কবি নজরুল জীবনের শুরু থেকেই রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিলেন। তিনি একদিকে কবিতার মাধ্যমে পুজিঁবাদের কশাঘাতে বঞ্চিত মানুষের অধিকারের কথা বলতেন, অপরদিকে অধিকার আদোয়ের লক্ষ্যে রাজনৈতিক মাঠে সরব মেতে ছিলেন। ১৯২০ সাল থেকে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক আদর্শ ও তার দাবি প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিকতায় নিয়োজিত হন। ১৯২০ সালে মুজাফ্ফর আহমদের সাথে খেলাফত আন্দোলনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। তখন জুলাই মাসের ১২ তারিখে নবযুগ নামে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ঐ পত্রিকার মাধ্যমেই কবি নজরুল নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করেন। ঐ বছরই এই পত্রিকায় “মুহাজিরীন হত্যার জন্য দায়ী কে?” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেন। যার জন্য পত্রিকার জামানত বাজেয়াপ্ত হয় এবং কবি নজরুলের উপর পুলিশের নজরদারী শুরু হয়। সাংবাদিকতার মাধ্যমে তিনি তৎকালিন সামাজিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। ১৯২২ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসন তৎকালীন বাংলা সাহিত্যের উদীয়মান নক্ষত্র কবি নজরুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। অভিযোগ ছিল “আনন্দময়ীর আগমনে” কবিতার মাধ্যমে তিনি বিদ্রোহ ছড়িয়েছেন। এই রাজনৈতিক কবিতা প্রকাশিত হওয়ায় ৮ নভেম্বর ধুমকেতু পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর তার “যুগবাণী” গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একই দিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে কুমিল্লা থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারী নজরুল বিচারাধীন বন্দী হিসাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এক জবানবন্দী প্রদান করেন। চিফ প্রেসিডেন্সি মেজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে এই জবানবন্দী দিয়েছিলেন। তার এই জবানবন্দী বাংলা সাহিত্যে “রাজবন্দীর জবানবন্দী” নামে বিশেষ সাহিত্যিক সম্মান লাভ করেছে। এই জবানবন্দীতে কবি নজরুল বলেছেন- “আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজদ্রোহী। তাই আমি আজ রাজকারাগারে বন্দী এবং আমি রাজদ্বারে অভিযুক্ত। আমি কবি, আমি অপ্রকাশ সতকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা ভগবানের বাণী। সে বাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যদ্রোহী নয়। সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধুমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি-মশাল হয়ে অন্যায়-অত্যাচার দগ্ধ করবে”।

চলবে...