হায়েনার ছোবলে বানুর সব হলো বিদায়,
চিৎকার করিয়া কহিল বানু গৃহকর্তার ঠায়।
শুনিয়া গৃহকর্তা করিল তারে বিদায়,
অসহায় বানু শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে যায়।
ফিরিয়া বাড়ি স্থান হলো যে তার ফুফুর ঘরে
কাজের বায়না ধরে একদিন তারে ডাকিয়া সুধায়
এ কি বানু!
তোমার এমন অবস্থা কেমনে হয়েছিনু।
আকাশ পানে তাকিয়ে বানু কহে আপন মনে,
আমি নাহি জানি সৃষ্টিকর্তা তা জানে।
নামটি তার গোলাপ বানু থাকে বনে বনে,
আদর -আত্তি নাই যে কিছু, যায় যেখানে সেখানে।
এলোমেলো দিনগুলো তার পায়নি শিক্ষার আলো,
ক্ষুধার বেলায় একমুঠো ভাত পেলেই সে ভালো।
দিনে দিনে দেহে যখন পরিবর্তন এলো,
দেহ আজ নিজের নয় বুঝলো এবার বানু।
সবাই বলে ধাড়ী মেয়ে লজ্জা নেই যার
কেমন করিয়া করিবে সে স্বামীর সংসার।
কে করিবে তারে বিয়ে গায়ের রং যে কালো,
পিতা-মাতা সবই গেল যত আত্মীয় ছিলো।
বেঁচে থাকার দায়ে বানু হলো কাজের মেয়ে
সেই সুবাদে আশ্রয় পেল ঢাকার গুলশানে।
বানু যে আর কালো নয় হলো শ্যামলা মেয়ে,
দেহটা আজ বদলে গেল ঢাকার মায়া পেয়ে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বানু নিজেকে না চেনে
এবার বুঝি হবে বিয়ে কোন এক ভালো স্থানে।
রাহুর ছায়ায় করলো গ্রাস এক তিমির রাতে
ছায়ার মতো কে জানি ধরেছিল মুখ আর হাতে।
জ্ঞান ফিরিয়া বানু দেখিতে পায়
জীবনের সর্বস্ব তার লুট হয়ে যায়।
শুনিয়া ফুফু বানুর ঠায়
ধিক্কার দিয়ে বানুকে দিল বিদায়।
অশান্ত মনে সে মাথা লুকায়
দিকহারা বানু আবার আসে ঢাকায়।
গৃহকর্তারে কহিল সকাতরে,
আমার এ অবস্থায় দায়ী করিব কারে।
শুনিয়া কর্তা বানুর কথা ভীষণ চটিল,
উপায় না বুঝিয়া বানু ছাদ হতে লাফিয়া পড়িল।
নিথর নীরব বানু বন্ধন ছিঁড়িল
মাটির বানু মাটিতে আঁখি মুদিল।
সমাজ তারে আজ দিবে না অপবাদ
করিতে হবে না কখনো স্বামীর সংসার।
নেই তার প্রয়োজন একমুঠো ভাত
সাদা বসনে সাজালো তারে,
শুয়ে রহিল মাটির ঘরে।
এ ঘরে শত্রু নেই
ক্লোরোফমের রুমাল নেই
নেই ছদ্মবেশী সমাজের হায়েনা,
এখানে আছে শুধু অনন্তকালের অন্ধকার।