কেমন আছো ? কিভাবে কাটলো এ কটা দিন ?
বহুদিন পর লিখছি তোমায় , ভুল বললাম ? আগে কি কখনো লেখেছি? মনে পড়ছেনা । জীবনের নানান রঙ মেখে কতোটা রঙিন হয়েছো তুমি? এখনো কি ঝুম বৃষ্টির দুপুরে রবীন্দ্র সঙ্গীত চালিয়ে দিয়ে চোখ বোজো আবেশে ? কপালের ভাঁজে , তোমার জোড়া ভ্রুয়ের মাঝে কারো আলতো হাতের স্পর্শ টের পাও? তোমার ভরাট কণ্ঠের জাদুতে আজো কি মনের বাগানে ফুল ফোটাও তুমি ? সে ফুলের গন্ধে কেউ কি বিভোর হয় আমার মতন ? মনের সব কষ্টগুলোকে তোমার উচ্ছল হাসির আড়ালে ঢেকে আনন্দ বিলিয়ে যাচ্ছো তো ? অনেকটা সময় পার করে এলাম তোমায় ছাড়া, কিন্তু, মনে হয় এই তো সেদিন । তুমি চায়ের সাথে একটা সিগারেট ধরালে আর আমার বকুনি খেলে , মনে পড়ে ? মনে পড়ে তোমার আঙুল আমার আঙ্গুল গুলোকে কি নিবিড় মমতায় জড়িয়ে নিতো। তোমার চোখের গভীরে ডুবে যেতে যেতে নিজকে খুঁজে পেতাম আমি।
মনে পড়ছে যেদিন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম...তুমি কেমন গম্ভীর হয়ে বসেছিলে আসরের মধ্যমণি হয়ে আর আমি ভাবছিলাম ‘ আরে এ দেখি রামগরুড়ের ছানা’ । এরপর বহু বছর বন্ধু হয়ে একসাথে পথ চলা। খুব কাছের বন্ধু ছিলাম কি? মনে পড়ছেনা ।
এক দুপুরে কবিতা পড়বার ফাঁকে হঠাৎ তোমার যে কি হলো..আঁজলা ভরে জল নেয়ার মতন করে তুমি আমার মুখটা তুলে নিলে তোমার হাতে। সেদিন তোমার চোখে আমি শুধুই আমাকে দেখেছিলাম । আমার দেহ অসাড় হলো , খুব চেনা পৃথিবীটা যেন মুহূর্তেই ওলট পালোট হয়ে এক্কেবারে অচেনা হয়ে গেলো । সেই অচেনা পৃথিবীর সম্রাজ্ঞী ছিলাম আমি । সে পৃথিবীতে শুধু একটাই ঋতু ছিলো বসন্ত । পুরো পৃথিবীটা ঢেকে ছিলো নানান রঙের ফুল। গাছে গাছে পাখি গাইতো ভালোবাসার গান। জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা কথাটা বহুবার শুনেছি , ঐ প্রথম বুঝেছিলাম তা কতো সত্য ও সুন্দর । সেই থেকে তোমার নাম দিলাম ‘সমুদ্র’ , আর আমায় ডাকলে তুমি ‘নুড়ি’ বলে।
কাজে মন বসানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালো । শুধুই মনে হতো ছুটে যাই তোমার কাছে , ছুঁয়ে দেখি তোমায় । সময় নামের খরস্রোতা নদীর ঠেউয়ের আঘাতে বহু স্মৃতি হারিয়ে গেছে কালের গর্তে । শুধু ওই প্রথম স্পর্শের সৃতিটা কেন যেন আজো নস্টালজিক করে তোলে , ঘুম কেড়ে নেয় রাতের, চোখের কোণটা ভিজে ওঠে নোনা জলে ।
কোথায় যেন বেজে চলেছে “ তোমরা যে বলো দিবস রজনী ভালোবাসা ভালোবাসা , সখি ভালোবাসা কারে কয় ?” রবীদা আমি জানি ভালোবাসার মানে – ‘সমুদ্র আর নুড়ির’র সব না ছুঁতে পাওয়া আকাঙ্ক্ষা গুলোর নাম ছিলো ভালোবাসা।
ভালো থেকো খুব সমুদ্র।
তোমার 'নুড়ি'