একদিন ঝরে যাবো- যেভাবে তারা ঝরে
আকাশের গায়ে, আকাশের পরে।
লোনা মাটিতে যেভাবে মূল নেয় শ্বাস-
লাগোয়া শীতল বাতাসের উপরে।

একদিন সদা ফুল হয়ে, কলি ছেড়ে বেরুবো ক্ষণ-
পাতার গায়ে, পাতার উপরে
লেলিয়ে দেবো রঙ, দেবো শরীর।
মাটির রসে কি-যে বাহার গায়ে গতরে,
চোখ কেড়ে নেব, রঙ ছড়াবো-যেনো প্রেয়সী অদূরে।
পাখির গানে, পাখির মিলনে স্বর্গসম চাদরে।
ফুটে রবে দেহ নুয়ে থাকা ডালে নগ্ন রূপরসে -
শরীরের ঘ্রাণ ছড়াবে ভীষণ মোহনীয় বাতাসে।
এমনি একদিন ঝরে যাবো- যেভাবে ফুল ঝরে
ভক্তের হরণে; শিবের গলায়, শিবের চরণে।

আবার কখনো আমনের দিনে-
চিটা হয়ে বেরুবো ক্ষণ।
এলোয়া বাতাসে, পরাগে না মেশে
করিবো অন্ত্রে শূন্যতা রোপন।
মাঠ ভরা হলুদ শস্য, বুক ভরা তার সোনা-
আমি শুধু অমূল্য খোসা, দুঃখ চিরচেনা।  
এমনি একদিন ঝরে যাবো- যেভাবে চিটা ঝরে
দখিনা বাতাসে; কৃষাণীর কুলোয়, কৃষাণীর হাসিতে।

কখনো আবার ভোরের সুইচোরা হয়ে-
নরম কুঁড়ে, ডিম ফুটে বেরুবো ক্ষণ।
সহোদরের উদর ঘেঁষে, মায়ের শিসে
সুচালো চঞ্চু করিবো আলিঙ্গন।
দিনে দিনে পোকা মাকড় ছেঁচে
বাহুতে গজাবে ডানা।
ডানা ঝাপটে, রক্তিম আকাশে-
বাতাসে ভেসে; নেবো শ্বাস, দেবো শিস।
এমনি একদিন ঝরে যাবো- যেভাবে পালক ঝরে
বয়সের ভারে; গাছের ডালে, বনের পরে।  

আবার কখনো এটা ওটা রূপে-
জাগিব আমি কিংবা জন্ম লইবো ক্ষণ।
প্রতিবারই ঝরে যাবো-যেভাবে ঝর্ণা ঝরে
পাহাড়ে গায়ে, পাহাড়ের পরে।
যেভাবে ঝরে রোদ, ঝরে শিশিরের জল,
ঝরে আবরণ নববধূর; স্বামীর সোহাগে, স্বামীর আদরে।
আবার ঝরে যাব- যেভাবে পাতা ঝরে
ডালা ঝরে, ঝরেছে পূর্বজ।
একদিন ঠিক ঝরে যাবো- যেভাবে মানুষ ঝরে
মানুষের তরে, শ্মশানের ধোঁয়ায়, মাটির পরে।
প্রতিবারই ফের ঝরে যাবো- যেভাবে কাল ঝরে
ভোরের গায়ে, দিনের গায়ে, রাতের পরে।      


০১ মাঘ ১৪২৮ / ১৫ জানুয়ারি ২০২২ / শনিবার
নারায়ণগঞ্জ।