এক চিলতে আকুতি
---- রমেন মজুমদার
তারিখ-২৩/১১/২০২৩
---
দেখেছি আদি জননী আমার সিন্ধুর ওপারে,
এপারে ফেলিলে শ্বাস ক্লান্তির ছায়া মেলে;
আদি পৌরুষের নির্ঘাত আস্ফালন দর্পে
জন্মিলাম বালুকার তটে মায়ের আশির্বাদে।
কে কন্যা তোমার,কে তোমার যৌবন প্রেয়সী ?
বক্ষের যাতনার শঙ্কা চিরে রক্তের ধারায়-
বয়েছে অনাদিকাল নির্মোহ সিন্ধুর স্রোত!
মুকতটে সোনালী রঙের কাশের নিবাস।
এখানে আন্দোলন বাতাস আর রৌদ্রের খেলাঘর,
অজানা কোন বেদমন্ত্রে গুমরে ওঠে কান্নার শব্দ!
অম্বরে মহেন্দ্রর বিচার শালায় করে মন্ত্রপাঠ
সুমঙ্গল জলধরাশি উছলিছে এপারের খেলা।
ঘুমন্ত পৃথিবীর ডাক শুনেছ কী নভোনীড়ে বসি ?
অসংখ্য চুম্বন অঙ্গে আঁকিছে বারম্বার এসে
তরঙ্গের বন্ধনে বাঁধি জননীর জন্ম উপহার;
ওপারের ডাক বহে আয় আয়,ওরে অবোধ বালুচর।
যতনে বেষ্টিত হাত মেলে দেই প্রসারিত প্রাণে,
সুকোমল মন্থর গতি সুগম্ভীর শাসনের খেলা;
চরণে চরণে মাতা উদীছ নিত্য অম্বরে বসে
অপূর্ণ আশা ফেলে ঝাঁপায়ে পড়েছ আমারে লয়ে।
রাশি রাশি শুভ্রহাসি;অশ্রুজলে বেগপূর্ণ আশা!
বিগলিত নিত্য অন্তর সুনির্মল ললাট চুম্বন;
আদি হতে অন্ত ধারায় সঁপেছ নিরন্তর স্নেহে...
কোথা জন্মকূল আর কোথায় প্রান্তিক পথের ধারা।
এপারে বসে ভাবি ওপারে সুখের অনন্ত নিবাস!
মৌন সমুচ্ছল স্রোত স্নেহপূর্ণস্ফীতস্তনভারে
দিয়েছ আমারে যবে দুগ্ধফেনরাশি ফেলিয়া হেথায়,
তবু চাহি অবিরাম তোমার শীতল স্নেহের পরশ।
রাখিতে পারনা কিছুদিন ?ধ্যানের কল্পিত অম্বরে;
নির্দয় বক্ষের ব্যথা ফেলি;প্রচণ্ড আবেগের নীরে,
রাখ তবে সুশীতল পরশ-সরস অন্তর পুত্তুলিরে;
রুদ্ধশ্বাস মুছি! কৌমার্য অন্তর বেষ্ঠি স্নেহক্ষুধা মেলি।
ধাইছে পিছনে কে অনির্বার; নাশিতে প্রকাণ্ড অধীর!
বিষণ্ণ ব্যাথায় ভরে সুকোমল তটতলে নিশ্চল ধরায়--
শান্তদৃষ্টি সন্ধ্যাদীপে উচ্ছ্বাস তটিনীর কোলজুড়ে
পথহীন একা একা খুঁজেছ কী জননী আমারে।
প্রভাত রবিরকিরণ উদিবে তোমার অমর্ত্য অম্বে--
দুইকুল ঘিরে রাখে সোনালী বুদ্বুদ হীরক রাশি;
করপুটে অঞ্জলি অর্পিবে যবে সান্ত্বনার অটুট আশা-
আমারে বুঝাইবে দিগন্তের শেষ ইচ্ছার দুরূহ বাণী।
শুনিতেছি চিরকাল ভরে তোমার নির্মোহ আর্তনাদ!
কিছু মর্ম, কিছু সুখান্বিত জন্মের আদি তথ্যশর্ত!
চিরকাল জন্ম-প্রজন্মের অন্তহীন অস্থির ভাষা;-
অজ্ঞাত ভ্রূণ কেটে!রক্তের নাড়ি বিদীর্ণতার ভারে।
যে রক্ত বহে যুগযুগ মনুষ্যপ্রাণে,অরণ্যঘিরে;
অবিশ্রান্ত কলতানে ঘিরিয়া আমারে হেথায়...
একচিলতে আকুতিভরা স্বপ্নের কোটিজন্মকথা!
যদি ফিরে আসে কোনদিন আমারে লইতে হেথা।
কবে মুছে গেছে, কবে কোনদিন হেথায় স্বস্থির আহ্বান!
গর্ভস্থ ধরণীর জঠরে বসে লয়েছি স্মরণ কাহার ?
অতি ক্ষীণ আশা জলে ভাসমান শৈবাল হয়ে,
অখণ্ড অধীর কাল! ক্ষীণভাষা মুক হয়ে ধীরে।
কী আছে রহস্যময় জননীর গর্ভে চিরবহমান !
স্নেহব্যাকুলতা,গর্ভিণীর পূর্বরাগ!প্রাতঃকুল ঘিরে;
কাঙ্খিত ব্যাকুলতায় এক নিবিড় সন্তান প্রসবের!
প্রতিক্ষাপূর্ণ সুদৃঢ় অবয়ব অমৃত পুত্রের সুদর্শনে।।
জীবশূণ্য স্নেহচঞ্চলতা, অবনীর বক্ষগর্ভে
আমৃত্যু প্রাণ!
স্মৃতিসমযুগান্তরের আদি কোন কালের ইতিহাস!
বয়ে চলে অনাদিকাল কালের সেই সিন্ধুর
মতোই--
এক অদ্ভুদ মানবীয় বীজজলে কোলাহল সন্তর্পণে।
জাগে যবে প্রণয়ের প্রাণাবেগ!স্তনসলিলের ধরা!
হে বসুমতি মাতা! নিপীড়ন যাও সব চিরকাল ভুলে;
একচিলতে আকুতি আশা মোরে, লয়ে যাও পারে-
দেখি সেই রূপক্ষণি স্বর্গের অব্যয় সলিল শর্বরীরে ।।
***সমাপ্ত**