(এক)
প্রথম যবে লিখেছিলেম একটি কবিতা
বন্ধুরা তা শুনে বলে, “ কী লিখেছিস ক মিতা ”।
হরষের জোয়ারে নাচি আমি তা থৈ,
পাঠ করি কাব্যখানি রেখে সিটে খাতা বই।
হৃদয়ের যত আবেগ দিয়ে পাঠকরি বিশেষ ভঙিতে
মুগ্ধ হয় ওরা আমার ছন্দ, সঙীতে ।
বাহ বাহ দেয় মোরে, উচ্চ কলরবে,
মনে মনে ফুলি আমি গৌরবে।
বন্ধুরা কেউ ভালবেসে ডাকে কবি,
কেউ ভেংচি কেটে বলে, পাগল হুজুগের সবই।
মন যা চাইছে তাই ও লিখছে ধানাই পানাই যা-তা ,
কাব্য নয়তো ছাই সব, ওর চৌদ্দগুষ্টির মাথা।
বলি মুচকি হেসে, কিবা যায় আসে,
পাছে লোকের ফালতু পরিহাসে।
পায়ে পিসে মাড়ায়ে সবার সব কিছু ,
বায়ুতে উড়াই সবই, ফিরে না চাই পিছু।
দুই
একদা বিরতী শেষে এসে ক্লাস রুমে
দেখি এলো মেলো বই গুলো, দুটি লোটানো ভুমে
ঝেড়ে মুছে বক্ষেতুলি, করি সেলাম চুমি,
এক বন্ধুকে ডেকে বলি, কে করেছে এসব জান কি তুমি ?
ক্ষোভে, রাগে, অগ্নিসম তপ্ত আমার মাথা,
পাইনে খুঁজে শুধু আমার কাব্য লেখার খাতা।
খুঁজে সারা রুমময় সবার সব কিছু,
ব্যর্থ হয়ে বসে ভাবি, মাথা করে নিচু।
স্যার আসেন কেলাশে জোড়া বেত হাতে,
বালিকাগণ দলবেধে আসে তাঁর সাথে।
দাড়ায় সবে স্ব-শ্রদ্ধায় স্যারের সম্মানে,
আমি শুধু ভাবতে থাকি বসে আনমনে।
মহা রাগী স্যার ত্যেজী আমার সামনে এসে
দু’বাহুতে বেত হাকান সর্ব শক্তি কষে,
ফুলে ওঠে বাহু দুটি, বেতের আঘাতে
ধলতে থাকি আমি নিরবে দু’হাতে ।
দেইনি সম্মান দাড়ায়ে স্যারকে
এর চে’ বেয়াদব হতে পারে আর কে ?
টেবিল চাপরে স্যার যখন ধমকায়
ভয়ে জড়োসরো সবার পিলে চমকায় ।
চলে গেলে স্যার বন্ধু জাহিদ এসে কয়,
দেখেছি বিরতীর কালে আমি আর জয়-
রুনা শিলা রিতা, এসেছিল এথা আজ
নিশ্চিত বলা যায় এটা ওদেরই কাজ।
উত্তেজিত ইউসুফ আলি কেলাশ ক্যাপটেন,
দাড়ায়ে হুংকার ছাড়ে, তার খুলে যায় হাপ্প্যান১
দু’হাতে প্যান্ট ধরে, নাক টেনে বলে সে,
দেখে নেব এবারে, ওদের স্পর্দা কত হে !
ওদেরকে ডেকে সে সাফ সাফ বলে দেয়,
কাল যদি পাই খাতা, তবে কারো নেই ভয়।
নয়তো কে করেছে এ কাজ জানি সব সত্য,
সাক্ষ্য প্রমাণ সবই আছে, আছে সব রকম তথ্য।
বাসায় বাড়িত গিয়ে করা হবে নালিশ
ক্লাসে স্যারকে বলে দেয়াবো পালিশ২ ।
বুঝবে তখন ঠিক টের পাবে মজা
দেয়া হবে চোরেদের উচিৎ সাঁজা ।
পরদিন বিরতীতে চোরেদের দল,
খাতটা রেখে দেয় যেথা ছিল গত কাল।
মনে আমার মহা খুশি ফিরে পেয়ে খাতা
ভুলে যাই অতীতের সকল দুঃখ-ব্যথা।
( তিন )
এক ছুটির দিনে সকাল বেলা
পড়ার ঘরে, পড়ার ছলে করছি হেলা।
পড়ছি গল্পের বই, পাঠ্য বইয়ের নিচে রাখি
মাঝে মাঝে চেয়ে দেখি মা আসছেন না-কি !
