খুলিয়া দ্বার রাতে কিবা প্রাতে
দেখিতে পাই যারে ভিক্ষার ঝুলি হাতে।
মহিয়সি মা সে এ জন্মভূমিতে
পেটের দায়ে করে না ভিক্ষা
করে জীবনের দায়িত্বে,
অল্পতেই হারিয়েছে সব জীবন প্রভাতে।

ছিল সে রাজার নন্দিনী মনে মনে
জীবনটা ছিল তার ভরা স্বপনে।
সিঁথিতে সিঁদুর মাখিল এক মহালগ্নে
কোলেতে আসিল নন্দ আলোকিত ভুবনে।
আলোয় আলোয় ভরা জীবন
আলোতে মাখা ছিল তার সারা গগন।
একদা নিশিতে আসিয়া মৃত্যুর সমন
নন্দের পিতারে লইয়া করিল গমন।
নন্দ কাঁদে -কাঁদে মহিয়সী মা
কাঁদিয়া জগতে সৃজিল উপমা।

ভিটে-মাটি জমি-জমা ছিল যত
তাই নিয়া বাঁচিতে চাহিল কোনমত।
একদা আসিয়া গ্রামের মাতব্বর
কহিল নন্দিনীকে বাড়ি ছাড়িবে সত্বর।
তোমাদের যতসব জমিজমা রহিয়াছে
নন্দের পিতা তাহা আমায় লিখে দিয়েছে।

ডাকিয়া পাড়া-পড়শী কহিল নন্দিনী
মাতব্বরের এমন দাবি কখনো শুনিনি।
নন্দের পিতা সহজ সরল ছিল বটে
ধার কর্জ কভু নাহি করিত অকপটে।
বসিয়া গ্রামের সালিশী করিল মীমাংসা
ভিটে বাদে সব কিছু ছাড়িবে নন্দিনী সহসা।

অতঃপর আসিয়া নন্দের কাকা কহিল সকাতরে
ভিটাখানি বাঁধা ছিল আমার গোচরে।
ছাড়িতে হবে ভিটা বাঁধিব ঘর বড় করে
নন্দেরে লইয়া তুমি ভিটা ছাড়িবে সত্বরে।
একে একে হইল গ্রাস ছিল যত জমিজমা
অবশেষে করিল নাশ বসত ভিটাখানা।

সমাজের রাহু দিল না তারে থাকিতে আপন ঘরে
করিল বিদায় কলংকের বোঝা দিয়া ঘাড়ে।
শিশু পুত্র নন্দ লইয়া সঙ্গ; হইল বিদায়
স্বপ্নের গ্রামে আর ফিরিবে না সদায়।
যে গ্রামে একদিন এসেছিল বউ হয়ে রাণী সেজে
সে গ্রাম ছাড়িতে হলো তাকে ভিখারিনি বেশে।

প্রণমিয়া গ্রামের মাটি লইয়া নন্দের পিতার স্মৃতি
ছাড়িযা নিঃশ্বাস কহিল নন্দিনী-
আমার লাগিয়া আছে খোলা এ সুন্দর ধরণী।
অবশেষে নন্দিনী-
পাশের গ্রাম অজানাপুরে লহিল আশ্রয়
হেথায় নন্দিনী পাহিল ভিখারিনির পরিচয়।

এ জগতে ছিল তার যত চাওয়া হইল অসার
পুত্র দ্বারা নন্দিনী নিজেরে করিতে চাহিল প্রসার।
পুত্রের জীবন গড়িবার তরে নন্দিনী যায় দ্বারে দ্বারে
বিএ পাশ করাইল পুত্রেরে জীবনের সর্বস্ব হরণ করে।

দুঃখ যারে পিছু টানে-দুঃখ হয় না লাঘব
নন্দ পাহিল না চাকুরী ঘুরিয়া জগৎ।
মহিয়সী মা ছাড়িয়া হাফ কহিল বিধাতা
অল্পেতে যে সুখী আমরা তাতেও তোমার কৃপণতা।

আমরা খেটে খাওয়া-ভিটে হারা মানুষ চাহি না বেশি
চাই শুধু দু’মুটো ভাত আর কাপড় স্বদেশী।
এ দেশের সাধারণ মানুষ কাজ চায়
চায় সামাজিক অধিকার আর নিরাপত্তা
কালো হাতের করাল গ্রাস হতে মুক্তি চায়
এ দেশ আমার-আমাদের; এ বাংলার মানুষের,
এদেশের মানুষ বেঁচে থাকার স্বাধীন অধিকার চায়
সমাজের পাপ পঙ্কিল--কালো হাতের থাবা হতে মুক্তি চায়
স্বাধীন বাংলায়-স্বাধীন আলো-বাতাসের মতো
মুক্ত হয়ে বুক ভরে সজীব নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচার অধিকার চায়।