সম্মানিত পাঠক ও বন্ধু মহল,
আশা করি আমার এই লেখাটি পড়িয়া কেহই মনক্ষুন্ন হইবেন না। কিংবা আমার কথা শুনিয়া রাগ করিবেন না। আমি সাধারন একজন মানুষ এবং শখের বশবর্তী হইয়া মাঝে সাঝে কবিতা লিখিয়া থাকি। কিন্তু আজ যাহা প্রকাশ করিতে ইচ্ছা হইতেছে তাহাতে হয়তো অনেকে আমার উপর রাগ প্রকাশ করিতে পারেন। তবুও ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করিয়া এবং মনের ক্ষোভ নিবারণ করিবার জন্যেই লিখিতেছি।
ইদানিং আমার মানুষগুলোকে আর মানুষ মনে হইতেছে না, কুকুর বলিয়া বোধ হয়। আবার ও সনিবন্ধ অনুরোধ রাগ করিবেন না।
আমার গলির মুখে দীর্ঘদিন যাবত একটি কুকুর বাস করিয়া আসিতেছে, উহার দেহের গড়ন দেখিয়া সকলে উহাকে মায়া ও আদর করিয়া থাকে। উন্নত তাহার স্বাস্থ্যের গড়ন। সেদিন পথ হাটিতে গিয়া দেখিতে পাইলাম আমাদের সেই আদরের কুকুরখানি একটি কুকুরির পেছন পেছন হাটিতেছে। হঠাৎ দেখিতে পাইলাম উহার আচরনে কিছুটা পরিবর্তন পাইয়াছে, সে কুকুরিটির পশ্চাৎ দেশের দিকে বারং বার ঘেষিতে চাইতেছে, কুকুরিটি মাঝে মধ্যে তাহার শরীর ঝাড়া দেবার পায়তারা করিয়া চলিতেছে কিন্তু কুকুরের ঐ আচরনে সম্ভবত বিরক্ত হইতেছে না। তখন রাস্তায় অনেক লোকের সমাগম হইয়াছিল। কেহ অফিসে যাইতেছিল, কেহ কলেজে আবার কেউ বা বাজারে। ছোট হইতে বৃদ্ধ সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্য খানে কুকুরটি এক অদ্ভুত কাজ করিয়া বসিল। কুকুরিটিও তাহা সাদরে গ্রহণ করিল। উহারা দুইজনে সমাজ সভ্যতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাইয়া, চক্ষু লজ্জার মাথা খাইয়া সঙ্গমে লিপ্ত হ্ইল। ছিঃ একি কাণ্ড।
রাস্তায় চলমান মানুষগুলোর মধ্যে হুলুস্থুল পড়িয়া গেল। কেহ কেহ উচ্চস্বরে হাসিতে লাগিল, কেহ লজ্জায় মুখ ঢাকিতে থাকিল আবার কেহ আড় চোখে সে দৃশ্য অবলোকন করিতে লাগিল। আমি উহাদের ভৎসনা করিতে লাগিলাম। ছিঃ এও কি কোন কাজ হইল। এই জন্যই ইহারা জানোয়ার বলিয়া স্বীকৃত। ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
ইহার কিছুক্ষণ পর ঐ স্থান হইতে কিছুটা দূরবর্তী স্থানে রাস্তার পাশের এক ছোট চায়ের দোকানে বসিয়া চা পান করিতে করিতে কিছুক্ষণ পূর্বে চোখের সাম্মুখে ঘটিয়া যাওয়া ঘটনাটি বারংবার মনে পড়িতে লাগিল আর পশুদের উপর ভৎসনা দিতে লাগিলাম। ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
