আমি প্রথম যেদিন এই কবিতাটি পড়ি তখন কবিতার শুরু লাইনগুলো বুঝতে পারছিলাম না। তবে নির্মলেন্দু গুণ এর কবিতায় অবশ্যই চিরসবুজ একটি লাইন থাকবে তাতে একদম নিশ্চিত ছিলাম। কবিতার পড়তে পড়তে আমি সেই লাইনটি খুঁজছিলাম।
দ্বিতীয় চরণে গিয়েই আমি সেই লাইনের গন্ধ পাচ্ছিলাম। এবং শেষে এসে পুরো কবিতার প্রাণ অংশ-
'অথচ আমার সঙ্গে হৃদয়ের মতো মারাত্মক
একটি আগ্নেয়াস্ত্র, আমি জমা দেই নি।'
এই চরণ দুটি পড়ার পর থেকে এই কবিতাটা আমার ভালো লাগার শীর্ষে চলে গেছে। এরপর থেকে কতবার যে এই কবিতাটি পাঠ করেছি তার শেষ নেই।
আজকের এই কথা গুলো বলার পেছনে একটি কারণ আছে। কারণটি হলো এই কবিতা লেখার ইতিহাস আমি খুঁজে পেয়েছি। অনেক জ্ঞানী গুণী ও বিজ্ঞ ব্যাক্তিদের সমারহ এই ওয়েবসাইটে। তাই অনেকে নিশ্চয়ই ইতিহাসটি জানেন তবুও ভাবলাম আমার এই আলোচনার মাধ্যমে এই ওয়েবসাইটে থাকা অন্য যারা কবিতার পেছনের গল্পটি জানেন না তারা জানতে পারবেন।
তখন সবে মাত্র যুদ্ধ শুরু হয়েছে। নির্মলেন্দু গুণ হাটতে হাটতে হাইকোর্ট মাজারের সামনে আসলেন। তিনি অবাক হয়ে দেখছেন মিলিটারিরা টেবিল পেতে বসে আছেন বর্তমান সচিবালয় রোডে। তারা বেসামরিক ভীত মানুষের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নিচ্ছেন। যারা কিছু সময়ের জন্য বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিলো।
গুণ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একজন মিলিটারি এগিয়ে আসে। তাকে দেখে বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করে- এখানে কি চাও?
নির্বিকার ভাবে নির্মলেন্দু গুণ বললেন- অস্ত্র জমা দেওয়া দেখি।
মিলিটারি তাকে ধমক দিলেন। এবং দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে বললেন। গুণ দা সেখান থেকে হেঁটে তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় চলে আসলেন।
সেবার গ্রামের বাড়িতে বসে নির্মলেন্দু গুণ একটি কবিতা লিখলেন। নাম 'আগ্নেয়াস্ত্র'।
তথ্যসূত্র : জোছনা ও জননীর গল্প - হুমায়ূন আহমেদ