বৃদ্ধা

পুনর্ভবা সেতুর ফুটপাতের মাথায়,
এই বৃদ্ধাকে অনেক দিন ধরে দেখছি-
আধমরা অবস্থায়।
খোলা আকাশ ছাদ আর শয্যা ধরায়।
সম্বল একটা পোটলা,
মরা ফুলের মালা,
কিছু নুড়ি পাথর।
মাঝে মধ্যে পাশে দেখা যেত-
দু- চারটা শুকনো শীর্ণ শাখা ও শিকড়।
ভিক্ষা করতে কোন দিন দেখি নি।
কখনো দখল করা ফুটপাতও ছাড়েনি ।
যদিও ওটা কেবল ওরই আবাসস্থল,
অন্যদের প্রয়োজন শুধু করতে চলাচল।
আসা যাওয়ার পথে দৃষ্টিগোচর হতো ।
কখনো শুয়ে কখনো বসে থাকত।
আমার ভালো মানুষ হওয়ার লোভী আকাঙ্ক্ষা-
বলল,"ওকে একটু দয়া দেখা।
যদি বাড়ে পূণ্যবল,
হবে পরপারের সম্বল।"
তাই পকেটে দু- চার টাকা যা খুচরো থাকতো-
দিতাম ওকে। হাত পেতে নিতো।
পরশু সহকর্মীকে কথায় কথায়
শুধালাম:"এই বৃদ্ধা কি খায়?
ও কি ভিক্ষা চায়?"
সহকর্মী জানায়:"ও তো পাগলী রে!
ভিক্ষার টাকায় কিছু কিনবে কি করে!
মন করে যদি সাহায্য করার,
কিনে দিস্ ওকে খাদ্য-খাবার।"
তাই কাল বিস্কুটের এক প্যাকেট নিয়ে,
দাঁড়ালাম তার পাশে গিয়ে।
দাঁড়িয়ে দেখি সে বৃদ্ধাটি
শুয়ে আছে  মুখ ঘুরিয়ে।
বিস্কুটের প্যাকেট দিয়ে দিলাম আলতো টোকা,
করলো এমন, লাগলো যেন চারশো চল্লিশ ঝাট্কা।
অবাক হলেও বুঝলাম এটা অস্বাভাবিক নয়,
এখানে তো ওকে কারো ছোঁয়ার কথা নয়!
যাই হোক, আমি বিস্কুট দিয়ে চলে গেলাম কাজে,
আজকে যা ঘটল সেটাই মনে বাজে।
সন্ধ্যা বেলা বন্ধুর সাথে ও পথ দিয়েই যাচ্ছি,
পেরিয়ে তাকে মনে পড়ল, "কি যেন ভুলে যাচ্ছি?"
দাঁড় করিয়ে বন্ধুকে এক চা-স্টলে গিয়ে,
কিছু বিস্কুট কিনে গেলাম ওদিকে এগিয়ে ।
দেখি প্যাকেটে করে খাচ্ছে সে ভুজিয়া আর ছানা,
আজ সে আমার বিস্কুট নিতে মোটেও রাজি না ।
কত করে বললাম, "রেখে দাও, কাল সকালে খেও।"
"নেহি চাহিয়ে" বলে, কথা বলল না একটিও।
হঠাৎ যেন বুকের ভেতর বরফ জমালো,
কে যেন কানে বলছে, "কে খাবে-
তোর শুকনো বিস্কুট গুলো ।
এখনও এগুলো হাতে নিয়ে ভাবছি বসে ভাই,
কড়ি দিয়ে কেনা গরীবের ধনের কোনো মূল্যই নাই।
#রকি
19-06-16 11:48PM