লিখিনি বলে ভেবোনা লিখব না।
ভাসানীর মতো মোনাজাতে সব বলে দেব।
মুজিবের তর্জনী, শেরে বাংলার গর্জনে
জানান দেবো আমার অস্তিত্ব।
আমার জেল হবে, ফাঁস হবে, ১৪৪ ধারা দেবে।
তবুও আমি বুক চিতিয়ে মেলে ধরবো
বাহান্নর ভাষা শহীদের মত।
নূর হোসেনের মতো উদাম গায়ে
পিচঢালা রাজপথে দাঁড়িয়ে বজ্রকন্ঠে বলব,
"গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক"।
আমি ক্ষুধার্ত চিতার মত
ওঁত পেতে থাকি রেস্তোরাঁয়, পার্টি প্যালেসে।
ভোর থেকে লাইনে দাঁড়াই
করোনা উপেক্ষা করে।
আমি সপ্তাহে শুক্রবার আসার
অধীর অপেক্ষায় থাকি।
চাতকের মত খুঁজি
একদল তরুণ, একটা পিকআপ ভ্যান।
উচ্চবিত্তের কাছে হাত পাততে পারিনা হররোজ।
আমার সংকোচ হয়;
আমি দুমড়ে-মুচড়ে-কুকড়ে যাই
বিবেকের দংশনে।
আমি লজ্জিত হই,হতে হয়।
কারণ- আমার অপরাধ আমি মধ্যবিত্ত।
আমি মুখ ফসকে বলতে পারিনা,
লিখতে পারি না, শুধাতে পারিনা আমার হৃদয়কাব্য।
দেখাতে পারি না ভিসুভিয়াসের আগ্নেয়গিরির মত
হৃদয়গহীনে লাভার উদগীরণ।
আমার কোলে থাকা শিশুর কান্না
তোমরা কখনো শুনতে পাওনা।
কচকচে নোটে তুমি ল্যাকটো নিলেও
আমি শুধু নিষ্পলক তাকিয়ে
মাসিক বেতনের হিসাব মেলাই।
তুমি সন্তান নিয়ে ভর্তিযুদ্ধে থাকলেও
আমায় ভাবতে হয় আমি পাঠাতে পারব তো?
তোমার মত করে দামী নেকলেস আর গহনার বাক্স নিয়ে
আমি দরজায় এসে দাঁড়াতে পারি না বলে
আমায় শুনতে হয় "আনরোমান্টিক"।
মাসে মাসে মায়ের ওষুধের খরচ পাঠাতে পারিনা বলে
শুনতে হয় আমি বউয়ের নির্দেশে চলি।
বাবা মনঃক্ষুণ্ণ আমার মত
কর্পদকহীন এক ছেলের জন্ম দিয়ে।
জানো- আমার শরীরে তখন খুন চেপে ওঠে।
কিন্তু আমি খুন করতে পারিনা,
আমি চুরি করতে পারি না, প্রতারণা জানিনা।
আমি জানি দিন শেষে আমায় খেতে হবে।
আমার সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে হবে।
আমার মা, বাবা, স্ত্রী সবাইকে খুশি রাখতে হবে।
আমাকে কাজ করতে হবে।
আমি তাই চাই, কাজ চাই, দু'মুঠো ভাত চাই।
চিনি চাই, পেঁয়াজ চাই,
স্বেচ্ছাসেবকের দেয়া উপহার চাই,
উচ্চবিত্ত তোমার করুণা চাই,
তোমার অপচয়ের খাবারে ভাগ চাই,
দিন শেষে অর্ধাঙ্গীর ভালবাসার পরশ চাই,
আমার রাজ্যকে কোলে নিয়ে ভুবনভোলানো হাসি চাই।
ব্যস ! এটুকুই।
ওসব অর্থ-সম্পদ, বিশ্বায়ন-উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশন,
কূটনীতি, রাজনীতি, পৌরনীতি
আর নিত্যকার ভূগোলের গল্প ফেঁদে
তোমরা আয়েশে লুটাও।
রাস্ট্র আমি আমার অধিকার চাই।
দেবে? তবে দাও।
নতুবা আমি কিছুই না পারলে
আত্মবিসর্জনের সেই অষ্টাদশী নারী
কিংবা ভরা যৌবনের জোয়ানের
চিরপ্রস্থানে লেখা চিরকুটে লিখে যাব
আমার চলে যাওয়ার উপাখ্যান।
প্রকাশকালঃ
প্রথম প্রকাশ:
ফাল্গুন ০৯, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
২২.০২.২০২২ ইং