শক্তিমান কবি জাহিদ হোসেন রনজু’র মঞ্জিল কবিতা পড়ছিলাম আর মনে পড়ছিল ছন্দের যাদুকর কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮২-১৯২২) মহোদয়ের বাংলা সাহিত্যের অনন্য ছন্দের কবিতা “দূরের পাল্লা’।এ কবিতাটি মাত্রাবৃত্তের শক্তিকে দারুণভাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছে। কী অনন্য প্রয়োগ!
“ছিপখান তিন-দাঁড়–
তিনজন মাল্লা
চৌপর দিন ভোর
দ্যায় দূর পালা।
পাড়ময় ঝোপঝাড়
জঙ্গল,–জঞ্জাল,
জলময় শৈবাল
পান্নার টাকশাল”।
এ কবিতার প্রেরণা থেকে অনেকেই কাব্য লিখেছেন। আমি নিজেও এ ছন্দে লিখতে চেষ্টা করেছি। জাহিদ হোসেন রনজুও হয়তো করেছেন। মানবজাতি আমরা সুখ-নিড়ের খুঁজে ঘোড়দৌড়ে রত আছি। কবির প্রশ্ন মূল মঞ্জিল কত দূর? এ দৌড়ের শেষ কোথায়? কাল রাত তো শষ হয় না! তাঁর কবিতায় তিনি অতি চমৎকার ভাবে ছান্দিক ব্যাঞ্জনায় এ ভাব তুলে ধরেছেন।আসুন এ বক্তব্যের সমর্থনে তাঁর কবিতাটি পাঠ করি।
দিনরাত/ ঘোড়-দৌড়/ ‘যত্’ দূর
মঞ্জিল,/ মঞ্জিল /‘কত্’ দূর?
হাঁকছি/ প্রাণপণ/ কন্ঠে
–সুখ নীড়-/ মঞ্জিল/ ‘কোন ঠে’?
‘ঐ তো,/ নয় দূর-/ বলছে
দেয় রোজ/ আশ্বাস /কোন সে?
সব্বাই/ মঞ্জিল/ খুঁজছি
সেই দূর /আজ তক/ ছুটছি ।
পাই না/ সুখ নীড়/ দোর তো
হয় না /কাল্ রাত/ ভোর তো।
স্বরবৃত্ত ছন্দ রুদ্ধ সিলেবল সব সময় ১ মাত্রার মূল্য পায়। সে হিসেবে প্রতি চরণে ২+২+২=৬ মাত্রা যথাযথ আছে। কিন্তু ছন্দের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এটির প্রতি চরণের প্রথম ও ২য় পর্বে ২টি করে রুদ্ধ সিলেবল দাবি করছে। এটি যদি করা যায় স্বরবৃত্ত ছন্দে মাত্রাসাম্যর সাথে সাথে তাল-লয় ও ঠিক হয়। সাথে সাথে আরেকটি ঘটনা ঘটে মাত্রাবৃত্ত ছন্দেও ছন্দ নিয়মিত হয়। ফলে সৃষ্টি হয় স্বরমাত্রিক ছন্দের। মাত্রাবৃত্ত ছন্দ হচ্ছে রুদ্ধ সিলেবল সব সময় ২ মাত্রার মূল্য পায়। এবার কবির এ কবিতাটি আমরা আমাদের ঈপ্সিত ছন্দে দাঁড় করাবার চেষ্টা করি –
দিনরাত/ ঘোড়দৌড়/ যদ্দূর
মঞ্জিল/ মঞ্জিল /কদ্দূর?
হাঁক-ডাক/ প্রাণপণ/ কন্ঠে
সুখ-নীড়/ মঞ্জিল/ কোনঠে?
ঐ ঐ/ নয় দূর / বলছে
দেয় রোজ/ আশ্বাস /কোন সে?
সব্বাই/ মঞ্জিল/ খুঁজছি
সেই দূর /আজতক/ ছুটছি ।
পাই নাই/ সুখ-নীড়/ দোর তো–
হয় নাই /কালরাত/ ভোর তো।
এভাবে লিখলে ফলাফল দাঁড়ায়:- স্বরবৃত্তে প্রতি চরণে ২+২+২=৬ মাত্রা এবং মাত্রাবৃত্তে প্রথম দুই চরণ ৪+৪+৪=১২ মাত্রা। অন্যসব চরণ ৪+৪+৩ = ১১ মাত্রা। অর্থাৎ মূল পর্ব ৪ মাত্রা উপপর্ব ৩ মাত্রা। কবি জাহিদ হোসেন রনজু সাহেবের পাতায় মন্তব্য করলে তিনি বিস্তারিত বলার অনুরোধ করেন। লেখাটি যাঁরা ছন্দনিয়ে কাজ করছেন বা করবেন তাদের কাজে লাগতে পারে। অন্যদিকে ঋদ্ধমান কবি ও আলোচক মহোদয়গণের পরামর্শে এ অধম উপকৃত হতে পারি এ ভাবনা থেকে আলোচনার পাতায় নিয়ে এলাম। আসুন বন্ধুগণ এ ছন্দে কিছু লিখি। বৈচিত্র্যে ভরিয়ে তুলি বাংলা কবিতাকে। জনাব জাহিদ হোসেন রনজু আপনার ভাল লাগলে আপনার মতো করে কবিতাটি এডিট করে নিতে পারেন।
চমৎকার কবিতার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । শুভরাত্রি।
যশোর ২৫/৫/১৮খ্রিঃ