আমি চিরকাল, আমার জন্মান্তর ধরে-
উর্বর রক্তজালিকার দেহে
এমনি নির্বোধ, নিষ্ফলিত থাকতে চাই।
দেবতার রূপান্তরিত, সেই পশু মানবের চারণভূমে
আমি বরাবর- মানুষ হয়ে, নদী হয়ে
কিংবা রক্ত জবার ডালে জন্মাতে চাই-
নির্বোধ সরলকুচির রক্ত জবাটি হয়ে।
আমার এই নির্বুদ্ধিতা, আমাকে এতোই ভালোবেসেছে-
জলের তলে লুকিয়েও পিছু ছাড়াতে পারিনি।
ভালোবাসা ফেলে আশা যায়, বিপত্তি শুধু
যে ভালোবাসে তাতে; তাকে ভুলাবো কিসে?
কখনো খানিক লুকিয়ে পড়ি, ঘন মনুষ্য ঝোপের ভেতর।
কয়েক ঢোক গিলে ফেলি বোধ,
শীতল ঠাণ্ডা পানির মতো, মন্ত্রমুগ্ধ মদের মতো।
গলা বেয়ে নামতেই বোধ কাজ করে ত্বরিত গতিতে।
চোখ ফিরে পায় জ্যোতি, কান হয়ে ওঠে ভীষণ সজাগ,
ঠোঁট চলে আসে নিয়ন্ত্রণে, বেপরোয়া বিদ্রোহের অনুকূলে।
তখন দেখি, মানুষের সিংহভাগ হয়েছে পশু
কখনো উল্টোও দেখি। পশুদের লঘুভাগে কিছু মানুষ।
গুহা যুগের পর গুণে দেখি,
সভ্যতার নব শিশুরা ক্রমে হয়েছে পশু-
সংখ্যা পৌঁছে গেছে লঘিষ্ঠ গরীয়ানে।
পশু, পশুর দিকে অস্ত্র তুলেছে, বোমা ফেলেছে কোথাও
আবার পশুরা এসেই দিয়েছে শাস্তি।
পশুর হাহাকারে, জয়গানে; মানুষেরা বড্ড গভীরে উধাও।
বোধের শক্তি শেষ, আরো কয়েক ঢোক গিলে নেই বোধ।
পুনরায় দেখি- মানুষের আবরণে সেই বিচিত্র প্রাণীরা,
স্নায়ু যুদ্ধ খেলে। ক্ষমতাকে এনে নিয়ন্ত্রণ, ক্ষমতাই ধরে মেলে।
এদের কুটক্তি, অপবাদ আর অবিচারে-
ঠায় দাঁড়িয়ে, ঠায় দাঁড়িয়ে ফেঁপে ওঠা অসংলগ্ন বিদ্রোহে
মানুষেরাই দিয়েছে প্রাণ, ঢেলেছে রক্ত, গেয়েছে গান।
আমি যখনি বোধ গিলে খাই,
খুব ব্যথাতুর হয়ে যাই, কোমল তরুণীর মতো।
তখনি নির্বুদ্ধিতা আমাকে খুঁজে পায়।
আমি নির্বোধ, অলস দেশদ্রোহী বনে যাই।
নির্বুদ্ধিতা আমাকে খুব সযত্নে রাখে,
খেতে দেয়, ঘুমোতে দেয়, উপরি দেয়।
মাঝে সাঝে কিছু পরিচিতিও দেয়-
আর কি বা লাগে জন্মানোর পরে। তাই,
আমি এমনি নির্বোধ, নিষ্ফলিত জন্মাতে চাই-
আগামী হাজার জন্মান্তরে ধরে।
আমি চাই না আর বোধ আসুক,
নির্বোধে শান্তি ভীষণ, বোধ এলে সুখ বাসা বাঁধে না,
বোধ এলেই বলবে আমায়- এ কবিতা তুমি লিখো না।
৬ ফাল্গুন ১৪২৮ / ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ / শনিবার
নারায়ণগঞ্জ।