বাংলাদেশের বিজয় মানে_ দেশের জনতার কোনো জয়,
বাংলাদেশের পরিচয় মানে_ দেশের জনতার পরিচয়।
বাংলাদেশের অর্জন মানে_ দেশের জনতার অর্জন,
বাংলাদেশ মানে_ ভূখণ্ড, সরকার, আর জনগণ,
যেসবের সার্বভৌম মালিক বাংলাদেশের জনগণ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা_ সে তো জনতার স্বাধীনতা,
জনতার হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা।
বাংলাদেশের মুক্তি মানে_ জনতার মুক্তি,
জনতার একতাই যার শক্তি।
রঙধনুর সাত রঙের মতন
বিভিন্ন জাতি-ধর্মের জনগণ
‘বাংলাদেশি’ পরিচয়ের ভেতরে
অংশগ্রহণ করে, পরস্পরে বোঝাপড়া করে,
মদিনা সনদের রূপরেখার মতন করে
প্রতিটি জাতি-ধর্মের বাংলাদেশিরে
সামাজিক চুক্তিতে ঐক্যবদ্ধ করা প্রয়োজন,
যাতে সম্ভব হয় বাংলাদেশি জাতিগঠন;
যাতে সংখ্যাগুরু বাংলাদেশি মুসলমানের সার্বিক মুক্তি
সংখ্যালঘু বাংলাদেশি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের সার্বিক মুক্তি,
সংখ্যাগুরু বাংলাদেশি বাঙালির সার্বিক মুক্তি,
আর সংখ্যালঘু বাংলাদেশি সাঁওতাল, চাকমা, গারো, মণিপুরী, ত্রিপুরার সার্বিক মুক্তি,
একসাথে একপথে সম্ভব হয়,
আর মদিনা রাষ্ট্রের মতন বিকশিত হয়।
মধ্যেরা ডান ও বামকে নিয়ে দুই পাশে,
সকলকে ভালোবেসে,
সংযমের সঙ্গে ধৈর্য ধরে,
সকলের বোঝাপড়ার ভেতরে,
এমন জাতিগঠন করতে হবে,
যার মধ্যে সকলের মুক্তি নিহিত রবে।

সকল দলের, সকল মতের
সকল ধর্মের, সকল জাতের
সকল বাংলাদেশির সংহতির সুতা:
সকলের সম্মিলনে_ সার্বজনীন বাংলাদেশি জাতীয়তা।
সকল বাংলাদেশির একক পরিচয়,
সকলকে দেয় সমান সম্মান, সমান অধিকার, সমান জয়-পরাজয়;
এর মধ্যেই সকল জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্র পরিচয় স্বীকার করে,
বহুর মধ্যে একের পরিচয় তুলতে হবে গড়ে;
যার ভেতরে প্রত্যেকেই পাবে সমান অধিকার ও স্বাধীনতা:
সকলের সম্মিলনে_ সার্বজনীন বাংলাদেশি জাতীয়তা।

ঔপনিবেশিক শাসনের যাতাকলে,
আর স্বৈরাচারী-ফ্যাসিবাদী শাসনের কালে,
গড়ে উঠেছে যেসব বিভাজনের কৃষ্টি-কালচার,
ট্যাগ,  র‌্যাগ, কাল্টবাজি, নিপীড়ন ও অত্যচার,
আমাদের নিশ্বাসে-বিশ্বাসে যেসব বিভাজনের বিষ ঢুকে গেছে,
সেসব ছাপ-ছুতরা করার মাঝেই জনগণের মুক্তি আছে।

আমাদের জনতার মুক্তির তরে দরকার_
রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার।
বাংলাদেশের জনতার মুক্তির তরে দরকার_
সর্বাঙ্গীন পরিচ্ছনতার অভিযানে সংস্কার।

