কোন ছোটতে শখ করে মা
বিয়ে দিল মোর সাথে,
ননদের ছেলে ভাল হবে গো
কভু পারে ফসকা'তে?
মেয়েটি ছিল হাপ প্যান্ট পরা,
খেলিতো পুতুল খেলা,
ছেলেটি তখন দস্তুর মত
যৌবন ঢেউ বেলা।।
অসম বিয়েরতত্ত্ব সাজায়ে,
অভিভাবকত্ব ফুটায়ে মায়ে
কত ভাল কাজ করিছে সমাজের
বাতাস লাগায়ে গায়ে।
বছর পাঁচেক না যেতে সময়,
খেতে পারে না কিছু,
পোয়াতি মেয়ের দশা দেখে
মায়ে মাথা করিছে নিচু।।
ছেলে হয়েছে তাই, খুশিতে বেজায়
আহ্লাদে গদ গদ,
মিষ্টি বিলায়ে রাখিয়াছে নাম
হরিধর শ্যামাপদ।।
আরো বছর খানি, চলে গেল জানি
ছেলেই হারালো বাবা,
মেয়ে হয়ে গেল স্বামী হারা আর
মায়ে হয়ে গেল হাবা।।
স্বামি হারা মেয়ে, ছেলেরে নিয়ে
দেখে শর্ষেরফুল চোখে
বিধবা মেয়ের মুখ খানি দেখে
বাক সরে না মায়ের মুখে।।
কি করিলাম হে দয়াময়,
মায়ে কয় মনে মনে,
কি করে মেয়ে রাখিবে যৌবন
ডুকরিছে বুক ক্ষণে ক্ষণে।।
মেয়েরে আবার পড়িতে পাঠাই
গ্রামের পাঠশালাতে,
বাঁকা চোখে সব তাকিয়ে থাকে কূট,
মরে মনের জ্বালাতে।।
এক ছেলের মা নাদুস নুদুস
দেখে ভরে দু-নয়ন,
গ্রামের কূট তজিবর ভাই
ছিল এ বিষয়ে বিচক্ষণ।।
যেন তেন করি পটায়ে পটায়ে
স্বামি হারার হরিল মন,
স্বামিহারা দেখে কত যে স্বপন
মিলিত হয় সংগোপন।।
কিছুদিন পর পাঠশালা হতে আসি
বিছানা লয় স্বামিহারা,
বমি করিয়া বিছানা ভাসাইছে
মায়ে না পাই কুল-কিনারা।।
এ কাজ তোর করিছে কেবা
ওরে ও হতভাগিনি?
কেমনে আমি দেখাইবো মুখ?
আর্তি মায়ের দিবা যামিনী।।
কত ঘটনা ঘটিয়া গেল এ নিয়ে
গ্রাম্য শালিস হয়ে,
স্বামিহারা কে করিল বিদায়
কূলটা আখ্যা দিয়ে।।
কত যে স্বপ্ন দেখেছিল চোখে
ব্যাথাতুর স্বামিহারা,
সমাজের বিষবৃক্ষের বীজে আজ
পংকিলতায় দিশেহারা।।
সহসা একদিন হঠাৎ প্রাতেঃ
স্বামিহারা নিরুদ্দেশ,
নদীর কিনারে লাশ ভাসিছে
খবর হইল সব দেশ।।
স্বামিহারার ছেলে সবার অন্তরালে
আগে গেল নদীর কিনারে,
রক্তের টান বড়ই বেগবান
দেখিল মনের মিনারে।।
লাশ টি যে তার গর্ভধারিনি হায়!
নিথর দেহ খানি,
দেখিয়া ছেলের আর্তনাদে
ভাঙ্গিছে আসমান খানি।।
মা, মাগো বলি আছাড়িয়া পড়ে,
স্বামিহারার আদরের ধন,
এ কূল ও কূল সব গেল তার,
মা যে প্রিয়জন।।
সমাজের কূলটা স্বামিহারা মেয়ে,
ছেলের কাছে দেবী,
সমাজ কি আজ নেবে দায়িত্ব?
ঐ সন্তানরে সেবি???