১৬ জানুয়ারি বিচারের পর নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। কবিকে অলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে যখন বন্দীজীবন কাটাচ্ছিলেন তখন (১৯২৩ সালের ২২ জানুয়ারি) কবি রবিন্দ্রনাথ তার বসন্ত গীত্যনাট্য গ্রন্থটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন। এতে নজরুল বিশেষ উল্লাসিত হন। এই আনন্দে জেলে বসে "আজি সুষ্টি সুখের উল্লাসে" কবিতাটি রচনা করেন। এরপর কবি নজরুল ১৯২৫ সালের জাতীয় কংগ্রেসের প্রদেশিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তারপর দলের একনিষ্ঠ সেবক হয়ে তিনি মেদিনিপুর, হুগলি, কুমিল্লা ও ফরিদপুরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯২৫ সালের মে মাসে ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধি ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের উপস্থিতিতে স্বরচিত স্বদেশি গান। "ঘোর রে ঘোর রে আমার সাধের চাকা ঘোর" পরিবেশন করেন। সে কবিতাটি ছিল তার রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। একই বছরে নজরুল শামসুদ্দীন হোসাইন, কুতুব উদ্দীন ও শ্রী হেমন্ত কুমার সরকার প্রমুখ নেতৃবৃন্দভারতীয় জাতীয় মহাসমিতির অন্তর্গত মজদুর স্বরাজ সম্প্রদায় গঠন করেছিলেন। এবং ১৯২৫ সালের ডিসেম্ববর মাসে এ সমিতির মুখপাত্র 'সাপ্তাহিক লাঙ্গল' পত্রিকার প্রধান পরিচালকও হয়েছিলেন তিনি। সমিতির ঘোষণা পত্র কবির স্বাক্ষরে এবং ঠিকানায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছিল। ১৯২৬ সালে কৃষক শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে কৃষ্ণনগরে বঙ্গীয় প্রজা সম্মেলনে এ দলের নাম পরিবর্তন করে "বঙ্গীয় কৃষক শ্রমিক দল" করা হয়েছিল।
উল্লেখিত সময়সমূহে কবি নজরুল সরাসরি সবসময় রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। সাথে সাথে নবযুগ, ধুমকেতু, লাঙ্গল ও গণবাণী পত্রিকাসমূহের মাধ্যমে ভারতবর্ষবাসী তৎকালীন ৩০ কোটি মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য জাগিয়ে তোলেন। কবি নজরুল এ সকল পত্রিকার সম্পাদকীয় ও অন্যান্য প্রবন্ধগুলোতে ইংরেজদের অত্যাচার, অবিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখেছেন। ভারতবর্ষকে স্বাধীন করা প্রয়োজন এ বিষয়টি নজরুলের লেখনীতে বারবার প্রকাশ পেয়েছিল। নজরুল তার পত্রিকাসমূহে ব্রিটিশ শাসক ও এদেশের দালালদের আঘাত করে, হুশিয়ার করে অনেক সম্পাদকীয় লিখেছেন। এ জন্য ব্রিটিশ সরকার নবযুগ ও ধুমকেতু পত্রিকা বাজেয়াপ্ত করেছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে সংবাদপত্র ও রাজনীতিতে নতুন এক ইতিহাস সুষ্টি করেছিলেন কবি নজরুল এবং তার পত্রিকা।