হঠাৎ দেখিতে পাইলাম, সম্মুখ দিয়া একটি রিক্সা চলিয়া যাইতেছে। উহাতে আরোহন করিয়া আছে তরুন বর্ষীয়া দুজন যুবক যুবতী। হঠাৎ লক্ষ্য করিলাম, রিক্সা চালকে সম্মুখে রাখিয়া, রিক্সার হুড উঠাইয়া ছেলেটি উহার হাত দ্বারা সেই মেয়েটির দেহের গোপন অঙ্গে হস্ত চালনা করিতেছে। মেয়েটি বাধাও দিতেছে না আর সায় ও দিতেছে না কিন্তু নিরব সম্মতি জ্ঞাপন করত চুপ করিয়া তাহা সহ্য করিতেছে। ইহার নাম নাকি ভালবাসা। হঠাৎ চোখের সম্মুখে ভাসিয়া উঠিল কুকুর কুকুরির ছবিটি। মনের ভিতর একটি কন্ঠ বলিয়া উঠিল, ইহাদের আর কুকুর কুকুরির মধ্যে কী তুমি কোন পার্থক্য দেখিতে পাও? মাথা নিচু করিয়া সেই খান হইতে প্রস্থান করি। আর শুনিতে পাই এই দৃশ্য আজিকাল সর্বত্র নাকি কমন হইয়া গিয়াছে। ছিঃ এই নাকি ভালোবাসা। যাহার সাথে কুকুরের আচরনের কোন পার্থক্য নাই। ছিঃ ছিঃ। ইহার জন্য এখন মানুষগুলােকে কুকুর বলিয়া মনে হয়।
এর কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ঘর হইতে সেই কুকুরটির চিৎকার শুনিতে পাইয়া রাস্তায় ছুটিয়া আসি। দেখি কুকুরটি একবার রাস্তার এই মাথা হইতে ঐ মাথায় দৌড়াইয়া যাইতেছে আর আসিতেছে আর উচ্চস্বরে চিৎকার করিতেছে। কারন অনুসন্ধানে দেখিতে পাইলাম, পাশের লাইনের একটি দুর্বল কুকুর এই এলাকায় আসিতে চাহিতেছে। কিন্তু আমাদের এলাকার কুকুরটি নিজের এলাকায় দুর্বল কুকুরটিকে ঢুকিতে দিবে না। এই কারনে সে বারং বার তাহার তীক্ষ্নকন্ঠে চিৎকার করিয়া ঐ দুর্বল কুকুর টিকে দূরে সরাইয়া রাখিতেছে। আর চিৎকার করিতে করিতে হাফাইতেছে আর তাহাতে তাহার লম্বা জিভ খানা মুখ হইতে বাহির হইয়া ডানে বায়ে ঝুলিতেছে। দুর্বল কুকুর টি দূরে সরিয়া গেলে সবল কুকুরটি শান্ত হইতে থাকে। আমরা যাহারা এই দৃশ্য দেখিলাম তাহারা হাসিতে লাগিলাম। ঘরে গিয়া বসিয়া আছি কিছুক্ষণ পর আবার দৌড়াইয়া আসিলাম এইবার কুকুরের চিৎকারে নয়, মনুষ্য কন্ঠে কে যেন প্রচণ্ড চিল্লাইতেছে। দেখিতে পাইলাম ২৫ উর্দ্ধো এক যুবক যাহার পড়নে আধুনিক পোষাক, পায়ে দামি জুতো, গলায় লাল একখঅানা টাই বাধা, ৫০ উর্দ্ধো এক বৃদ্ধ রিক্সা চালককে ধমকাইতেছে। এবং উর্দ্ধস্বরে চিৎকার করিয়া বলিতেছে,
ব্যাটা মানুষ চিনিয়াছ? একেবারে চিনাইয়া দিব, ব্যাটা এমন শিক্ষা দিব আর কোন দিন রিক্সা লইয়া এই এলাকায় ঢুকিবার সাহস হইবে না। ঢ্যাং ভাঙ্গিয়া দিব, রিক্সা গুড়া করিয়া দিব, কাহার এলাকা এটি যান? ইত্যাদি ইত্যাদি. আরও বিভৎস ভাষায় বৃদ্ধকে ভৎসনা করিতেছে। কারণ অনুসন্ধানে জানিতে পারিলাম রিক্সা ওয়ালা ভাড়া বাবদ ৫ টি টাকা বেশি চাহিয়াছিল। তাহাতেই