্থন করা যায়। কবিতায় রাজনীতি না থাকলে পৃথিবীর সমস্ত অন্যায় হালাল হয়ে যাবার কথা। সমস্ত অন্যায় সত্যবাদিতায় পরিণত হবার কথা। আমি মানতে পারি না। তাহলে ঘরে বাইরে প্রতিবাদের ভাষা কই ? কবিতায় রাজনীতি অস্বীকার করা আমার পক্ষে কঠিন। কবিতায় রাজনীতিই মুখ্য বিষয়। হোক সেটা পরিবার থেকে। পরিবারও একধরণের রাজনীতির আবহে থাকে। সবার ব্যক্তি জীবন তো আছে। আবার সেখানে পরিবার একটা সার্বজনীন আচরণে বাধ্য থাকে। সবার নিজস্ব মতামতের পরে সেখানে সার্বজনীন মত থাকে, দ্বি-মত থাকে, সমঝোতা থাকে। তবেই সার্বজনীন ভাবে পরিবার টিকে থাকে। সমাজচূ্্যত হয়ে বাস করা যায় না। সমাজ মানে পরিবার থেকে শুরু। তার পর রাষ্ট্র আর আন্তর্জাতিক। সুতরাং সার্বজনীন অর্থে রাজনীতি মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। আমি আমার কবিতায় রাজনীতিকে অস্বীকার নয় বরং অঙ্গীকার করেই গ্রহণ করে থাকি। কবিদের চেয়ে বড় কোনো রাজনীতিবিদ নেই। সব রাজনীতিক কবি নয়, কিন্তু সব কবি রাজনীতিক - আমি এটা বিশ্বাস করি। তাই কবিতায় রাজনীতি খুব ব্যাপক অর্থে অঙ্গাঙ্গি। সবখানে আছি আছি নাই নাই। আবার সার্বজনীন হবো এটা খুব কঠিন ব্যপার আমার কাছে। একটা আদর্শ থাকতে হয়। আদর্শ হীন থাকলে মন উড়নচন্ডী হয়। তখন না ঘরকা না ঘাটকা। সবই ঘোলাজল। সে আদর্শের কতিপয় অনুসারী বিতর্কিত থাকতে পারে, কিছু আদর্শচূত হতে পারে। কিন্তু আদর্শের জায়গায় তো বহু সংখ্যক থেকে যায়। তাদের কী সার্বজনীন রূপ পরিগ্রহ করে না ? বড় বড় পন্ডিতেরা শার্ল বোদলেয়ারকেই কেবল পৃথিবীর কবি মনে করেন। স্বভাবত:ই আর আর সব কবি পক্ষপাত দুষ্ট। সুতরাং কবিতায় রাজনীতি মুখ্য বিষয় অামি বিশ্বাস করি।
রাজনীতি যদি একটা সার্কেল ধরা যায়। তাহলে ঐ সার্কেলের ভেতরে দলগত রাজনীতি একটা অংশ। দলগত রাজনীতি পক্ষপাত মূলক বাধ্যতামূলক ভাবে। কিন্তু সার্বজনীন রাজনীতিতে দলগত সমর্থন না থাকলেও নীতি নৈতিকতা মিলে যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। আবার কেবলই সমর্থক থাকে। সহ মতের লোক থাকে। দলগত মতের উর্ধ্বে নীতির জায়গায় সহমত তৈরী হয়। নীরব দর্শক ও থাকতে পারে। এগুলো এক একটি অংশ বিশেষ। কিন্তু ব্যাপক অর্থে রাজনীতি একটা বিশাল ব্যপার। আর তাই দলগত রাজনীতি আর সার্বজনীন অর্থে সামষ্টিক রাজনীতি ভিন্ন বিষয়। কবিতায় কবির যে মত সেখানে একটি বিষয় নয় অনেক বিষয় একসাথে উপস্থিত হতে পারে। সেখানে মূর্ত বিমূর্ততার রূপ থাকে। মূর্ত কতটা সহজ বোধ্য হলেও বিমূর্ত রূপ ? সেখানে অনেক বিষয় উহ্য থাকে। সেটাইতো একটা ব্যাপক রাজনীতি। পাঠক বিমূর্ত রূপের যার যার নিজের মত করে অর্থ করে নেয়। কিন্তু প্রকৃত অর্থতো কবি ছাড়া কারো পক্ষেই উদঘাটন সম্ভবপর হয়ে ওঠে না একশ ভাগ।
বিপদে আছি-০৬
তারিখ : ০৩/০৩/২০১৮...
