বল, জন্ম হতে আমি স্বাধীন, সদা মুক্ত,
সচেতন জীবসত্তায় আমি সতত সূক্ত।
আমি মানুষ, আমি জন্মেছি অধিকারযুক্ত,
যা পেতে আমি উদ্যত, জাগ্রত, ভয়মুক্ত,
নিঃসংকোচ ও শক্ত।।
আমি মুক্ত, এ আমার জন্মগত অধিকার;
জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দেশ নির্বিশেষ সবার
অধিকার: মর্যাদাসহ নিরাপদে বাঁচার।
সবার জন্য সমান স্বাধীনতার আমি দাবিদার,
আমি উদ্যত রক্ত।।
আমি কারো দাস নই, কেউই নয় দাস আমার;
মানি না কারো প্রতিই অমানবিক অত্যচার;
আমি জানি-মানি: আইন সবার জন্য সমান,
বিশ্বমানবতার এটাই অমোঘ ফরমান,
আমি অন্তর্ভুক্ত।।
বল, আমি বলদৃপ্ত, শাশ্বত, সদা সত্য
আমি এক আইনি সত্তা, প্রস্তুত অস্তিত্ব।
আমি উজ্জ্বল, আমি বিকশিত, প্রকাশিত;
নশ্বরদেহে আমি অবিনশ্বর হরকত,
দুর্বার জীবরক্ত।।
স্বাধীন আদালতে বিচার পাবার অধিকার,
কভু বিনা দোষে বন্দি না থাকার অঙ্গীকার,
আমার সব অধিকার সংবিধানে স্বীকৃত,
জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণায় বিবৃত
ও স্বাক্ষরযুক্ত।।
আমি যদি করি দোষ, করবে বিচার আদালত,
বিনা বিচারে আমায় মারে সে কোন কম বখত?
আমি চাই তার বিচার যে নাশে গোপনীয়তার
আমার অধিকার, এবং যে হানে মান আমার;
সে হোক বিচারভুক্ত।।
রাষ্ট্রের দাস নই, সদস্য আমি, সত্য।
এ রাষ্ট্রে কেউ নয় রাজা, কেউ নয় ভৃত্য।
নেতা শুধুই আমার সেবক আর প্রতিনিধি,
আমার হয়ে করে বিধিÑ রুধিতে মানা গতিবিধি,
চলাফেরা, নাগরিকত্ব।।
পরিবার পাবার আর আশ্রয়ের অধিকার,
মুক্ত তথ্যে, মুক্ত বিবেকে মুক্ত ভাবার
আর প্রকাশের অধিকার, এবং আমি চাই
মুক্তমনে সব সমাবেশ-সংগঠনে যাই,
এসব মোর স্বত্ব।।
যে কোনো ধর্ম মানার ও না মানার অধিকার,
বৈধ সম্পত্তি পাবার ও বেচার অধিকার,
নির্বাচন: আমার ভোটে যে সরকার গঠন,
সে সরকারে আমার ইচ্ছার প্রতিফলন;
এ অধিকার শাশ্বত।।
আমার নাজুকতায় চাই ভাতাসহ সম্মান,
সদা সম-অধিকারে চাই কর্মসংস্থান,
মুক্ত মননের বিকাশে চাই মুক্ত শিক্ষা,
মুক্তমনে পেতে চাই গান-কবিতার দীক্ষা,
পূর্ণ শঙ্কামুক্ত।।
মৌলিক মানবাধিকার সকলেরই দরকার।
এই বোকা, কেউ কি কাউকে দিয়ে যায় অধিকার?
চলো লড়ি, রাষ্ট্র গড়ি সবার তরে মুক্ত,
উন্মুক্ত, অধিকার আর দায়িত্বযুক্ত;
এসো হে সাহসসিক্ত।।
সাহিত্যশৈলী: কবিতাটি ১১টি পঞ্চপদী লিমেরিক দ্বারা গঠিত। পঞ্চপদীগুলোর পূর্ণ পঙক্তি ১৮ মাত্রার এবং অর্ধ্বপঙক্তি ৯ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। অর্থাৎ, মাত্রাবৃত্ত ছন্দে প্রতিটি পঞ্চপদী ১৮+১৮+১৮+১৮+৯ আকারের। কবিতাটিতে জাতিসংঘ-ঘোষিত সার্বজনীন মানবাধিকারের ৩০টি অনুচ্ছেদের মূলভাব তুলে ধরা হয়েছে।