আকস্মিক পরিচয়, অর্থাৎ এক দৈবচয়নের খেলার ফলাফল হলো তার সাথে সাক্ষাৎ; একটি জীবিকা
অন্বেষণের পরীক্ষাকেন্দ্রে। আমার এখনো ঠিক স্পষ্ট
মনে পড়ছে তার সেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভাবখানা; কক্ষ
ভরা মানুষের উপস্থিতি তাঁর মধ্যে একটা অসহায়ত্ববোধ
সৃষ্টি করেছিল নিশ্চিত। উঁচু -লম্বা, দোহারা গড়নের সেই
অচেনা মেয়েটির এলোচুল সিলিং ফ্যানের বাতাসে পত
পত করে উড়ছিল আর আমার সমস্ত স্মৃতিশক্তি আন্দোলিত করছিল। সত্যি বলছি, তখন আর আমি নিজের মধ্যে জীবিকা অন্বেষণের পরীক্ষার প্রার্থিতা অনুভব করছিলাম না; মনে মনে তার পাণিপ্রার্থী হলাম!
এমনই ছিল সেই দৈব সাক্ষাতের প্রভাব। বিধাতাও ঢেলে দিলেন অনেক বেশি; জানা গেল, তাঁর আসনটি
ঠিক আমার সাথে! দেখাদেখি করে লিখে সে পরীক্ষায়
দু' জনই পাশ করেছিলাম। সেই থেকে কাছে আসা, ফুল
দেওয়া, তাঁর জন্য কবিতা লেখা, আর গান শুনিয়ে ঘুম
পাড়িয়ে দেওয়া। আমার এ সবকিছুতেই সে মুগ্ধ হতো,
আন্দোলিত হতো, হতো আনন্দিত; প্রায় বিকেলেই তাঁর
নরম কোমল হাতে একটি তরতাজা ফুল তুলে দিতাম।
সারা বিকেল ধরে সেটা সে পরম যত্নে বয়ে বেড়াতো ,
আর সন্ধ্যাবেলা বাসায় যেয়ে বালিশে মাথা রেখে নিরবে
তার ঘ্রাণ নিতে।
এভাবে কত দিন, কত রাত কেটেছে! তোমাকে, তোমার
মননকে প্রভাবিত করেছি আমি, আমার ভালোবাসা,
তোমাকে নিয়ে সংসার পাততে চেয়েছিলাম আমি, সুখী
হতে, খাঁ খাঁ করা মরুভূমিতে ভালোবাসার ফুল ফুটাতে।
তোমারও তেমন আপত্তি ছিল না; যেমন আপত্তি ছিল না আমার দেওয়া ফুল নিতে, বৃষ্টিভেজা অসাঢ় শরীর খানা আমার কোলে এলিয়ে দিতে, আমার হাতের ছিলা বাদাম মুখে দিতে, কিন্তু যখনই তোমার হাতে আমার শূন্য জীবনবৃত্তান্তটা তুলে দিলাম: আমার বাবা অন্ত্যজ
শ্রেণীর লোক, নিরক্ষর পরিবার, ঘটিবাটিহীন সংসার
ইত্যাদি ইত্যাদি, তখনই তুমি সরে গেলে, ফুলের ঘ্রাণ
থেকে, আমার কবিতার বিষয়বস্তু থেকে!