‘বোতাম’ প্রতীকীব্যঞ্জনাময় এক কবিতা
রহমান মুজিব
সৈকত পাল (নীরব দুপুর) এর “বোতাম” পাঠ করে ফরাসী প্রতীকবাদ (Symbolism) এর কথা মনে পড়ল। বোদলেয়ার, র্যাবো মালার্মে এধারার কীর্তিমান। প্রতীকবাদ ফরাসী ফসল হিসেবে গণ্য। বাংলার বাউল ঘরানা তথা লালন, হাসনের গানে প্রতীকীব্যঞ্জনা আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল । প্রতিকের একটা মজা হলো দেখলাম, “রুমাল হয়ে গেল বিড়াল।” অথাৎ শব্দের মধ্য থেকেই শব্দাতীত বোধরে ব্যাপার। সহজ কথায় বিরাট ভাব প্রকাশ করতে পারা একজন কবির শক্তিমত্তার প্রকাশ। আসুনতো, সহজ সরল কথার ‘বোতাম’ কবিতায় উপর্যুক্ত গুণগুলো ধরা পড়ে কি-না দেখি। কবি তাঁর কবিতায় বলেন,
“জামাটার বামপাশের নাম/- মা
ডানপাশের নাম বাবা/
মাঝে একটা সাদা বোতামের/ মতো
ফুটফুটে চাঁদ।
যে এক করে রেখেছে তার/ প্রাণপ্রিয় দুই ঈশ্বরকে”।
আমরা তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে কবিতাটির অর্থ বুঝে নিতে চাইব। প্রথমত: ‘মা’, ‘বাবা’, ‘সাদা বোতামের মতো ফুটফুটে চাঁদ’ এ তিনটিকে নারী, পুরুষ এবং বন্ধন হিসেবে মানব শিশু এ তিন প্রতিকের প্রতিনিধি হিসেবে ধরে নেব আর জামা হবে পরিবারের প্রতীক। বুঝে নেব মানবসৃষ্টির ইতিহাস। প্রথম মানব, প্রথম মানবী এবং তাঁদের মাধ্যমে পৃথিবীতে আসা আদম-সন্তান। মানবসভ্যতা জারি থাকার মাধ্যমে বৃহত্তর অর্থে আদি পিতা-মাতার পরিবার জারি থাকা।
দ্বিতীয়ত: ‘সাদা বোতামের মতো ফুটফুটে চাঁদ’ কে বন্ধন হিসেবে নিষ্পাপ সন্তানের প্রতীক ধরে একটা সুখি পারিবারের চিত্র দেখে নেব। জামা হবে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। মা-বাবা- সন্তান তিনে মিলে সুখি পরিবার। মা- বাবা সম্মিলিত ভাবে ঈশ্বরের মতো সন্তানের মঙ্গল ও নিরাপত্তা বিধানে একক হয়ে ক্রিয়াশীল থাকেন ।আর সন্তান বিনাসূতোর সুইয়ে মা বাবার দুটো হৃদয়কে সেলাই করে রাখেন।
তৃতীয়ত: এটি সবচেয় সম্ভাবনাময়।এখানেও দ্বিতীয়টির মতোই প্রতীক ধরে নেব। যুগ যন্ত্রণা এখানে অধিকতর ক্রিয়াশীল। আজকাল পারিবারীক সম্পর্কে যেভাবে ভাঙ্গন দেখা যাচ্ছে, সেখোনে যদি সন্তান থাকে সে একটা দারুণ বন্ধন হিসেবে কাজ করে। অন্ততঃ সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক পরিবার টিকে যায়। অথাৎ বোতাম যেভাবে জামার দুপাশ সৌন্দর্যমণ্ডিতভাবে আঁটকে রাখে তেমনি ভাবে সন্তান সন্ততি পিতা মাতাকে এক্য বেঁধে রাখে। বাঁধনটা আবার মায়ার। এভাবে বুঝে নিয়েই কবিতাটির ভাবার্থ, বাগভঙ্গিমা, বিষয়ও প্রকাশ কৌশল দারুণ লেগেছে।
কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে সিদ্ধ। পাঁচ লাইনের একটি কবিতায় বাড়তি হিসাবে পাই উপমা। একটা চিত্রকল্পতো আছেই। আরো আছে, কবিতায় বলা কথার বাইরের কথা। এতকিছুর পরও কবিকে অভিনন্দন না জানালে কার্পণ্য করা হবে।
প্রাণঢালা অভিনন্দন কবি।