আমি যাত্রাপথে,
কোনও এক অপ্রয়োজনীয় গন্তব্যে।

নীল-রড ওয়ালা জানলায়
গালে হাতে বসে আছি।
বাইরে দেখছি।
দেখছি, ছোট্ট ছোট্ট খালে পাট,
তাদের কাঠি বাইরে সাজানো যাযাবরী তাঁবুর মতো করে।
প্রচুর বউ, মেয়েরা পাট ঝাড়ছে।
পুকুরগুলো পদ্ম পাতায়,
আর বেগুনি রঙ এর এক ফুলে ভর্তি।
জীবনে প্রথম,
বইয়ের পাতার বাইরে পাট দেখলাম।

ধীরে ধীরে ঢাল গড়িয়ে নামা
চা-বাগান শেষ হচ্ছে।
শুরু হচ্ছে ধান খেত।
ধান খেতের অপরিণত শাখাতে,
রোদ্দুর ঝলকাচ্ছে।
বর্ষাহীনতার রোদ্দুর।
আকাশে পমেটম-মাখা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।
পুকুরসম ধানখেতের ওপর তার ছায়া ছবি দেখছি অনবরত।

চকচকে রোদপড়া রেললাইনগুলো
কেমন পাল্টাচ্ছে।
সাপের মতো নড়ছে।
একবিংশ শতাব্দির মর্ডানমনষ্ক ছেলে আমি।
তাও অবাক হচ্ছি।

এক সময় দেখি প্রচুর শালগাছ,
বলতে পার, শালবন।
আরও ভালভাবে,
শালারণ্য।

কত ব্রিজ পেরলাম, কত নদীর ওপর দিয়ে।
এক পুকুর, ছোট,
তাতে এক কলসি-কাঁখে-কুমারী।
আমাকে অবিভুত করলো
আঁকা ছবির মতো।

ঝাঁঝাঁ রোদ্দুর,
চোখ সরিয়ে নিলাম।
হঠাৎ চোখে ঠান্ডা হাওয়া পড়ল।
কিসের?
ঘনগম্ভীর টলন্ত বাঁশবনের।
গম্ভীর ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
কোনও এক অব্যাক্ত আদেশে।
তাদের ধারালো পাতা,
ফরফরিয়ে উড়ছে।
হঠাৎ, এক ঝলক সূর্য এসে
ভরালো আলোতে বিষন্ন বাঁশপাতা।            

আমরা এগোচ্ছি,
আমাদের সঙ্গেও এগোচ্ছে চারপাস,
তবে নভোমন্ডল চিরস্থির।
মেঘগুলো যেন দোঁয়াস মাটির মতো
জমাট হয়ে আছে।

এরপর অনেকটা প্রতিক্ষা।

কালো হয়ে এল আকাশ দিগন্ত,
কালো হল নদী, খাল, ডোবা,
নীল আকাশে হঠাৎ এমন ধারা,
কালোত্ব ছাইলো কাজল মেঘে।
শুরু হল ধীরে ধীরে বারিবর্ষণ।
বাড়লো তার গতি, বিচ্ছিরি ঝমঝমঝমঝম।
এই পান্ডুলিপি ভুলে বাইরে হাত বাড়ালাম
তীরের মতো বিঁধলো ফোঁটা আমার হাতে।

ইশ্ শ,
আমার পান্ডুলিপি চপচপে ভিজে গেল বারিবর্ষণে।
                                            
                                                     ৮ই আগস্ট,২০১৪।