বারান্দায় বসেন মা নিয়ে নকশী কাঁথা,
ক্ষানিক পরে ডেকে বলেন, কী করছিস যা-তা।
যখন দেখতে আসেন মা পড়ছি কি না,
অমনি বই নিয়ে ভাব করি যেন লক্ষ্মি সোনা।
সহসা আসে রুনা বেড়াতে গাঁও
ভয়ে কেঁপে ওঠে শুনে মোদের কুকুরের রাও
অভয় দিয়ে মা খাতির করেন, নেন মোর খোঁজ,
ক্লাসে কি পাড়ি দিতে পড়া, প্রতি রোজ ।
বলে রুনা, কি হবে চাচি পাড়লেই বা পড়া ওর
কেলাশ রুমে ওর এমন ভাব, যেন আস্ত এক চোর।
ফেরার পথে কারো সাথে নেই কথা, নাহি চায় পিছু
হ্যাবলা কান্ত ছেলে, চলে মাথা করে নিচু ।
এতটা সোজা হলে কী আর এ যুগে চলে,
দেখিনি কোথাও আর এমন বোকা সোকা ছেলে।
চালাক চতুর হলেও আজকাল মিলে না’ক ঠাঁই
তোমার হ্যাবলা কান্ত ছেলের কী যে হবে গতি-
ভাব দেখি তাই !
মৃদু হেসে বলেন মা ও লাজুক একটু বটে
এখনো হলো না, আর যে কবে হবে বুদ্ধি ওর ঘটে।
এত বড় হল তবু ওর বোকা সোকা ভাব
কী জানি বাপু এ মোর কোন কালের পাপ।
(চার )
আমি ফুসতে থাকি রাগে, দেখে সাহস ওর
আমার খাতা চুরি করে আবার আমায় বলে চোর,
উচিৎ জবাব দিতে হবে এর কাব্যের ছন্দেই
নাওয়া খাওয়া ছেড়ে এবার লেখার প্রতি মন দেই।
লিখি Ñ “ভাল লোকের কটু কথা মেনে নেয়া যায়
চোরের মুখে চোর অপবাদ শোভা নাহি পায়,
চোর সকলে চুরি করে অর্থ কড়ি টাকা
আবার কেউ চুরি করে কাব্য লেখার খাতা।
একজনেতে চুরি করে দু’জন তার সাথে রয়
তারা আবার মুখ তুইল্যা বড় বড় কথা কয়,
চুরি কইরা ধরা পইরা তাতেও যদি লাজ না হয়
লাজ হবে না কভু তাদের লাথি ও জুতা ঝাটায়।”
শুনে বন্ধুরা মোর প্রতিবাদের রেশ
বালে, বাহ বাহ খুব হয়েছে বেশ
পাঠ করি যবে কাব্য খানি সাপ্তাহিক জলসায়
লজ্জায় ক্ষোভে যেন ওদের মুখ জ্বলসায়।
[পাঁচ]
কদিন পরে তার, চিরকুট দিয়ে রুনা বলে রবিরে
এটা দিও ভাই তোমাদের বন্ধু নব্য কবিরে,
রবি এসে উল্ল¬াসে চিরকুট দিয়ে কয় গুরু,
এবার বেশ জমবে খেলা, সবেইতো শুরু
লেখা সেই চিরকুটে শোন হে কবি ভাই
তোমরা দাও ঝাটা জুতা মোদের সে স্বভাব নাই
মোদের ক্ষোভ নেই, রাগ নেই, নেই কোন ভয়
ভালবাসা দিয়ে করতে পারি বিশ্বজগৎ জয়।
সেই সাথে লেখা ছিল ছোট একটি কবিতা.
পাঠকরে দেখি আমার লেখার হুবহু নকল সবই তা।
ডেকে বলি, কই গেলি দেখে যারে রবি,
আমার লেখা নকল করে হতে চায় কবি।
কবি হবি হ, তবে কেন লেখা চুরি ?
এক বন্ধু বলে, এবার কিছু রচ ভাই এই ইস্যু ধরি।
জলসায় পাঠ করে দাও ওদের মুখে চুন
জেনে যাক সকলে ওদের যে কত গুন !
লেখি তবেÑ‘ বন্ধু সবে হতে চাও কবি
অন্যের লেখা লিখে উল্টে পাল্টে সবই
পরের লেখা নিজের বলে গর্বে ফুলাও বুক
কবি হবে নাক কভু, লোকে দেবে মুখে থুক !
মন দিয়ে পড় ভাই, হরেক রকম বই ,
মেধা দিয়ে লেখ তাই নিজের মতই
কথা চুরি, লেখা চুরি যা কিছু শেখ
মেকি সবই ফঁকি একটু ভেবে দেখ।
এরপর প্রতিবার জলসার আসরে
আহত করি ওদের কাব্যের আঁচরে
ক্ষোভে ফাটে রুনারা আটতে থাকে ফন্দি
কী ভাবে করতে ওরা আমায় লাগাম বন্দি।
গাঁও ছাড়া করতে আমায় কত না কি রটে
লোকে কানা কানি করে বলে কিছু না কিছু বটে ।
নানা ভাবে ছোড়ে ওরা প্রতিশোধের বান
ছিদ্র হতে থাকে তাতে আমার এ প্রাণ।
চট্টগ্রাম - ঢাকা - মংলা- ধাওয়া, ভান্ডারিয়া, পিরোজপুর যাত্রাপথে
ফেব্র“য়ারী ২০১২ ইং।