মুক্তি ও স্বাধীনতাকে সবার জন্য সমান করতে দরকার_
সকল ক্ষেত্রে সিস্টেম সংস্কার।
রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত যেন জনগণ নিতে পারে,
তার তরে, ভোটের ব্যবস্থা রাখতে হবে বহুস্তরে।
শাসক যেন আর হতে ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচারী হতে না পারে,
ক্ষমতার কাঠামোতে সংস্কার দরকার তার তরে।
রাষ্ট্র যেন সব জনতাকে সমান চোখে দেখে,
তার ব্যবস্থা করতে হবে সর্বস্তর থেকে।
সবাই যেন সমানভাবে ন্যায়বিচার পায়,
তার ব্যবস্থা রাখতে হবে কলমে-খাতায়, আইনে ও বাস্তবতায়।
দেশের টাকা কেউ যেন আর চুরি করতে না পারে,
তার ব্যবস্থা রাখতে হবে সংস্কারের ভেতরে।
সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর সামাজিক ন্যায়বিচার,
কথায় নয়, কাজে প্রয়োগ দরকার।
অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত না হলে,
সকল রক্তদান ও সকল সংস্কার বৃথা যাবে তার ফলে।
ধর্মহীনতা নয়, ধর্মীয় স্বাধীনতার বড্ড প্রয়োজন,
জাতিকে বিবেচক বানাবে ধর্মীয় মূল্যবোধের সঠিক সংরক্ষণ।

বিদেশি কোনো শক্তি যদি দেশের স্বার্থ মারে,
জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার ভেতরে,
রাষ্ট্র যদি তা রক্ষা করতে না পারে,
তার অর্থ_ “দেশ তো আর স্বাধীন না রে!।”
জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার হতে হবে দেশের নীতি_
তাতে দরকার: সমতা, ন্যায্যতা ও পারস্পারিক স্বার্থের স্বীকৃতি।
জাতীয় স্বার্থের অগ্রাধিকারে_
রাখবো যেখানে স্বার্থ বেশি আমার এবং যারা আমারে রাখে তাদের অগ্রাধিকারে।
প্রতিবেশি, সবার আগে দরকার তারে,
মুসলিম দেশ ভালোবাসে আমারে ধর্মের খাতিরে,
আর উন্নয়নশীল সহপথযাত্রী দেশগুলোরে,
রাখা দরকার আমাদের অগ্রাধিকারে।

দেশরক্ষার মহান দায়িত্বভার যেসব বাহিনীর কাঁধে,
তাদেরকে কলঙ্কিত করা যাবে না কারো রাজনৈতিক স্বার্থে।

গ্রাম হতে শহরে, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের ভেতরে,
জাতিকে গড়ে তুলতে হবে স্বনির্ভর করে।

নারী-পুরুষ, শিশু-যুবা-বৃদ্ধ,
মুসলমান-খ্রিস্টান-হিন্দু-বৌদ্ধ,
বাঙালি-সান্তালি-চাকমা-পাঙন,
সকলে মিলে বাংলাদেশের জনগণ।

সকলে যদি সুস্থ ও শক্ত না থাকে,
মুক্ত না থাকে দারিদ্র্য-অপুষ্টি থেকে,
‘মুক্তি’ বজায় থাকে কার কাঁখে?
কৃষি-চিকিৎসা-পরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে, তাই অগ্রাধিকার রেখে।

জলবায়ু, পরিবেশ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বিশ্বরাজনীতি,
সবকিছু বদলে যাচ্ছে, দ্রুত অতি।
“খাপ-খাইয়ে নাও, অথবা ধ্বংস হয়ে যাবে”,
প্রতিযোগিতার এ পৃথিবীতে মুক্তভাবে বাঁচতে হলে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হবে;
বিবেক-বুদ্ধিতে আর বিচক্ষণতায়।
এই দায়িত্ব বাংলাদেশের সকলের মাথায়।

সকল বাংলাদেশির মুক্তির মতবাদ_ বাংলাদেশবাদ,
যাতে নিহিত আছে সকল বাংলাদেশির সমান স্বার্থ, অধিকার ও অস্তিত্বের আবাদ।