শেষ হলদে পাতাটিও বাতাসে দোল খেয়ে
ঝরে পড়লো; এখানেই ঝরে গেছে তার সহোদরেরা।
কাণ্ডে পচন ধরেছে কবেই।
অতীত সেসব সহোদরের জৈবসারে
নানা আগাছার সাথে জন্মেছে থানকুনি ও দূর্বা।
বারান্দার জীর্ণ বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখছি,
দীর্ঘজীবী কাঁঠাল গাছটির প্রয়াণ যাত্রা।
চোখের দৃষ্টি খুব ক্ষীণ; মোটা পূরত্বের দর্পণ
অন্ধপ্রায় চোখে কিছুটা আলো দিয়েছে।
দীর্ঘ বালুতীরে শামুকের পদচিহ্নের মতোই,
এক সময়কার কর্মঠ দেহে-
ভেসে উঠছে অজস্র শিরা-উপশিরা।
বন্ধুরাও গত হয়েছে একে একে
অবশ্য কয়েকজন আমার মতোই জীর্ণ দেহে-
রয়ে গেছে আজও; এই বুঝি তাদের মৃত্যু খবর এলো।
সময়ের ঘোড়ায় চেপে কবে যৌবন পেরিয়ে
বার্ধক্য চলে এলাম, বুঝে ওঠার আগেই আমি শয্যাশায়ী।
মনে হয় এইতো সেদিন,
বাড়ির চালে নতুন টিন বসিয়েছিলাম।
বাড়ি ভর্তি কতই না আনন্দ সবার।
প্রখর রোদে চোখ ধাঁধানো সেসব টিন আজ-
মরিচায় ঝুরঝুরে; হালকা বৃষ্টিতেই পানি চুইয়ে পড়ে।
কাটা পুকুরটায় বাহারি মাছের চাক ছিলো-
মধ্য বিকেলে বর্শি ফেলে, ছেলে বুড়ো সবাই
প্রতিযোগীতায় নেমে যেতাম।
সেই কাটা পুকুরে আজ বিশাল সরকারি দালান।
বার্ধক্য শুধু আমাকেই ছোঁয়নি,
ছুঁয়েছে এ বাড়ির বসার ঘর, আসবাবপত্র-
জানালা, দেউরি; এই গ্রামগঞ্জ,
শৈশবের পানা পুকুর, গাঢ় সবুজ কাঁঠালের চারাগুলোতে।
এখন শুধুই দেখবার পালা-
কে আগে গত হয়; আমি না-কি উলুধরা কাঁঠাল গাছটি।
২৫ শ্রাবণ ১৪২৮ / ০৯ আগস্ট ২০২১ / সোমবার
কালিপুর, চাঁদপুর
প্রসঙ্গত : আমার শ্রদ্ধেয় শতবর্ষী দাদাজানের সদ্য শারীরিক অবস্থার অবনতির দরূণ কবিতাটির মূলভাবনা প্রস্তর আমার মাথায় কঠিন ভাবে ভিত্তি গড়ে। সেখান থেকেই এই কবিতার জন্ম।