আসসালামু আলাইকুম !

সবাই কেমন আছেন ?
চলুন যে বিষয় কথা বলতে চাচ্ছি সরাসরি সেই বিষয়ে আলোচনা শুরু করি।
মনে করুন, পৃথিবীতে এমন একটা মাঠ আছে যেখানে প্রতিদিন হীরা জন্মায়। পৃথিবীবাসী অবলীলায় সেখান থেকে সানন্দে হীরা কুড়াতে পারে। হঠাৎ করে দেখা গেল সেখানে পাথর এবং আবর্জনা জমতে শুরু করেছে এবং দিনদিন তা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন জন্ম নেওয়া হীরাগুলো সেই পাথর এবং আবর্জনার নিচে চাপা পড়ায় হীরা-প্রেমিকরা সব হীরা আগের মত কুড়িয়ে নিতে পারছে না। কারণ এক টুকরা হীরা পেতে তাকে অনেক পাথর ও আবর্জনা মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে হীরার টুকরা পেতে হয়।
ঠিক একইভাবে আমাদের লেখকের সংখ্যা বাড়লেও দুঃখের বিষয় এই যে কবিদের চেয়ে অকবিদের সংখ্যা অনেক বেশি।
তাহলে কি করা যায়?
অকবিদেরকে ফেলে দিবেন? হয়তো তাদের মাঝেই লুকিয়ে আছে কোনো মহাকবি।
তাই আমরা যারা লেখক আছি, আমাদেরকে নিজের লেখা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং আরো ভেবেচিন্তে লিখতে হবে। আমাদের লেখা যেন এক একটা মুক্তাদানা হয়। কবিতা লেখার নিয়ম কানুন জানতে হবে (পৃথিবীতে মাঙ্গলিক কোন কিছুই নিয়ম-কানুনের উর্ধ্বে নয়)।
আবার অনেক নবীন লেখক আছেন যারা বই প্রকাশের জন্য খুব উদগ্রীব হয়ে আছেন অথচ লেখার মান কেমন, সেটা নিয়ে মোটেই ভাবনা নেই।
বই প্রকাশ করতে পারলেই আপনি ভাল মাপের কবি হয়ে গেলেন এমনটা ভাবা সঠিক নয়।
(কালের কবলে পড়ে, অকবিরা যাবে ঝরে)

পৃথিবীতে প্রত্যেকটা জিনিসের কিছু নিয়ম কানুন আছে, যেগুলোর নিয়ম কানুন নেই সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।

কবিতা লেখারও কিছু নিয়ম-কানুন আছে। হোক সেটা অক্ষরবৃত্ত /মাত্রাবৃত্ত/ স্বরবৃত্ত অথবা বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রি-ভার্স /মুক্ত ছন্দ/গদ্য ছন্দ/ গদ্য কবিতা এছাড়াও একে টানা গদ্য ছন্দ ও বলা যায়। উদাহরণঃ

আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ। এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ পুরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি- তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। আমি আক্রোশে হেসে উঠি না, আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি, মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে; খাঁটি অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে- (ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!) --(আমি কিরকম ভাবে বেঁচে আছি – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)

কি চমৎকার লিখলেন কবি! অবাক হয়ে যাই তাদের লেখা দেখে।

ফ্রি ভার্স / গদ্য ছন্দকে দুই প্যাটার্নে লেখা যায় :

ক) কোনোরূপ অন্ত্যমিল না রেখে কবিতার মতো, এবং
খ) পুরোটাই একটা গদ্যের মতো করে ।

অনেক নবীন লেখকরা মনে করেন গদ্য কবিতায় ছন্দ -টন্দ এসবের দরকার নেই। তাদেরকে বলবো ছন্দ ছাড়া কবিতা হয় না। কবিতায় ছন্দ ছিল, আছে এবং থাকবে। কেবল অকবিরা তা উপলব্ধি করতে পারে না।
যাই হোক,
কবিতা যেভাবে গদ্যের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে, তাতে একদিন রবীন্দ্রনাথ কিংবা নজরুল ইসলামের অনেক গদ্য বা প্রবন্ধকে কবিতা মনে হবে।
তাতে আর কী যায় আসে? যা লেখা হলো তা যদি নিজের গুণ ও গুরুত্বে কালের পাতায় ঠাঁই করে নিতে পারে। তাহলে সেটাই হবে উৎকৃষ্ট কবিতা মুক্ত ছন্দ বা ফ্রি-ভার্স।

ফ্রি-ভার্স বা গদ্য ছন্দ সম্পর্কে যদি আলোচনা চান, তাহলে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।