ক্লদিয়া
বয়সের ট্রাম ছুটে চলেছে
কুড়ি পেরিয়ে একুশে।
ছিমছাম গড়ন, গোলগাল মুখ
অনেকটা চাঁদমুখের মতন।
ডাগর চাহনি-
এলোচুল পেরিয়ে চোখজোড়ায়
ভরা ক্লান্তি কাটিয়ে আত্মবিশ্বাসের ছাপ।
মেয়েদের একুশ
ভরা যৌবনার।
দৃঢ়তার - আত্মোপলব্ধির।
কুড়ি পেরিয়েই নাম লিখিয়ে ফেলা
আত্মবিশ্বাসীর খাতায়।
তারপর -
শুধু ছুটে চলা।
রেসের ঘোড়া যেমন
ছুটে চলে ময়দানে।
একুশে পা দেয়া ক্লদিয়াও
ছুটে চলে দিন-রাত
ক্লান্তিকে ছুটি দিয়ে।
মেষের পাল তাড়ায়ে
রাখাল যেমন
কুসুম আলো ফুটতেই ছুটে চলে।
ক্লদিয়াও।
তিন ভাইবোনের বড় ক্লদিয়াকে
ভাবতে হয় অনেক কিছু।
পঞ্চাশোর্ধ বাবার রুগ্ন দেহে
অপারেশনে জোড়া লাগানো
হাড়-পাঁজর,
মায়ের গাইনি, ভাইয়ের থ্যালাসেমিয়া,
সিমিলার ফরেন চাইল্ড
ছোট ভাইটির মুটিয়ে যাওয়া।
পড়ালেখা, পরিবেশ, ব্যাংক লোন, কিস্তি,
বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি
কোন কিছুই বাদ যায় না চিন্তার বাস্কেটে।
বর রেহানও থাকে ভাবনায়।
জবলেস লাইফ, আনসিকিউরড,
ডিপ্রেসড, পাথরচাপা বুকের কষ্টে
যোগ করা মাইগ্রেন।
অলওয়েজ আনহ্যাপি বরটাকেও
সহাস্যে সামলাতে হয় তাকে।
ও! আর নিজের পড়াশোনা!
গভর্নমেন্ট ভার্সিটি।
বছরে দুবার চেহারা দেখালেই হল
ওতেই চলে যায় বছরটা।
তাই ক্লদিয়াও
খুব একটা মাড়ায় না ও পথ।
অ্যাসাইনমেন্ট বছরে দুবার,
আর এক্সাম হল।
এই যা! এভাবেই চলছে বছর দুয়েক।
বাবার অপারেশন শেষ করে
ভেবেছিল খেয়াল দেবে মায়ের দিকে।
নিয়তির টানে
খেয়ালের সুতোয় টান পড়েছে।
এক দু তিন করে
টানা তিন পেরিয়ে চার মাস,
জলখাবার কোনটাই গলায়
ঠিকমতো নামছেনা ভাইটার।
টেস্ট রিপোর্ট বলেছে
থ্যালাসেমিয়া ডেনজার লেভেল।
চিকিৎসা মোটা অংকের টাকা
নো সিকিউরিটি।
মায়ের গাইনি।
বয়সের সাথে সাথে
এক,দুই,তিন করে বেড়েছে
অসুখের পাতা।
বিয়ের আগে অ্যাব্রড্ এ
চলে যাওয়া বয়ফ্রেন্ড।
রক্ত বিক্রির টাকায়
যার মিলেছে চিকিৎসা।
কিন্তু সব ভুলে ছেড়ে গেছে
ক্লদিয়াকে।
রেহানও প্রতিনিয়ত ভাবায়।
ছেড়ে আসা গার্লফ্রেন্ড
চলে আসে নিয়তর গল্পে।
সেই নিয়ে চলে বাকযুদ্ধ,
কখনো হাতাহাতিতে গড়ায়।
তবুও সে গার্লফ্রেন্ড -
বাঁশপাতার ফাঁকে যেমন চাঁদ উঁকি দেয়
তেমনি উঁকি দেয় ক্ষণে-পলকে।
রেহানের সাথে
সম্পর্কে গড়া গার্লফ্রেন্ড
সময়ের ব্যবধানে
কনসিভড্,
তারপর অ্যাব(র্)'শন।
সবকিছুই হয়ে ওঠে বাকযুদ্ধের অনুষঙ্গ।
ক্লদিয়া জানলেও চুপসে সামলে নেয়।
রেহানকে বড় ভালোবাসে সে।
যদিও ওরা ভালো নেই,
তবুও নিত্যকার পথচলায়
ভালো থাকার সেরা অভিনয়ে
মুগ্ধ করে সম্মুখ দর্শক।
কেউ লাভ বার্ড, টুইংকেল,নাইটিংগেল,
জোড়া কবুতরও শোনে ওরা।
শত কিছুর পরও ক্লদিয়া
শক্ত হাতে সব সামলে নেয়।
যেন ক্রিমিয়ার যুদ্ধে
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।
প্রকাশকাল :
০৪ কার্তিক, ১৪২৭
২০ অক্টোবর, ২০২০