ছিল কড়ি চার জমি আমার সবিশেষ ছাড়ি
কে জানিতো ইহা দুই ভাই নিয়া করিবে অবিচারি।
কষ্টের সংসার দু’মুঠো জুটিলে চলিয়া যাইতো  রোজ
সুধির বুঝিলেও ছোট্র অধির পাইতো না তার খোঁজ।
যাহা জুটিতো তাহাতেই দু’ভাই করিতো খুনাখুনি
কতো দিন যে অনাহারী থাকিতাম আমরা টোনাটুনি।
নয়নের জলে আঁচল ভিজাইতো ওদের দুঃখী মা
মা হইয়া সন্তানের এ দৃশ্য যে সইতে পারে না।
কাক কালো আকাশের কোন এক শ্রাবন সন্ধ্যা কালে
বিবি মোদরে ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন চিরতরে পরকালে।
এমনি করিয়া দু’সন্তান কেমনি দিবো সামাল
সুধির ব্যাটাও আস্তে আস্তে হইয়া উঠিল দামাল।
দুই বাপ ব্যাটা গায়ে খাটিয়া চলিয়া যাইতেছে বেশ
ছোট্র অধির তখনও এসবের পাইতো না কোন রেশ।
ক্রমে ক্রমে আমার শরীর যন্ত্র হইয়া উঠিল স্থির
তখন স্কুল ছাড়িয়া কলেজ ধরিলো ছোট্র সোনা অধির।
বাপ ব্যাটা খুব গর্ব করিয়া বলিতাম পাড়ায় পাড়ায়
অধির আমগো শিক্ষিত হইবো কে আর এবার হারায়।
হাড়ি ফাঁটাইয়া বাহির করিলাম ছিলো যতো কানা কড়ি
শহরে এবার পড়িতে যাইবে তাই কিনিয়া লইলো ঘড়ি।
লুঙ্গি ঝাড়িয়া এদিক সেদিক খুঁজিয়া জমাইলাম যত টাকা
সবই দিলাম ওর হাতে তুলিয়া বেঁচিয়া বিবির শাখা।
তারপর বহু বছর গত হইলো অধিরের পাইনি কোন খোঁজ
মাষ্টার মশায়কে জিজ্ঞেস করিতাম দু’বেলা রোজ রোজ।
এক প্রাতঃকালে বৃহস্পতিবার বছর গোটা সাতেক পরে
ঘরের ছেলে বিদেশ ঘুরিয়া ফিরিল নিজ ঘরে।
তুলিয়া লইলো বাছা আমায় শহরের বাসা পানে
মন চলিলোনা আমার দুর প্রবাসে সুধিরের টানে।
গুনে গুনে এবার চার কড়িকে করিলো ভাগ দুই
ভাগের টুকু লিখিয়া দাও বেঁচিয়া দিবো মুই।
ছেলে আমার পড়িয়া পড়িয়া অঙ্ক শিখিয়াছে ঢেড়
মাথায় ভাঙিয়া পড়িলো আকাশ পাইলাম না তো টের।
একি অলুক্ষুনে কথা শুনাইলি তুই আনিয়া আমায় কাছে
বাপ দাদার ভিটেখানা ছাড়া কিবা বাকী আছে।
ছেলে আমার জ্ঞানী মানুষ বেশী বুঝিয়া লইছে
সিদ্ধান্তে নাছোড়বান্দা তাহাই হইবে যাহা একবার কইছে।
কি করি কি বলি ভাবিয়া পাইনা কুল
নিশ্চয়ই পূর্ব জন্মে কোন কর্মে কিরিয়াছি মস্ত ভুল।
দৃষ্টিশক্তি শ্রবনশক্তি সবই আসিতেছে কমিয়া কমিয়া
প্রচন্ড দাবদাহেও আমি উঠিতেছি শীতে থাকিয়া জমিয়া।
মনখানা আচমকা ছুটিয়া গ্রামের পানে ধায়
কি জানি সুধির আবার কি করিতেছে কি বায়।
দাড়াও বাবা! আসিতেছি বলিয়া সেইযে চলিয়া গেলো
ভাগ্যিস পাশেই বৃদ্ধাশ্রম ছিলো তাহারাই খুঁজিয়া পেলো।
গ্রামে ফিরিল দু’ কড়ির লোভে আমার ছোট্র সুধির
কি জানি দু ভাইয়ে কি বাধাইলো আমি এখন বধীর।
আমি খুশি বহুত খুশি এইযে ছোট্র বৃদ্ধাশ্রমে
এটাই ছিলো প্রাপ্য আমার ঘামে ত্যাগে পরিশ্রমে।
একদিন অধির আবার ফিরিল আমার সেই গ্রামে
সুধিরকে কহিলো, দিন সাতেক হইলো বাবা মরিছে পড়িয়া ট্রামে।
কৌশল করিয়া দাবাইয়া লইছে তাহার ভাগের কড়ি
আমি সুখে অতি সুখে বুক ফাঁটিয়া মরি।
দিলটা বড় কাতর সুধিরের লাগি ছুটিয়া যাইতে চায়
কে আছে আমায় তুলিয়া নিবে উজান গাঙ্গের নায়।
একদিন হাটিতে হাটিতে চলিয়া গেলাম নিজ গন্ধের বাটীতে
একি কান্ড দেখিয়া প্রকান্ড সবাই বসিয়া আছে পাটিতে।
কানে কানে জিজ্ঞাসিলাম আমি ক্ষুধার্ত মৃতপ্রায় অর্ধ
আরে বৃদ্ধ বাসন লইয়া বসিয়া পড়ো সুধিরের বাপের শ্রাদ্ধ।
বিশ্ব নিখিলে আমি রেকর্ড হাকিয়েছি নিজের শ্রাদ্ধে আসিয়া
একি আমার পিন্ড তবুও জলের ঢেউয়ে যাইতেছে ভাসিয়া।

সুখে থেকো সুধির বাছা, ছোট্র অধির সোনা
বৃদ্ধাশ্রমে ফিরে শুরু করি মৃত্যুর দিন গোনা।
জীবিত থাকিয়াও মৃত আমি কেন এই করুন নিয়তি
আমায় তুলিয়া নাও হে ঈশ্বর করি করজোর মিনতি।

15.1.16