পাশের বাড়ির ঘোন্টুর দিদির কোলে
বেড়ে উঠেছি আমরা দুজন।
সারাদিন দিদির আঁচল ধরে ঘুরতাম,
গাছ থেকে পেড়ে দিতাম ডাঁশা পিয়ারা,
কখনো বা পাকা কামরাঙা।
সন্ধ্যা হলেই দিদির ঘরটা হয়ে উঠতো তেপান্তরের মাঠ,
দিদি তখন ঠাকুরমার ঝুলির ঠাকুরমা,
কিংবা আর এক কাজলা দিদি।
রাজকুমার, রাজকন্যা,
পক্ষীরাজ ঘোড়া
কিংবা সোনার কাঠি রূপোর কাঠি।
কখনো বা লাল চোখ ডাকাতের অট্টহাসিতে
শরীরের রক্ত হিম হয়ে আসতো।
গল্প শুনতে শুনতে
কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম দিদির কোলে
বুঝবার অবকাশ পেতামনা।
সকাল হলেই দুজনার কান ধরে
পড়াতে বসাতো দিদি,
আমার মায়ের শরীরের ঘ্রাণ
খুঁজে পেতাম দিদির শরীরে।
শ্বশুর বাড়ি থেকে দিদি ফিরলো
শেষবারের মতো,
শরীরে পোড়া মাংসের গন্ধ মেখে।
জীবনের অপরাহ্ন বেলায় মনে নেই
কে বেশি কেঁদেছিলাম,
আমি না ঘোন্টু।
ঠাকুরমার ঝুলি ঢেকে গেছে
ধূলোর মলাটে,
দিদির ছবিতে মালা......
সামনে নতজানু আমি আর ঘোন্টু,
হাতে কামরাঙা আর ডাঁশা পিয়ারা,
--একটা গল্প বলনা দিদি...একটা..
তোকে পুড়িয়ে মারার গল্প,
তোর জীবনে নটে শাকটা মুড়িয়ে যাবার গল্প।
নিঃশব্দ ঘরে ভেসে আসে পোড়া মাংসের গন্ধ।
ছবিতে দিদির মমতা ভরা হাসিটা আজও অমলিন,
শুধু নেই দিদির সেই আঁচলটা
যা ছিল এতকাল আমাদের মাথায়।