আমরা ততবার শোকাহত হই,
যতবার হৃদয় পোড়ানো নাটক না করলে-
সমাজে মান রাখা দায়!
আমরা ঠিক ততবার শোকাহত হই,
যতবার লাশের গন্ধে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে,তাই-
‘এই দৃশ্য চোখে দেখা যায় না’; বলে সটকে পড়ি!
শত মিটিং হবে, পাঁচ সদস্যের কমিটি হবে-
শোকের ব্যথায় মলম দিতে হবে যে!
আগ্নেয়গিরির লাভা কি অতটা উত্তপ্ত,
আগুন যতটা উত্তপ্ত মানুষের হাড় পুড়ে হয়?
চোখ, মগজ, শিরদাঁড়া সহ বহু বছরের-
পরিশ্রমী হাত পুড়ে; আগুন যতটা উতপ্ত হয়,
কোটি গ্যালন হাইড্রোজেন পোড়া সূর্য কি তার চেয়েও বেশি উত্তপ্ত?
এতো কিছু ভেবে কি হবে?
পাটিগনিতের মুখস্থ সূত্রের মতো- আমরা জানি,
মানুষের মৃত্যুর চাইতে সম্পদের মৃত্যু পীড়াদায়ক!
মানুষের মৃত্যুকে টাকার চাদরে মুড়ে দেওয়া যায়।
সম্পদের মৃত্যু মুড়বে কিসে?
আমরা যে মালিক সম্প্রদায়!
আমরা ততবার শোকাহত হই,
যত বার শ্রমিকের গাফিলতিতে বার্ষিক মুনাফা কম আসে।
মাসিক বেতন দিয়ে তো-
আমরা ওদের জীবন কিনে নিয়েছি!
ওদের কষ্ট, ঘাম, হাহাকার-
মাঝে মাঝে দূর্ঘটনায় কিছু প্রাণ চলে যাওয়া,
দেখলে তো আমাদের চলে না।
আমরা ততবার শোকাহত হই,
শ্রমিকের অবহেলায় কিংবা প্রতারণায়
বিশাল প্রাচুর্য্যের কিছু খুঁয়ে যায়!
মাসিক কিংবা বার্ষিক কিছু দূর্ঘটনায়,
কিছু প্রাণ ঝরে যাবে এটা নিতান্তই মামুলি বিষয়।
কিন্তু আমাদের বিড়ম্বনা, শোকাহত সাজতে হয় তাতে!
আমরা দেখি মামুলি শ্রমিক মরেছে,
তারা দেখে পিতা।
আমরা দেখি অর্ধশত শ্রমিক মরেছে,
তারা বলে দুশো মানুষের মিলিত পরিবার!
আমরা দেখি গোপনে চাকরি নেওয়া কিশোর মরেছে,
তারা বলে শত আদরের ভাই!
তাই আমরা শোকাহত হই,
নিহতের শোক মুছতে!
আমরা মূলত শোকগ্রস্ত নই-
গোপনে কিছু লাশ পুঁছতে!
২৬ আষাঢ় ১৪২৮ / ১০ জুলাই ২০২১ / শনিবার
নারায়ণগঞ্জ