কবিতা লিখতে হলে(রম্য)(05-01-2019)
রণজিৎ মাইতি
--------------------
কাকের বাসায় কোকিলাকে ডিম পাড়তে দেখেছেন কখনও ? সেভাবেই আপনি একা একা অন্ধকার ঘরে চুপিচুপি ডিম পাড়ুন।সরি,করুন মা সরস্বতীর সাধনা।ভাতঘুম ভেঙ্গে গেলে কোলে তুলে নিন গিন্নিকে,মনে রাখবেন রমণে বিতস্পৃহ হলে কবিতা লেখা যায় না।হাঁ,রত্নাকর বাল্মীকির কথাই বলছি।ক্রোঞ্চ-ক্রোঞ্চীর রতিক্রিয়াই ছিলো প্রথম কাব্যের উৎসভুমি। সব রস ও রঙ আপনার প্রিয়,তবে সাদা রঙে ফোটান হংসমৈথুন।আগে গৃহ শান্তি,তারপর ভাবতরঙ্গে ভাসান মনপবন।তাছাড়া কবিতার 'ক'ও লিখতে পারবেন না ।
হাঁ,যে কথা বলছিলাম,কবিতা লেখার জন্যে থিওরি জ্ঞান খুব একটা কাজে লাগে না,হতে হবে প্রাক্টিক্যাল । থিওরি যেকোনো সময় পড়ে নিতে পারেন ।মাত্রাবৃত্ত,শব্দবৃত্ত,অক্ষরবৃত্ত,মুুুুক্তছন্দ,
অলঙ্কার,বানান বিধি, নত্ব-ষত্ব ইত্যাদি ইত্যাদি ।ওসব পেয়ে যাবেন নীরেনবাবুর 'কবিতার ক্লাস'এ।আমি জোর দিই প্রাক্টিক্যালের উপর।ইতিহাসের দিকে তাকালেই বুঝবেন সারা পৃথিবী জুড়ে অনেক প্রথিতযশা কবি পাবেন যাঁরা জীবনে স্কুলের গণ্ডি তো দূর ছায়াও মাড়াননি।শোনেননি লালনের নাম?রবিবাবুর কি কলেজ ইনভার্সিটির ডিগ্রি ছিলো?অধুনা এক কবিকে চিনি,কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য।যিনি মাধ্যমিকের গন্ডিও টপকাতে পারেননি অথচ অবিরাম লিখে চলছেন অন্য ধারার জীবনকাব্য।তছনছ করছেন কাব্যের প্রথাগত ধারা।
প্রাক্টিক্যাল জ্ঞানের উপর নির্ভর করবে কাব্য ও কবির ভবিতব্য।রক্ত ও মাংসের উপর যেমন জোর দেবেন তেমনই কল্পনার ডানায় ভর করে ভ্রমণ করবেন অন্ধিসন্ধি।
মাঝরাতে পদ্মাসনে বসে বৌকে তুলে নিন কোলে।কবিতা অতো সোজা ব্যপার নয়,যে রসসিন্ধুতে ডুবে থাকেন সুরেস্বর আপন খেয়ালে।সরস্বতী জ্ঞানে ফুটিয়ে তুলুন নান্দনিক মুদ্রা বিহঙ্গ।মাঝরাতে আপনার বেড রুমে ফুটে উঠেছে কোনারক ও অজন্তা ইলোরার ভাস্কর্য । এবার অপেক্ষা করুন,নিশ্চয়ই শুনতে পাবেন সেই দৈববাণী।ব্রহ্মার নাভিমূলে জন্ম নিচ্ছে মানসকন্যা।রমা,পদ্মাসনা ঠিক আপনার মতোই,আপনি বলেন পরমা লক্ষ্মী,আমি বলি জীবন্ত কবিতা ।
রাতে তাড়াতাড়ি ডিনার সেরে নিন।তারপর যান খোলা ছাদে।এই ছাদই আপনার ল্যাবরেটরি,মথুরা বৃন্দাবন গয়া কাশি।বুকে হাত দিয়ে প্রাণায়ামের ভঙ্গিতে ঝেড়ে কাশুন বিশেষ কৌশলে উদারা,মুদারা ও তারায়।তারাপীঠে গেলে বামাখ্যাপা,নদীয়ায় নিমাই সাজুন । পায়চারি করতে করতে আকাশে তাকান। শঙ্করাচার্যের মায়া,রামানুজের অদ্বৈতবাদ গুলে বানান বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি পুরিয়া।উপশম হোক ছাই না-ই হোক দাওয়াই হতে হবে দুর্বোধ্য ।অন্ধকারে মিশে উপলব্ধি করুন আলোর মাহাত্ম্য।টেনে আনুন চার্বাক।ধারে ঘী খাওয়ার উপদেশে বেশ আধুনিকতার গন্ধ,সাহসে ভর করে এগিয়ে যান বেশ কয়েক ধাপ । সমর্থক হিসেবে করুন পরকীয়ার প্রচার। শাবাশ শাবাশ,ব্রেভোর জয়োটীকা নিশ্চিত আপনার কপালে।
সাধে কি আর বলে ঋদ্ধ হওয়া।বুকে হাত দিয়ে তারাদের সাথে নিজেকে একাত্ম করুন।উপলব্ধি করুন ভূত ভবিষ্যৎ আর বর্তমান । বর্তমান মানেই গোপিনীর সাথে বৃন্দাবন লীলা,আধুনিক পার্ক প্রেম । ঝোপ বুঝে কোপ । সেটাই নিধুবন আর কুঞ্জবনের অনন্ত রসায়ণ।রসে বসে কল্পনার আকাশে আঁকুন ধ্রুবতারা,মননে সমগ্র নক্ষত্রমণ্ডল । মনে রাখবেন কবিতার এই সৌরমণ্ডলের কেন্দ্রে অবশ্যই থাকবে মানবিক প্রেম। শুভ্র- সবুজ,যার মুখমণ্ডলে পরমহংসের দ্যুতি ।