বেডে বেডে শুয়ে আছে মৃতপ্রায় মানুষেরা,
স্ট্যান্টগুলোতে ঝুলে থাকা স্যলাইনের মতোই-
ঝুলন্ত জীবন, টপটপ করে শেষের পথে।
প্রতিটা কেবিনে-করিডোরে রোগী, রোগীর স্বজন,
আরো আরো আগন্তুক, বেনামী রোগী।
সিঁড়ির গোঁড়া থেকে মাঝে মাঝে চিৎকার আসে-
বার কয়েক তাকিয়ে দেখি এক সুপর্ণা যুবতি।
আমার বোধে আসে না, কি অসহ্য ব্যথা তার?
খানিক বাদে জানলাম, বক্র জীবনের সদ্য ছানা হারা মা।
খানিক স্তব্ধ দাঁড়িয়ে টের পাই চারদিকে চিৎকার
হাজারো স্বরে-কণ্ঠে-বিলাপ।
খনে খনে আর্তনাদে জটলা ঠেলে ট্রলি ছুটে আসে
ভেতর বাহির হয়, গন্তব্য পায় না খুঁজে।
স্যাঁতসেঁতে হয়ে ওঠে ট্রলি; রজ্জু-রক্তে।
বিবশ্য দেহ খণ্ডায়ন দেখে,
কোথাও কেউ বলে উঠে- 'টিকবে না'।
স্বজনের বুকে এরচেয়ে বড় আঘাত কে হানতে পারে?
হঠাৎ খবর পেয়ে কেউ ছুটে আসে-
স্বজন খুঁজে নিতে, ভয়ে ভয়ে এগোয় করিডোরে
ডোম ঘর, মর্গ সম্মুখ যেনো মর্ত্যের যমালয়।
ফেস্টুনে মার্ক করা ২০৭ নম্বর কেবিন!
অবাক হয়ে দেখি, মৃতপ্রায় মায়ের দিকে
টলটলে চোখে শিশু তাকিয়ে; ভয়ানক নিরব।
একটুও কাঁদছে না, শিশুর অন্তর গলনে কি মা বাঁচে?
বাঁচে যদি, তাহলে বাঁচুক এই রোগীখানার অন্য রোগীরাও।
হাসি খুশি পরিবারের হার্ট ফেইলিউর পেশেন্ট,
দু চোখ খুইয়ে আসা যুবক, জটিল নাড়ি প্যাঁচে অন্তঃসত্ত্বা মা,
পয়জন এটাকে নীলবর্ণ দুধের শিশু, অসাবধানে অঙ্গ হারা পিতা,
অল্প প্রাণসহ থেতলানো দেহ নিয়ে আসা রোগীটাও।
কোণার দিকে সদলবলে পাহারায় যে কয়েদিদের
নিভির চিকিৎসা চলে, তারাও।
এখানে দাঁড়ানো যায় না, মানুষ তা পারে না
এতো এতো অচেনা মানুষের হাহাকার সহ্য হয় না।
লালচোখা নিশিপ্রহোরী সাইফউদ্দীন কি করে রয়?
তবু শান্তি চোখে- শিফট ভাগ করা ঈশ্বরদের দেখে,
কত চেষ্টা, কত ছুটাছুটি!
শেষবার, এই বুঝি শেষবার তার হাত ধরে-
কেউ নতুন প্রাণ পেয়ে গেলো।
জানি না সৃষ্টির সেবায়-তাদের বুকের অতন্দ্রপ্রহরে
কতটুকু মায়া জমে থাকে?
হে অধীশ্বর অন্তহীন পাপী জীবনের
তিলসম পুণ্য কিছু যদি রয়, নিয়ে নিও-
মানুষের তরে ওই শুশ্রূষা দাতা মর্ত্যের ঈশ্বরদের দিও।
২৮ শ্রাবণ ১৪২৯
নারায়ণগঞ্জ।