যুবকটি রাগান্বিত হইয়া চিৎকার চেচামেচি করিতেছে। আর রাগে যুবকটির সমস্ত শরীর এমন ভাবে ঝাকাইতেছিল যে তাহার গলার লাল টাইখানি দেহের দুই দিকে দুলিতে লাগিল। যেমন টি দুলিতেছিল সেই কুকুরের লম্বা লিকলিকে জিহবাখানা। সামান্য কটি টাকা বেশি চাহিয়া বৃদ্ধ এক মুরুব্বির নাজেহালে মনে হইল ঐ কুকুরটি যেমন এলাকার বড়াই করত দুর্বলের উপড় খেপিয়াছিল এই যুবকের সাথে উহার কোন পার্থক্য নাই। আর এই দৃশ্য এবং ঘটনা কেবল এই একটি যুবকের নহে সমস্ত যুবক সম্প্রদায় যেন বেয়াদবির ট্রেনিং নিয়া রাস্তায় নামিয়াছে যাহা দেখা যায় বাসে, রাস্তায়, অফিস আদালতে সর্বত্র। তাই আমার মনুষ্য জাতিকে ইদানিং কুকুর বলিয়া বোধ হয়।
ছিঃ কি নিকৃষ্ট চিন্তা আমার।
এর বেশ কিছুদিন যাবত আরও একটা জিনিস চোখে পড়িল। সেই কুকুরিটি যাহা আমাদের এলাকার কুকুরের সাথে সঙ্গম করিয়াছিল। তাহাকে দেখিলাম, কিন্তু সে এখন একা নহে তাহার সঙ্গে ৩ খানি নাদুস নুদুস বাচ্চা। দেখিতে পাইলাম মা কুকুরটি আগে আগে চলিতেছে পেছনে বাচ্চাগুলো। হঠাৎ দেখিলাম বাচ্চাগুলো একস্থানে দাড়াইয়া চিৎকার করিতেছে। বোঝা যাইতেছে না কেন চিল্লাইতেছে। কিন্তু মায়ের মন ঠিকই বুঝিতে পারে তাই কুকুরিটিও বুঝিতে পারিয়াছিল তাহার শাবকদের ক্ষুধা পাইয়াছে। তাই সে রাস্তার এক পাশে হঠাৎ তাহার পা দুখানি ছড়াইয়া স্তনবৃন্তগুলি দুলাইয়া দুলাইয়া কুকুর শাবকগুলিকে আহবান করিতে লাগিল
'এখানে এসো! এইখানে মুখ দাও ক্ষূধা মিটিয়া যাইবে।'
কুকুরিটি নির্লজ্জের ন্যায় শাবকদের দুগ্ধ খাওয়াইতে লাগিল। তাহারাও সেই আহবানে সাড়া দিয়া ক্ষুধা নিবৃত্ত করিতে লাগিল। কিন্তু তাহারা তো কুকুর জাতি। তাহাদের লজ্জা নাই। কিন্তু আমার চোখ এতই খারাপ হইয়াছে যে আজিকাল কিছু নারীদের মধ্যিখানে আমি সেই কুকুরিকে স্পষ্ট দেখিতে পাই। দেখিতে পাই দেহের গোপন সৌন্দর্য গুলোকে কিরূপে কুকুরির ন্যায় দুলাইয়া দুলাইয়া প্রদর্শনে ব্যস্ত তাহারা। কিরূপে তাহারা তাহাদের গোপন অঙ্গগুলিকে গোপন না রাখিয়া জন সমুখ্খে প্রদর্শন করাইয়া মানুষের দৃষ্টি আকর্ষনে ব্যস্ত, যেমন কুকুরিটি তাহার স্তন দেখাইয়া শাবকগুলিকে আকর্ষন করাইয়াছিল। আমরা আজিকাল সেই অর্ধ পোষাকের ললনাগণদের অর্ধ দেহের অর্ধ সৌন্দর্য দেখিয়া প্রতিনিয়ত আকর্ষিত হইতেছি। কেহ বা সত্যি সত্যি মুখ দিতেছি ক্ষুধা নিবৃত্ত করিবার তরে।
ছিঃ এই কি আধুনিকতা। ছিঃ আমার চিন্তা চেতনা কতটা নিচে নামিয়া গিয়াছে যে মানুষের মধ্যিখানে আজিকাল কুকুর কে দেখিতে পাই।