ফলপ্রকাশ নিয়ে আলোচনা
আলোচক--রণজিৎ মাইতি
        ------------
"মাসি গো মাসি,পাচ্ছে হাসি
নিম গাছেতে হচ্ছে শিম্-
হাতির মাথায় ব্যাঙের ছাতা
কাগের বাসায় বগের ডিম।।"

প্রিয় কবি সমীর প্রামাণিকের  (অম্বরীষ কবি) 'ফলপ্রকাশ' কবিতা পাঠান্তে শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়ের উপরোক্ত "খুচরো ছড়া" মনে পড়লো। অবশ্য কবির কবিতায় হাসির ব্যাপার নেই।কবি বক্তব্য বিষয়ে সিরিয়াস।

আমরা যারা নুন্যতম অঙ্কশাস্ত্র নিয়ে পড়েছি সবাই জানি 2+2=4 হয়। a+b এর হোল স্কয়ারের সূত্র a স্কয়ার +b স্কয়ার+ 2ab । অম্বরীশ কবিও ভেবেছিলেন - - -

"টক হোক বা মিষ্টি
আমগাছ লাগিয়েছি যখন
আমড়া নয় ! আমই ফলবে নিশ্চয়"

কিন্তু পর্যবেক্ষণলব্ধ ফলাফলে ঘটলো কবির মোহভঙ্গ ।দেখলেন,সেই ভাবনা সবসময় প্রযোজ্য নয়,জীবন সবসময় আঙ্কিক নিয়ম মেনে চলে না ।তার গতিপ্রকৃতি বড়ো বিচিত্র ।তাই তো তিনি বললেন,- --

"জীবন
এমন সহজ হিসেবের সরল ফলাফল নয়
ভাবি এক,হয়ে যায় আর এক !"

কবি বিস্ময় প্রকাশ করেন জীবনের এমন ফলাফলে। এই বিস্ময় কি অমুলক ? বিস্ময়ের কারণ স্বরূপ কবি টেনে আনলেন মিথলজি ।

"ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কুরুক্ষেত্র
ফলাফল ভ্রাতৃঘাতী অনুশোচনা"

বলুন এমন ফলাফলে দেখে কেউ কি হাসতে পারেন ? স্বতঃই কবিকে ঘিরে ধরে বিষাদ । যদি জীবনের লেখচিত্র আঙ্কিক নিয়ম মেনে চলতো কি ভালোই না হতো।

অবশ্য কবি সুকুমার রায়ের হাসির কারণ অনিয়ম । যেহেতু নিয়ম মানেই একঘেয়েমি ।তাই জীবন একটু উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে হোক না । তাতে জীবনে বৈচিত্র্য তো আসে । যেখানে অনিয়ম প্রাণঘাতী হয় সেখানেই যতো সমস্যা । ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে ভাবতে হয় বৈকি ।

পরিশেষে বলি চমত্কার নামকরণ।কার্য কারণ সম্পর্কের নিপুণ পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে কবি করলেন ফলাফল প্রকাশ ।
নিখুঁত বিন্যাস ও অসাধারণ কাব্য শৈলী । সাবলীল ভাষায় সুন্দর নির্মাণ শৈলী কবিতাটিকে এক বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

এমন একটি মনোরম কবিতা উপহার দেওয়ার জন্যে প্রিয় অম্বরীষ কবিকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই । আগামীতেও আমাদের চোখ থাকবে কবির পাতায় এমন বিশেষ কিছুর আশায় ।