‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি ক্যামনে আসে যায়’ ( ফকির লালন)
আমি এখানে ছিলাম না। এখানে থাকতেও পারব না। কোথাও ছিলাম ।তাই এলাম। কিছু দেখলাম, কিছু করলাম, কিছু অভিজ্ঞতা হলো। আবার কোথাও যেতে হবে।যেতেই হবে। এক স্তর থেকে আরেক স্তরে ।এক লোক থেকে অন্য লোকে। কিছু জানা, কিছু অজানা। কিছু জানানো হয়েছে। কিছু বোধে আসে, কিছু আসে না ।দূর্গম-দুর্বোধ্য। কোথা ছিলাম? কোথা এলাম? কেন এলাম? কেন যাব?তারপর কি? অনন্ত জিজ্ঞাসা! বলা হয়, ছিলাম রোহের জগতে। এলাম ইহ জগতে।ধরা ছোঁয়া বাস্তব জীবন। চাক্ষুস, দৃশ্যমান। দেহ পেলাম। খেলাম,ঘুরলাম, নাচলাম-নাচালাম।অথচ সকল পার্থিব ধন ফেলেরেখে কি জানি কি উড়ে গেল, দেখা গেল না। পড়ে রইল নিথর দেহ! জন্মের পর থেকে যে দেহ নড়ল-চড়ল, আজ সে অচল! পচে যাবে, গলে যাবে, গন্ধ ছড়াবে। সুতরাং দাফন কাফন, সৎকার! কবির কথায়,
“উড়ে যায় পাখি সব/ উড়ে যায় মন
পিছে তার পড়ে থাকে /জীবনের ধন।
সারাদিন নাচানাচি /কিচির মিচির
দিনশেষে সাঁঝবেলা/ ওড়ে মুসাফির”।
অন্য অনেক কবি সাধকের মতো আলোচ্য কবিও চিত্রকল্প নিয়েছেন প্রাকৃতিক উপাদান পাখি এবং সময়। সারাদিন নাচানাচি কিচির মিচির করার পর সাঁঝবেলায় যেমন পাখি উড়ে যায়; মানুষ ও তাই। দম ফুরালে সবই অন্ধকার।“চোখ বুজিলে দুনিয়া আন্ধার। কিসের মায়া কিসের ছায়া কিসের সংসার”। (বাংলা গান) “এই দুনিয়া মুসাফিরখানা জান না/কতো মানুষ আইল গেল রইল না।” (লোক কথা)। দেহ ছেড়ে যে পাখিটা গেল সে কোথায় গেল? পরলোকে (আলমে বরজহ্, স্বর্গ- নরক।) অনেকে মানে, কেউ কেউ বলে –গালগল্প। কবি সেদিকে যান নি। তিনি মানুষের বিদায়কালীন দৃশ্যপট সামনে এনে জীবনানন্দের ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’ এর আবহে ভিন্ন ভাবনায় বলেছেন,
“ঘরে ফেরে সব পাখি /ইহ দেহ ছেড়ে
আকাশে লালের আভা/ শোক তাপ করে”
।
এখানে “আকাশে লালের আভা শোক তাপ করে” এক চমৎকার কাব্যিক কথন। একজন মানুষের মরণে যে শোকাবহ পরিস্হিতির উদ্ভব হয় তা যেন দিবাবসান কালে সূর্যের রক্তিম আভার মতো।
মাত্রাবৃত্ত বা কলাবৃত্ত ছন্দে ৮/৬ বিকল্পে ৪,৪/৪,২ মাত্রাবিন্যাসে নিপুণ ছন্দ প্রয়োগ। ভাবর্থ অনুসারে নামকরণ যথাযথ। চির পুরাতন অথচ চির নতুন অনুভব। অন্তর নেড়ে গেল। চমৎকার অনুভবের কবিতার কবিকে অভিনন্দন।
কবির প্রতি:-অন্ত্যমিল বিন্যাস মন,ধন/ চির,ফির সুন্দর। কিন্তু ছেড়ে, করে নিয়ে ভাবা যেতে পারে। কেননা ছেড়ে >ে কার আন্ত। করে> অ ধ্বনি যুক্ত । অথাৎ এ ধ্বনি এবং অ ধ্বনির মিল এড়ানোই ভাল।( দেহ ছেড়ে সব পাখি /ফেরে নিজ ঘরে কিংবা
ইহ দেহ ছেড়ে পাখি /ফেরে নিজ ঘরে) করা যায় কিনা ? এতে বাঙালির মনে ট্রেডমার্ক করা জীবনানন্দীয় প্রভাব এড়ানো যায় বলেই মনে হয়।