আমি আর কবিতা লিখি না।
আমার মধ্যে আর
আমি নেই।
চলে গেছে সে দুরদুরান্তে
দুর আকাশে।
মিলিয়ে গেছে সে
মহাবিভীষিকার মহাদ্বারে।
পড়ে আছে একটা
হাড়মাস ওয়ালা কঙ্কাল।
যার অনবরত উচ্ছসিত, চিন্তা-ভাবনা, যেন
পাগল প্রবল পাথারের বিশালাকায়
লবনাক্ত ঢেউ,
যা এখন
আড়াইশো বছর পুরনো,
শুকনো ইঁদারার মতো শান্ত।
যার ভাষ্কর্যের চোখ হয়েছে
নির্ভাষ।

সে এখন প্রত্যেক প্রকৃতিতে ছন্দ পায় না। যেমন,
"ছোঁয়ে অন্তরীক্ষ
  এক বট বৃক্ষ।"
বা,
"ছোঁয়ে আকাশ মরু
  এক অশোক তরু।"
সে এখন গাছ-পালা-আকাশ-মাটি ছাড়া
কিছু বলতে জানে না।
সে এখন চিনতে চায় না তার
খাতা কবিতার,
যা মাত্র আস্তাকুঁড়ের মতো পড়ে আছে,
পড়ার বইয়ের তাকে।

আমার এখন প্রতিটি নিশ্বাস
আবৃত্তি করতে থাকে
নিরস
সুষ্কমঃ কাষ্ঠমঃ গদ্য।
তার ধ্বনি আমার কর্ণকুহর ভেদ করে যায়;
তার গুরুগম্ভিরতা আমার শিরোবধী ছাড়িয়ে
সারা শরীর ছিঁড়ে দেয়।

এখন আর কোনও রাতে অন্ধকার দেখি না।
স্বচ্ছ, শ্যামল অন্ধকার।
চোখ-ক্যাটক্যাটে আলো ঝকমক করে চারদিকে।
প্রত্যেকটা রাত এখন চোখটা খটখটে শুকনো থাকে।
ঘুম আসে না,
আসলেও টের পাই না।

মাঝেমাঝে মনে হয়,
আমার জীবন যে আঁকছে
তার হয়তো প্যালেটে কালি-রং শুকিয়ে এসেছে।
লম্বা কাঠের তুলিগুলতেও অখন্ড জটা-
পেইন্টিং ত শুরুই হয়নি,
তাও!

চোখের পলক পড়ে দেড় মিনিট অন্তর,
অঘর্ম চিন্তা॥
নখের ছালচামড়া উঠিয়ে দিয়েছি,
এখন চোখে-মুখে জল দিয়েও সম্বিৎ ফেরে না।

আমি আর কবিতা লিখি না।

আমি আর লিখি না-
"যত গর্জাক শ্রাবন বাদর,
অধরে ধরা অধরা আদর।"

"আমিহীন বসে বাতায়নে,
দহি আমি একা আনমনে,
কত কি ঘটে যায় এক্ষনে
এই জীবনের মহারণে।"

তোবা! তোবা!
তাও
আমি আর কবিতা লিখি না।