এই সাইটের কতিপয় লিখিয়ে বন্ধু বললেন : লেখা কেমন হলো তাতো লিখলেন না।
ইদানিং কোনো লেখা মনের মত না হলে শুধু মাত্র পড়লাম মতামত লিখে বেরিয়ে আসি। কেননা লিখলে অনেক কথা। বার বার ব্যকরণ চোখে ভাসে। অনেকেই হয়ত বলবেন। আপনি এত ব্যকরণ ব্যকরণ বলে মাথাব্যথা করছেন কেন ? লিখতে কী ব্যকরণ লাগে ? হয়ত লেখায় ব্যকরণ লাগে না। এ কথা কিছুটা ঠিক। কিন্তু পরিচ্ছন্ন লেখা আর অগোছালো লেখার মধ্যে পাথর্ক্যটা বুঝা কোনো বুঝদার পাঠকের পক্ষে কঠিন নয়। দুর্বল লেখা ভাল পাঠককেও আহত করে। যদিও এসব চিন্তা করলে লেখার নিরবচ্ছিন্ন চেতনাটায় কিছুটা ছেদ পড়ে। তাতে আমার অনেকটা ক্ষতি হয়। পরবর্তী কিছু সময় অনেক ক্ষেত্রে কয়েকদিন কবিতা লেখা বন্ধ করে বসে থাকি।
যারা আমার চেয়ে উন্নত লেখা লেখেন আমি তাদের ছাত্র। রোজ তাদের লেখায় মনের অতৃপ্তিটুকু মিটিয়ে নেই। যেটা নিজের ঘাটতি সেটা খুঁজতে থাকি। সেটা খুঁজতে গিয়ে দুর্বল কোনো লেখা পড়লে মনটা আহত হয়। বলতে হয় রবীন্দ্র -নজরুল আরো আরো পৃথিবীর বিখ্যাত কবিদের ভাষাটা নিজের লেখা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হয়। আর কত বলবো। কারো আসলে এসব শুনতে ভাল লাগে না। অনেকেই আবার বড়ো কবিদের ছায়া নিজের লেখায় পড়লে বেশ উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। এদের আবার ব্যাখ্যাটাও খুব জোরদার। বললে : বলে যে, আপনি নজরুল-রবীন্দ্রনাথ আরো যারা ভাল কবি তাদের অস্বীকার করতে পারবেন ? ভাবি কি বলি, আর কি বোঝে। তখন এদের কাছে পঞ্চপাণ্ডব বা পাঁচতারকার কবিতার বিচ্ছিন্নতার যে লড়াই তা মিথ্যে হয়ে যায়। যা হোক, মত মতের কোনো শেষ নেই। তবুও নিত্যই নতুন নতুন পথ খুঁজি। কবিতা আরো কোন পথে কৌশলে পৃথক হবে। কোথায় যেতে পারবো জানি না। কিন্তু তবুও যেতে হবে আর বহুদূর...।
সব লেখায় মতামত রাখতে হয় না। কিছু লেখায় না রাখলেও দায় থেকে যায়। যেখানে রাখতে হয় না। সেখানে অনেক রকম ব্যাখ্যা দেয়া যায়। প্রথমত ভাল না লাগা। তারপর নিজের মতামত ছাপিয়ে দেয়া। হোক ভাল হোক মন্দ। তারপর গ্রহীতার গ্রহণে বুঝা না বুঝার ব্যপার আছে। মতামতের যোগ্য হতে হয় লেখা। আবার মতামত উল্টো করে বুঝলে বিপত্তি। ভাবি হয়ত আমি বুদ্ধিমান নই। আমার চেয়ে সবাই বেশী বুদ্ধি রাখে। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু কিছু মতামত দেখে মনে হয় আমার চেয়ে এত কম বুদ্ধি নিয়ে কবিতা লেখার দরকার কি ? কেননা একটা স্টান্ডার্ড না থাকলে সাহিত্য সমৃদ্দির যে ব্যাপারটা চলমান থাকে সেটাতো স্টান্ডার্ড ভাল থেকে আরো ভালোর লড়াই। তা হলে সাহিত্যও ততোধিক এগিয়ে যায়।
(চলবে )