আমি কবি।
তাই কবিতা লিখি।
কবিতা বলি।
আমার দেহজমিন জুড়ে
কবিতার রাশি-পঙক্তি।
দেহের ভাঁজে-ভাঁজে,
শিরায়-উপশিরায়
কবিতার দৌরাত্ম্য।
আঘাত কোরো না ;
বেরিয়ে আসবে সব।
তরমুজ পেট জুড়ে
কবিতা - বিশুদ্ধ কবিতা।
কালো বীজগুলো এক একটি বর্ণমালা।
আর নারকেল মাথা
কবিতার স্টোর হাউস।
স্ট্রবেরী হৃদয় থেকে
যা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে।
অর্ধবৃত্তাকার চালকুমড়োর মত
মগজ খোলসে খুনসুটি করে;
গড়ে পংক্তিমালা।
আমি কবি
তাই কবিতা লিখি।
কবিতা বলি।
রক্তে আমার কবিতা
পদ্মা-মেঘনার মত বহমান;
হিংস্র শ্বাপদের নেয় ছুটে চলে।
আমার লিখনী নজরুল-
শত যুগ ধরে
যে বিদ্রোহ করতে জানে।
দ্রোহের আগুনে জ্বলে,
গাহে সাম্যের গান।
আমার লিখনীর রবিঠাকুর-
বিকেলের সোনারোদে
প্রেয়সীকে যে ভালবাসতে জানে।
আমার হৃদয়
বায়ান্ন-একুশ-একাত্তর;
সালাম-বরকত-শফিউর।
যারা জানে জীবনের মানে,
জেগে ওঠে সময়ের প্রয়োজনে।
আঘাত কোরো না;
বেরিয়ে আসবে সব।
তীক্ষ্ণ হাতে সূঁচালো কলম
লিখবে কবিতা।
অজস্র কবিতা।
ছোট্ট শিশুর বাড়ি বানানোর মত করে
এক একটি পংক্তি সাজবে;
গড়ে উঠবে কবিতা।
তুমি ধরা পড়ে যাবে;
নিহত লাশের মত সবাই জানবে
এই কিছুক্ষণ আগেও
তোমার সম্মান ছিল।
উঠতে-বসতে লোকের সালাম ঠুকত।
কিন্তু! এখন আর নেই।
যেমনটা নেই নিথর লাশে প্রাণ।
রুগ্ন ভেবেছ;
ঝিঙে হাত তোমার অট্টালিকায়
আঘাত হানতে পারে।
হাসছো! এও কি করে হয়! তাই তো!
মনে পড়ে?
মোহাম্মদ-ক্ষুদিরাম-নূর হোসেন
কিংবা নজরুল-মুজিব-অমর্ত্য সেন।
এরা সময়ের কবি;
হাজারো রাজার ভিত নড়েছে
এদের কণ্ঠস্বরে।
আমি কবি।
তাই কবিতা লিখি।
কবিতা বলি।
হৃদয় গহীনে লুকিয়ে থাকা
শব্দগুলো এক-দুই-তিন
করে বেরিয়ে আসবে।
গড়বে বিদ্রোহের কবিতা।
নড়ে উঠবে তোমার ভিত,
টলবে তোমার শাহীপ্রাসাদ,
রাজ সিংহাসন।
স্থির আমার হাতগুলো
তোমার দিকে এগিয়ে যাবে।
মইরম ফুলের মত ফুটবে
আমার রোগা আঙুলগুলো।
তীক্ষ্ণ থাবা খুলে চেপে ধরবে
তোমার টুটি।
উত্থান ছেড়ে পতন,
অচেতন-চিতে চেতন,
উড়বে মানব বিজয় কেতন।
শাসন-শোষণ-নিপীড়ন
আয়েশে ধুলায় লুটাবে।
অবহেলিত নারীর গায়ে
উঠবে রঙিন বসন।
ক্ষুধাকাতর শিশুটির মুখে
এক চিলতে হাসি ফুটবে
ভোরের ফোটা গোলাপের মত।
আমি কবি
আমি ধ্বংসিতে পারি
তোমাদের গড়া প্রাসাদসম ভিত।
আমি গড়ি জীবনের বাস্তবতা
এ বিশ্ব-বিধাত্রীর।
তাই কবিতা লিখি।
কবিতা বলি।