হঠাৎ লু হাওয়ার ঝাপটায় উড়ে
আসা অসংখ্য ধূলিকণার ঘূর্ণিপাকে
নিজেকে আবিষ্কার করলাম; আকাশের
দিকে এক পলক তাকাতেই দেখতে পেলাম
নিকষ কালো এক পাহাড়সম মেঘ উপর থেকে
তাঁবুর মতো ছেয়ে ফেলেছে আমাকে।
মেঘ ফুঁড়ে প্রায় বেরিয়ে আসছে আগুনে দগ্ধ
লোহার টুকরোর মতো বিদ্যুতের তীক্ষ্ণ ঝলক,
যেন সে প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে বেরিয়ে আসতে
চাইছে আর তার ফোকলা দাঁতে বিষাক্ত ছোবল
বসিয়ে আমার ভীতসন্ত্রস্ত দেহ ও মনে একটা শক্ত
বার্তা দিতে আসছে।
ঘূর্ণিপাকে আমি আগেও পড়েছি; পড়েছি যখন
আমি এগারো বছরের একটি ডানপিটে শিশু।
একটি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ দুপুরে পাড়ার অগভীর
পুকুরে হৈল খেলতে খেলতে সেবার সেখানেই
আটকে গিয়েছিলাম; ভাগ্যই হয়তো সেদিন
বাঁচিয়েছিল আমায়, এরপর ঐ পুকুর মাড়াইনি
আজ বাইশটি বছর!
আজ আবার সেই ভরদুপুর, সেই খেলার মাঠ! সেই
চেনা সারি সারি বাবলা গাছ! পাশেই সেই ভূতুড়ে
পুকুর! আমার কম্পিত মস্তিষ্ক যেন আরো কেঁপে
উঠলো! চোখের পলকে শোঁ শোঁ শব্দে একটি অশুভ
ঝড় বাবলা গাছের ডালপালা বেয়ে পাখির মতো
উড়ে গেল।
বিকেলের নরম তুলতুলে হাওয়ায় নিজেকে খুঁজে
পেলাম একটি ভূট্টা ক্ষেত্রের নালায়, যেখানে ব্যাঙাচি
আর মশকের লার্ভারা খেলা করে। গাঁয়ে জড়ানো শহরের
দামি ব্র্যান্ড রিচম্যানের জামায় জড়িয়ে ছড়িয়ে আছে
মাকড়সার সাদা জাল; বাবলা গাছের ছোট ছোট ছেঁড়া
পত্র-পল্লব আর ভূট্টা গাছের ফুলের পতিত রেণুতে ঢেকে
আছে আমার পতিত দেহ খানি; উপরে তাকিয়ে দেখি,
ধবধবে সাদা আকাশ আমার পানে চেয়ে চেয়ে হাসছে!