[ক]
হিরা-মতি হাঁটত যখন গুটি গুটি পায়,
মনটা ছিল খেলার প্রতি সারাটা বেলায় ।
বিকেল হলে আঙিনাতে করত ছোটা ছুটি,
বৌ-ছি, কানামাছি, খেলত ওরা জুটি।
সেই যে খেলার সাথি ওরা খেলত একই সঙে,
বন-ফুলের কুড়িঁ দিয়ে সাজত হিরা অঙ্গে।
বৌ-পুতুলের বিয়ে দিতো বর-পুতুলের সনে,
মতির’র ছিল বর-পুতুলটা হিরা’র ছিল কনে।
মাটি দিয়ে করত তৈরি ওদের খেলাঘর,
সেইখানেতে রাখত ওদের পুতুল কনে-বর।
মিছে মিছি চরত গাড়ি বসতো দোকান পাটে,
মিছে মিছি রাঁধত হিরা মতি যেত হাটে।
যখন ওদের খেলনা নিয়ে হ’ত ভাগাভাগি,
হিরা’র সাথে কতই মতি’র হ’ত রাগারাগি।
আড়ি আড়ি বলে হিরা শেষে যেত চলি,
‘তোমার সাথে নেই’ক কথা’ এ কথাটা বলি।
খনিক পরে আবার ওদের আড়ি যেত চলি,
ডাকত হিরা, “এসো মতি, আমরা দু’জন খেলি”।
এমনি করে কাটত ওদের দিনের পরে দিন,
হিরা-মতি’র মালাখানি গাঁথা সুতাহীন।
[খ]
শৈশব হ’তে কৈশরেতে ফেল্ল যখন পা,
হিরা’র সাথে মিশতে বারণ করল মতি’র মা।
ওদের মাঝে হ’ত যখন দেখা বারে বারে,
চার চোখেতে চোখাচোখি হ’ত আড়ে আড়ে।
ওদের মনের যত কথা থাকত জমে মনে,
আর হ’ল না বলা কথা একে অন্যের সনে।
লিখল হিরা মনের কথা গোটা কয়েক ছত্র,
চুপি দিল মতি’র হাতে ছোট্ট একটি পত্র।
সেই হ’তে লিখন লিখে ওরা কথা কয়,
রাতাধাঁরে করত দেখা যদি দেখে মায়।
[গ]
দিনের পরে দিন কেটে যায় মাসের পরে মাস,
হঠাৎ একদিন এ কি হ’ল ওদের সর্বনাশ!
ঝড় এলো, ঝঞ্ঝা এলো, ওদের বাঁধন ঘিরে,
তাইতো মতি হারিয়ে গেল হৃদয় বাঁধন ছিঁড়ে।
সাঙ হ’ল হিরা-মতি’র পত্র লেখা লেখি,
আর না হ’ল আড়ে আড়ে ওদের চোখা-চোখি।
সাঙ হ’ল হিরা-মতি’র মালাখানি গাঁথা,
আর কি হবে হৃদয় খুলে বলা মনের কথা ?
দু’ প্রান্তে কাঁদে দু’টি হিরা-মতি’র দানা,
আর কি হবে গাঁথা মালা? নেই তা ওদের জানা ।
মংলা, বাগেরহাট;
২৫ জুলাই, ২০০৬ খ্রিঃ
[ চন্দ্র প্রিয়া ]