একদা কি করিয়া মিলন হল দোঁহে,                      
কি ছিল বিধাতার মনে

বর্ষা।
জষ্টি মাসের ঝমঝমানো
সূর্যাস্তের বর্ষা।
মুহুর্তের মধ্যে রাঙ্গা নবোঢ়াসম আকাশ
হয়ে উঠ্ল কালো বিধবা নারী।
ঝমঝমিয়ে পড়ছে তার চখ থেকে অশেষ জল।
আমি সেদিন অনুল্লেখ্য কোনো এক কারনে,
মাথায়ে ছাতা নিয়ে
রাস্তায় হাঁটছিলাম।

বর্ষা বাড়ছে।
টপ-টপ,
টপ-টপ-টপ,
টপ-টপা-টপ,
ঝম-ঝম,
ঝম-ঝম-ঝম-ঝম-ঝম।
আমার ছাতা তখন অশ্রু-বেদনার ভারে সিক্ত।

আমি তখনও হাঁটছি, হাঁটছি, হাঁটছি,
পীঠময় কর্দমক্ত।
হঠাৎ দেখা হল
এক পরিচিতের সঙ্গে
থুড়ি,
পরিচিতার সঙ্গে।
অনেকদিন ধরেই চিনি।
আমি অনুরোধ করি,
পাঠক যেন এতে কোনো
প্রেমকাহিনীর
পারস্য আতরের গন্ধে মেতে না থাকে।

চারিদিক মম করছে,
আধ-জ্বলন্ত সোঁদামাটির গন্ধে,
প্রতিটি ঘ্রানে, নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে,
মেখে নেবার প্রয়াস করি সে গন্ধ
আমার রন্ধ্রে-রন্ধ্রে।

পরিচিতার সঙ্গে একটাই কথা হল।
পরস্পরের গন্তব্য-সম্বন্ধীয়।
ভাব্ছি,
কোনো কবি এ দেখিলে
লিখে ফেলত এক বাজারোচিত কবিতা।
আমি হতেম সে বাজারের এক
তথাকথিত প্রেমিক,
প্রেয়সী কে তুষ্ট করতে আপ্রান-মত্ত।

প্রতিটি প্রেমকবিতায়,
বর্ষা এবং গাছ থাকাটা যেন আবশ্যক।
এখানেও তাই ঘটেছে।
দুরে হেরি একটা গাছ-নাম জানি না
গোলাপি, পাঁচ পাপড়ির ফুল তাতে।
বর্ষার চটে টুকরো টুকরো হয়ে
ঝরে পড়ছে।
কেমন এক লাবন্যময়,
স্বর্গীয় নন্দনকাননিয় scene একটা!
আমাদের দুয়েরই গন্তব্য
তার কছুতা পরে।
অর্থাৎ,
স্বর্গীয়তা লাভের উপায় নিশ্চিত!

আমরা তার তলা দিয়ে আসতে-আসতে যাচ্ছি।
আমি আমার হন্টনগতি কমিয়ে দিয়েছি,
ভদ্রতা বজায়ে পরিচিতাও তাই করেছে।
হায় ভগবান!
স্বর্গসুখ স্বর্গেই সম্ভব, মর্ত্যে অকল্পনীয়;
সব পুষ্পপাপড়ি এসে ঝরছে
ছাতাদ্বয়ের ওপর।

এখনও এমন কোনো
এক জন জোটেনি,
যে
'সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে'
গেয়ে, ফুলের ঠুনকো দলনায় দুলবে।

মাপ করবেন,
একটু পাগলপ্রেমিক হচ্ছি-
     আমার পার্শ্বচারিনীর চোখে,
     ঠিক যেন সেই কালো দিগন্তের কাজল।

পথ বিচ্ছিন।
আমি এখন একা।
একুশ শতকের বিদায়-সম্ভাষণ,
Bye- বলে বিদায় নিয়েছি।
আমি এখন একা।
বর্ষার বিমর্ষ বীনা বাদনরত আমার বুকে।
বিশ্বচিত্তে যেখানে বাজছে,
ভোরবেলার ভূবনভোলান, আহ্ ।

এখনও আমি গন্তব্যনিষ্ট,
শুধু এই জষ্টির এক অজানা তারিখে,
যেখানে নববধুর আকাশ বিধবা হয়েছিল,
যেখানে আমার মধ্যে থেকে কাব্য নিষ্কাশিত হয়েছিল,
যেখানে এক মুহুর্তমাত্র স্বর্গীয়তা লাভ হয়েছিল,
যেখানে আমার সঙ্গে এক পরিচিতার দেখা হয়েছিল,
আবার বলি,
থুড়ি,
সুধি-
পাঠক যেন এতে কোনো
প্রেমকাহিনীর
পারস্য আতরের গন্ধে মেতে না থাকে।

                                                        - অর্চন মুখোপাধ্যায়।
                                                          ১৭-১৮ই-মে, ২০১৪