গ্রামের পাশে বয়ে গেছে
লম্বা বিলের ধারা-
ছেলে-মেয়ে জড় হতাম
সমবয়সী যারা।।
বিলের ধারে মাছ ধরিতাম
সকাল-দুপুর ভর-
সন্ধা রাতে শুরু হতো . . .
মোদের সবার জ্বর।।
মায়ের হাতে খেতাম মোরা
অনেক মাইর আর বকুনি-
আরো প্রবল ইচ্ছে চাপতো,
পণ মোদের তখনি।।
আম, পেয়ারা, পেঁপে পাড়তে
খেয়েছি অনেক গালি,
দুপুর হলেই মাখতাম মোরা
কাদা-মাটি আর কালি।।
বিলেই মোদের ঝাঁপা-ঝাঁপি
দিয়েছি কতো লাফ-
চোখ ঘোলাটে হতো সবার
পাইনি কভুও মাফ।।
হাজার মেরেও যায়নি থামা
মোদের এই গতিকে-
লেখা-পড়ায় ফাঁকি ঝুঁকি
ঠেকায় কে আর মোদেরকে??
বিলের ধারে গল্প করি
বিলেই করি খেলা-
মোদের লাগি বিল বসাইছে
আনন্দের এক মেলা!!
বিল মোদের বন্ধু সবার
মন যে কেড়ে নেয়-
চাষের জন্য সবার জমি
উর্বর করে দেয়।।
কত! রকমের মাছ যে আছে,
ভরে বিলের বুক-
পদ্ম-শাপলার হাসি ভরা
সারা বিলের মুখ।।
বিলের পাশে বাতাসে দোলে
সবুজ-সোনা ধান,
বিলের ঐ যে স্রোত ধারায়
কতোই না মোদের টান।।
বিল ছাড়া আর বুঝিনা কিছু
কিশোর দল সবাই ...
দুপুর বেলায় নাউ নিয়ে যে
ভ্যাঁট তুলিতে যাই।।
নাউ বাইতাম অনেক দূরে...
শাপলা-ভ্যাঁটের নেশায়-
বড়োই পাগল হইতাম মোরা
অভ্যাসের এই পেশায়।।
যাইতে যাইতে অচিন দূরে
বিলের দুটি ধারা!
নেশায় মোরা ভুলেই গেছি-
যাবোই নাকি মারা।।
বুঝে গেছি সবাই মোরা
হইছে অনেক লোভ,
হটাৎ পাশে চেয়ে দেখি-
অনেক সুন্দর ঝোঁপ!!
শাপলা-ভ্যাঁট আর ডিমে ভরা
ঐ না ঝোঁপের বুক,
পা ফেলিতেই দেখছি চেয়ে,
অনেক পাখির মুখ!!
সাদা বকের বাচ্চাছানা
আর নীল রঙের ডিম গুলো,
কেউ বা বলে দেখছো কি সব?
নাউয়ে আগে তোলো।।
গামছা-গেঞ্জিতে বোঁঝায় বাঁধা
ভ্যাঁট আর শাপলা ফুলে-
বাচ্চাছানা আর ডিম সব মোরা
নাউয়ে নিলাম তুলে।।
সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে এলো
ফিরবো কখন গাঁয়ে?
সব কিছু নিয়েই মোরা
বসলাম চেপে নাউয়ে।।
ফেরার পথে বিলের ধারে,
অনেক কাঁশফুল-
ভাবছি- "নিয়ে বাচ্চাছানা"
করেছি বড় ভুল!!
বিলের ঘাটে উঠতেই দেখি
উড়ছে বকের ঝাঁক-
ভ্যাঁট-শাপলা, পাখি-ডিম তবুও
করে নিলাম ভাগ।।
সবি নিয়ে ভয়ে ভয়ে...
ফিরছি যখন বাড়ী-
আমায় দেখে মায়ে তখন
লাঠি নিল পাড়ি।।
সবাই আমায় বললো তখন
কোথায় গেছিলে বলো??
হাতের এসব দেখে মারবে কি আর
-বেশ অবাক হলো!!
খাওয়া দাওয়া সবি হলো,
ডাকছে সবাই শুতে আয়-
শুয়ে শুয়ে ভাবছি শুধু
পাখিগুলো পোষা যায়।।
শুয়ে -
"ঘুমের আগে চিন্তা করলাম
কাল খাঁচা বানাবো যেই,
সকাল বেলা জেগে দেখি-
পাখিগুলো আর বেঁচে নেই!!"