কথ্য ভাষায় কাব্য হয় না,
গেঁয়ো ভাষা কেউ চায় না,
কইছে বুলি ধরা ময়না,
আধুনিক কবি।
তোমরা যত মানুষ আছো,
শুদ্ধ ভাষার শব্দ বাছো,
কাব্যজ্ঞান নিয়ে বাঁচো,
হও নতুন কবি।।
এমন কথা যহন হুনি,
শুদ্ধ শব্দ তহন গুণি,
ঝোলা ঝেড়ে হায় তহনি,
দেহি কিছু নাই।
পদ্য লেহার সদ্য নেশা,
ছুটে যায় সব না পাই দিশা,
ঝুলি খালি ভাই।।
কী কয় আধুনিক কবি,
(যেন) রবির দাদা মহারবি,
ওরে, মনা কী যে ক’বি,
ভাইবা নাহি পাই!
তুই যে ব্যাডা কবি হলি,
বাপ-দাদার নাম ভুলে গেলি,
কুলের মুহে কালি দিলি,
ভাষার মুহে ছাই।।
আব্দুল লতিফ কবির কথায়,
‘কইতো যাহা আমার দাদায়,
কইছে তাহা আমার বাবায়,
এখন, কও দেখি ভাই মোর মুখে কি
অন্য ভাষা শোভা পায়?
ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’।।
এসব কথা শুইনা দাদা,
কইছে কৃষ্ণ প্রসাদ দাদা,
‘সরল মানুষ সিধা সাধা,
গরলে কাজ নাই’।
নব্য যুগের সভ্য কবি,
আদি অন্ত যা কয় সবি,
ওরা যেন স্বর্গের কবি,
কইবো কী আর ভাই।।
লালন, হাসন, আর সিরাজ সাঁই,
বিজয়, রসিক কবির খোঁজ নাই,
(কবি)অসীম কান্দে তাই।
ভাষার ধাক্কায় বুঝবে কেডা,
কবিতা যেন যমের ব্যাডা,
(তার) আগা কোনডা, পাছা কোনডা
বুঝার কায়দা নাই।।
এসব দেইখ্যা কইবো কিডা,
ভুইলা যাই আমি কেডা,
আমার মাঝে আমি ব্যাডা,
খুঁইজা নাহি পাই।
আমি কই ‘হে ভোলাবাবা’,
ও শোনছে ‘হালায় ব্যা ব্যা’,
(তাই)আমার মুখে মারছে থাবা,
বাঁচার উপায় নাই।।
এসব মানুষ, জানে কীডা,
কাব্য কথার মানে কীডা?
জঙ্গলের বিডি বেডা,
জানবেই বা কী?।
রবি তো সেকেলে কবি,
আমরাই আধুনিক কবি,
মোদের সারস্বত বিদ্যার দাবি,
তোমরা বুঝবে কী?।।
‘কলাগাছের মাথায় চ’ড়ে,
লম্ফ দিই হিমালয় চূড়ে,
মহিষাসুরের পেটটি ফুঁড়ে,
শ্বশুর বাড়ি যাই।
কোপ্তা কাবাব বিরিয়ানী,
তাজমহলে সাহেবানী,
স্বভাবগুণে আর এক রানী,
(আমি)শাখামৃগ তাই’।।
(এই)আজগুবি কবিতা শুনে,
মহাকবি ভাবি মনে,
অর্থ খুঁজি মনে মনে,
খুঁইজা নাহি পাই।
কলাগাছ আর শাখামৃগ,
শ্বশুর বাড়ির কী সৌভাগ্য!
তাজমহলের মাঝে মাগো,
শাখামৃগের ঠাঁই!!
আমরা যত গেঁয়ো যোগী,
না খাইয়া হইলাম রোগী,
ওদের মতন হইলে ভোগী,
কবি হওয়া যায়।
পাঁচতারা হোটেলে বসে,
প্যাডের মধ্যি ঠেসে ঠেসে,
জম্মের খাওন খাইয়া শেষে,
আরো কিছু চায়।।
আমরা যত মুখ্যু-সুখ্যু,
কপালেতে আছে দুঃখু,
মাথার মধ্যি চিন্তা সূক্ষু,
ক্যামনে আসে ভাই?।
তাইতো শুধু দিবারাতি,
জ্বালিয়ে রাখি আশার বাতি,
একতারাটা ক’রে সাথি,
দেশেরই গান গাই।।