টাটকা নীল একটা টি-শার্ট গায়ে হাটছি,
দোদুল্যমান পথচলা, ক্লান্ত আর অধীর চাহনি।
চোখের পর্দা, রুক্ষ ঠোঁট ভীষণ কাঁপছে-
তাকিয়ে দেখি গায়ে বিভিন্ন উপজাত ময়লা।
ঝেড়ে ফেলতে ইচ্ছে হলো-পরেই কি ভেবে পুনরায় হাটছি।

কেউ কেউ হয়তো আমাকে দেখছে,
ভাতের মারের মতো এঁটো সেটো ময়লার ভাগাড়-
থেকে নেড়ি আর রূঢ়ভাষী কুকুর প্রস্তুতি নিচ্ছে
অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে।
তাদের তীব্র দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে পুনরায় হাটছি।

পাশেই মধ্যবিত্তের দু-প্রজন্মের সঞ্চিত একতলা বাড়ি,
আমার ঝাকড়া চুলের মতো গাঢ় গোলাপি বাগান বিলাস-
বাড়িটির চোখ-মুখ-কান ঢেকে দিয়েছি, এক কোনে শুধু নেমপ্লেট
ধবধবে মার্বেলে লেখা- 'আগন্তুক' ঠিকানা: অস্পষ্ট।
বাড়ির হা করা পাষাণভেদী গেইটকে অবাক করে পুনরায় হাটছি।  

বড় রাস্তায় উঠতে শাই শাই করে যাচ্ছে একের পর এক যান,
অনেক চেষ্টা করেও নাম খুঁজে পেলাম না।
যাত্রী আছে অনেক, তারা সবাই অপেক্ষায় কেবল আমি বাদে।
পরক্ষণেই পেট মোটা এক দানব এসে শ্বাস ফেললো-
সবাইকে গিলে ফেলে, অভক্তি নিয়ে চলে যেতেই পুনরায় হাটছি।

এক উন্মুক্ত বিলের পাশে দাঁড়িয়ে এখন-
লোনা পানির বিল, মানুষের অন্তরের মতো তার বুক।
মাঝে মাঝে করুণার মতো গাঢ় কচুরিপানা।
এক ডুব দিতে ইচ্ছে করে- লাফিয়ে পড়ি তাতে।
উদর উগলে ফেলো দিলো আমায়, তীব্র অরুচির অপমানে পুনরায় হাটছি।

আমার সম্মুখে এখন আমি।
নীল ময়লা টি-শার্ট, এলোমেলো চুল, অধীর চাহনি, অস্পষ্ট বচন।
গালে অঙ্কুরিত ধান বীজের মতো ছোপ ছোপ লোনা চিহ্ন।
আপাত মস্তক বিধস্ত এবং বিবর্জিত মানুষের ছাপ-
কেউ কাউকে চিনছি না, আমাদের পা রক্তাক্ত,
মুখে করুণার বুলি, চোখে মায়ার আবেদন-
কোন কিছুই চিনতে পারছি না। এ দেহ, এ রক্তে ভেজা শরীর-
আমার না, ভয়ে বুক চেপে আসছে। আমাকে ফেলে আমি-
পুনরায় হাটা বাদ দিয়ে এবার দৌড়াচ্ছি।


শনিবার,
১ আষাঢ় ১৪৩১ | ১৫ জুন ২০২৪
নারায়ণগঞ্জ।