যেতে হবে ছেড়ে
-----------(কবি গুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের যেতে নাহি দিব কবিতা অবলম্বনে আমার এই কবিতা)
---রমেন মজুমদার ।
আসবে গাড়ি নিবে তুলে সময় হলে পরে
বৈশাখ কিম্বা জৈষ্ঠ কিছুই রাখবে না সে ধরে।
উড়বে ধূলি পথের উপর পল্লী জনপথে--
তীব্র দহন ঊর্ধে সূর্য-- টানবে মরণ রথে।।
বৃদ্ধ কিম্বা কোলের শিশু,কিম্বা ধনী গরিব !
ঘুমিয়ে থাকলেও ডাকবে শেষে হয়ে উদগ্রীব !
খাঁ খাঁ করা নিজ্ঝুম পুরী টানবে চারিদিক!!
দিবে না বিশ্রাম একটুও, ছুটবে দিক্বিদিক ।।
পূজার ছুটি শেষ হলে গুটিয়ে লোটা কম্বল,
বলবে এবার পা'বাড়া তুই, লুটবে শরীর বল!
হাকাহাকি ডাকাডাকি এ'ঘর ও'ঘর ছাড়ি---
ফেলবে অশ্রু স্বজন যত, প্রাণটা নিবে কাড়ি !!
কেউ শুনবে না তোমার কথা সূর্য ডোবার কালে
যতই করো তালবাহানা ভিজবে চোখের জলে ।!
মায়ার বাঁধন ছিঁড়বে সুতা, কিসের কর্ণপাত !
যাত্রা পথে ছুটতে হবে, বিধির লেখা দৈবাৎ।।
যতই বলি দিব নাহি, তোমায় আজকে যেতে
কেন মিছে পিছু ডাক ! কেন রইবে মায়ায় মেতে ?
ঘড়ির কাঁটা চলবে সেই, আপন গতির পথে---
ম্লান মুখে অশ্রু ফেলা, মিথ্যা--আশ্বাস তাতে ।।
শিশুমুখ! স্নেহের বাঁধন ! যতই বাঁধুক তারে ;
কী আছে তার স্পর্ধাটুক, রাখতে একটু ঘরে ?
যায় খুলে সব শক্ত বাঁধন! মর্মে মর্মে ব্যথ্যা !
কেউ জানেনা আজ বিদায়ে ক্ষুদ্র শিশুর কথা !!
কি গভীর মগ্ন আকাশ! নিষ্ঠুর, মর্মান্তিক সুর !
হয়তো আজকে যেতেই হবে, পথটি বহু দূর !
ক্ষীণ মুখ ! নিভুবায়ু ! দীপ ক্ষীণ আলোক --
স্বর্গ মর্ত্যে চরাচরে তৃণক্ষীণ নভো দূল্যেক !!
স্বর্গ মর্ত্যে কম্পমান! প্রলয় সমুদ্র সৈকত
আদি আর অনাদিকাল !--যাত্রা মহরত !!
বিশ্বতট উঠে কেঁপে ; স্রোত তীব্র গতি !
পূর্ণ করে জল ঘট, মৃত্যু ডাকে,শ্রেষ্ঠ মহা মতি !!
তবু বলে,যেতে নাহি দিব তারে কষ্টের বাণী
তবু যেতে দিতে হয়, কে শুনে কার মৰ্ম ধ্বনি!
চিরঞ্জিবী কে কবে ?--বিধির লেখা তত্ত্ব !
ছিন্ন তরু পৃথি তলে---মৃত্যু খানি সত্য ।।
শান্তিনিকেতন,
বোলপুর,বীরভূম,ভারত।