পড়ছিলাম ড. শাহানারা মশিউর এর ‘শুষ্ক প্রাণে বৃষ্টি আনে’ শিরোনামের কবিতা। পাঠেই ভালোলাগা। খুব একটা আড়াল নেই কিন্তু মাধুর্য আছে। সাথে পেলাম মহাগ্রন্হ আল কোরআনের একটি আয়াতের সত্যায়ন। এবং বাংলা ও ইংরেজি দুটি প্রবাদের সমর্থন। এগুলো হচ্ছে, ১) ‘আল্লাযি আল্লামা বিল কালাম’ (সুরা আলাক, আয়াত ৪) যিনি (আল্লাহ মানুষকে) কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। ২) অসির চেয়ে মসি বড়। ৩) 'The pen is mightier than the sword.' এবার আসুন তাঁর কবিতার অন্তরে প্রবেশ করে আমাদের বক্তব্যের আলোকে বুঝে নিতে চেষ্টা করি।
  কবিতাটি লক্ষ করুন দুটো সিঁড়ি।  প্রথমটায় পরিপার্শ্ব ও যৌক্তিকতা  হিসেবে এসেছে ইতিহাস। কবির কথায়,
“ সত্য কথা বললে
জিহ্বা কেটে দেবার
পরিকল্পনা পরাজিত!
কবিতা লিখলে হাতের হাড়
চূর্ণ……
পড়ে আছে পতিত দুষিত  ঐ জলাশয়ে”

      এখানে কবি স্বার্থকভাবে বলেছেন, অত্যাচারী শাসক-বলদর্পী সামন্তপ্রভু- ক্ষমতাধর পেশী, এরা আমজনতা এবং কলমধারী কবি তথা চিন্তাশীল বিবেকবান ব্যাক্তিবর্গকে সত্যপ্রকাশের কারণে নানা নিবর্তন করেও দমাতে পারেনি। পরিশেষে সত্য আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে সূর্যের মতো ঝলঝল করে।মিথ্যে বারবার পরাজিত হয়। ইতিহাসে তার নজির অসংখ্য। চোখের সামনেইতো আছেন কবি নজরুল, আছেন নাজিম হিকমত আরো কত! এরা আমাদের নমস্য আর অত্যাচারকারী ঘৃণার্হ। এ ইতিহাস আপনাদের জানা।
দ্বিতীয় সিঁড়িটিঁ তুলনামূলক বড়। এতে অনন্ত সম্ভাবনার দিকটি ভাবা যায়।
“যে হলো স্বাধীন শেষে
যে চলে ঐ মেঘের দেশে

চিরচেনা কলমটি পকেটেই আছে
শুষ্ক প্রাণে বৃষ্টি আনে কলমে কলমে

পাথরের মাথায় মস্তক লাগায় কলমে কলমে

তোরা এঁকে যা, এই সার্থক সুন্দর কবির দুনয়নের দুটি ছবি”।

এখানে তিনি কলমের শক্তি, কবির শক্তি, এ শক্তি কার্যকরের শর্ত এবং আমজনতা ও হালের কবি তথা শিক্ষিতজনকে তেমন কবির মতো হতে আহবান করেছেন। ডাক দিয়েছেন তেমন কবির চোখে পৃথিবীকে দেখতে । এখানে কবির বক্তব্য স্পষ্ট, বয়ান সারলিক কিন্তু ব্যাপ্তি বিস্তর। কলম কেন শক্তশালী হবে না? পবিত্র কুরআনের সুরা আলাকের যে পাঁচটি আয়াত মহানবী হজরত মোহ্ম্মদ (সাঃ)  এর নিকট সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয় তাতে বলা হয়, “পাঠ কর তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিণ্ড হতে ।  পাঠ কর, আর তোমার রব অতি দানশীল। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে সে যা জানত না”। তার মধ্যে চতুর্থ আয়াতে কলম দ্বারা শিক্ষা দেবার কথা বলা হয়ছে। যা দ্বারা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন সেই কলম তরবারি তথা সমস্ত মারনাস্ত্র থেকে প্রমাণিত শক্তিশালী। কবি তারই সত্যায়ন করেছেন। ধারণ করেছেন প্রবাদগুলোও। কবিতার আঙ্গিক বিন্যাস চমৎকার।
প্রশ্ন আসতে পারে সব কলমই শক্তিশালী? কবি কিন্তু তা বলেননি। কবি ইতিহাস টেনে দেখেছেন সমস্ত অত্যাচার পায়ে পিষে যাঁরা স্বাধীনতা পেয়েছে তাঁরা সত্য প্রকাশে ফল্গুধারা হয়েছে। তাই কবি শর্ত দিয়েছেন, “ যে হলো স্বাধীন শেষে ।”  যে কলম স্বাধীন নয়, স্বাধীন দেশেও যে কলম বিক্রিত ও বিকৃত সে কলম যত শক্ত হাতেই থাকুক তা অসাড়, চুড়ান্ত প্রস্তাবে বিকল। যে কবির চোখ অন্যায় পক্ষপাতদুষ্ট, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো দেখে না সে চোখ অন্ধ, পরাধীন।
তাই কবি কেবল সত্য সুন্দররে ধারক বাহক সার্থক সুন্দর কবির দুনয়নের দুটি ছবি আঁকতে বলেছেন। আসুন সকলে মিলে সে চোখের ছবি আঁকি।
অনন্য এ কবিতার জন্য কবিকে আন্তরিক অভিবাদন।