প্রিয় কবি আগুন নদী মহাশয়ের "আপেল বনের উপল ক্ষণে" কবিতাটি নিয়ে আলোচনা করার আগে কবি ও তাঁর কবিতা সম্পর্কে দু-একটি কথা না বললে আলোচনা অসম্পূর্ণ থাকে যায় । আমি এখনও পর্যন্ত কবির যতগুলো কবিতা পাঠ করেছি তা থেকে কবি ও কবিতা সম্পর্কে আমার মনে যে ধারণা জন্মেছে সেই বিষয়ে বলি।

প্রথমত:-----
কবি মূলত কবিতা নির্মাণ কালে চমকপ্রদ রূপকের আশ্রয় নেন,যা কখনও প্রকৃতি থেকে নেওয়া কখনও মিথলজির প্রয়োগে কবিতাটি অসাধারণ কাব্যিক রূপ নেয় ।তাই অনেক সময় আমাদের মতো সাধারণ পাঠকের মগজকে আন্দোলিত করে না।

দ্বিতীয়ত:------
কবিতার বিষয় ভাবনায় অভিনবত্ব।যা বুঝতে গেলে মগজের গভীর ব্যায়ামের দরকার হয়।

তৃতীয়ত: -----
শব্দ ও অলংকারের প্রয়োগে কবিতা সর্বদা অনন্যতার দাবি রাখে । যা কবিকে চেনায় আলাদা করে ।

চতুর্থত:-----
নির্মাণ শৈলী,কাব্যগুণ ও যতি চিহ্নের প্রয়োগে কবিতা বিশিষ্টতার দাবি রাখে ।

পঞ্চমত:-----
কবিতার শেকড় বা ব্যাপ্তি এতোটাই সুদূর প্রসারী যে ভাবতে বসলে মনে হয় অতল সাগরে ভাসছি।শাখা প্রশাখার বিস্তার নানান দিকে ছড়ানো।তাই যতোই ভাবি শেষে মনে হয় থই এখনও অনেক দূরে । আর লিখতে বসলে তো কথাই নেই ।তাই আমার এই আলোচনা যে সমস্ত পাঠক পাঠ করছেন তাদের কাছে স্বীকার করতে আপত্তি নেই যে এটি একটি অসম্পূর্ণ আলোচনা । তাই শ্রদ্ধেয় কবি আগুন নদী মহাশয় ও পাঠকের কাছে আবেদন আপনারা পাঠ শেষে আলোচনার ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

********
এবার "আপেল বনের উপল ক্ষণে" কবিতা সম্পর্কে বলি,এই কবিতায় কবি মূলত আপেল বনের অনুষঙ্গে মনে করালেন সর্বজনজ্ঞাত মিথলজি । আপেল বনে বিচরণ কারি আমাদের আদি মানব-মানবি আদম ও ইভের গল্প ।

তারা খুশি মনে দিনরাত আপেল বনে ঘুরে বেড়াতো।এমন একটি সুস্বাদু ফলের বনে ঘুরে বেড়ালে লোভ হওয়া স্বাভাবিক ।প্রথম প্রথম কুড়িয়ে কুড়িয়ে খেতো ফল। কিন্তু রিপুর তাড়না এমনই একসময় তারা ভুলে গেলো দেবতাদের বিধিনিষেধ । সরাসরি ছিঁড়তে লাগলো গাছ থেকে ফল । পেড়ে আনলো গাছে উঠে । শর্ত ভঙ্গের অপরাধে আদম-ইভ স্বর্গচ্যুত হলো। স্থান হলো মর্তে। তাই মিথলজি অনুযায়ী এরাই পৃথিবীর আদি মানব-মানবী,আমাদের পূর্বসূরি ।

এই আপেল বাগানের গল্পকে রূপক হিসাবে
ব্যবহার করে কবি প্রবেশ করলেন কবিতার মধ্যে । অবশ্য কবিতা না বলে জীবন আলেখ্য বলা সমীচীন হবে মনে হয় ।যদিও এখানে জীবন ও কবিতা একাকার । আসলে কবি মনে করালেন মানব ইতিহাসের ধারা অর্থাৎ বিবর্তন। সামনে এসে গেলো নানান প্রশ্ন চিহ্ন । এই যে রিপুর তাড়নায় মানুষের অবনমন তা কি বংশ পরম্পরায় পাওয়া আদম-ইভের থেকেই ?

বিজ্ঞান চেতনা কবিকে তাড়িত করে । তবে কি মানুষের মানব হওয়ার পথে চেতনা বোধ বা মগজের কোনও দাম নেই !! সামনে সাজানো গোছানো প্রলোভন কি কোনও ভাবে মানুষ এড়িয়ে যেতে পারেন না ?

এই প্রশ্নগুলোই কবি সঞ্চারিত করতে চান পাঠকের মধ্যে । যদি কখনও সম্ভব হয় রিপুপাশ কাটিয়ে মানুষের উত্তোরণ ।

আমার মনে হয় এই হলো কবিতার মূল ভাবনা।

আর একটা কথা সংক্ষেপে না বলে পারছি না,তা হলো কোনও সন্দেহ নেই কবিতার বিষয় ভাবনা গভীরতার দাবি রাখে।তারচেয়ে যেটা আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে তা হলো যথাযথ শব্দ প্রয়োগ,কাব্য লালিত্য ও অলংকারের প্রয়োগ । এই কবিতা এমনই কবিতা যা বলে বা লিখে 100% বোঝানোর ক্ষমতা মনে হয় আমার নেই। কেবল অনুভবে এই কবিতা ছোঁয়া সম্ভব। আমি অন্ততঃ কুড়ি বার পাঠ করেছি।

এমন সুন্দর নান্দনিক কাব্য উপহার দেওয়ার জন্যে প্রবুদ্ধ কবিকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই ।