“অনন্ত প্রবাহে” একটি জীবনবাদী কবিতা
এমন মানব জীবন আর কি হবে … মহামতি লালন সাঁইয়ের এ জীবন বোধন কবি রণজিৎ মাইতির মনন ধারায় প্রবহমান।জীবন ফুলশয্যা নয়, কাঁটা ঘেরা। তা সত্তেও মানব জীবন অনন্ত সম্ভাবনার। জীবন স্তব্ধ তো অন্য সকল সৃষ্টি অর্থহীন। পাখি না থাকলে খাঁচার প্রয়োজন কোথায়? “অনন্ত প্রবাহে” কবি তাই জীবন প্রবাহের গানই করেছেন। কবির বিবৃতি, তিনি চলছেন ফিরছেন আর ভাবছেন অনাগত দিনের কথা। তিনি কায়িক, মনসিক শ্রমে ঘামে যে ফুল কুড়ালেন সময়ের বিবর্তনে তা বাসি হয়,পচে যায়। এখানে কবি সভ্য মানব সমাজের প্রতিনিধি, কুড়ানো ফুল তার অর্জন, বাদ- মতবাদ, জ্ঞান ইত্যাকার বিষয়। কিন্তু তা অনন্ত নয়, নিয়ত পরিবর্তন পরিবর্ধনশীল। যেমনটা পরিবর্তনশীল পৃথিবীর জলবায়ূ। কবির ভেতরেও চলে এ পরিবর্তন। তিনি শুনতে পান জীবনের কলতান “ কুলকুল শব্দে ঝরে যায় জীবনের ঝোরা..”। তিনি পেয়ে যান চলিষ্ণু জীবনের আস্বাদ।
কিন্তু কবি আত্মমগ্ন অন্ধকূপের বাসিন্দা নন। তিনি তাঁর চারপাশ দেখেন, বুঝতে পারেন সমাজ,রাজনীতি, সমাজের কদর্য দিক। যদিও তিনি অনুকূল স্রোতে ভেসে যাওয়া কিছু শৈবাল দেখতে পান তথাপি তাঁর দৃষ্টি সন্ধ্যার আবির ছড়ানো সিগ্ধ রোদের মায়ায়। সুশীল মানুষের প্রতিরূপ কবি তাই বাঁচার অদম্য ইচ্ছায় ঝাপটে ধরেন ভাসমান খড়কুটো যত। এখানে কবির ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আশাবাদ প্রস্ফুটিত। তাই “অনন্ত প্রবাহে” জীবনের সিম্ফনি শুনতে পাই। কাব্যভাষা,আঙ্গিক, চিত্রকল্প নান্দনিক। হ্রস্য-দীর্ঘ-হ্রস্য এভাবে পঙতি সাজিয়ে জীবনের ত্রিচক্র এবং বহমানতা বুঝাতে চেয়েছেন বোধ করি।
কবিতায় ভাল লাগার অনুসঙ্গ যুক্ত করে আনন্দিত করায় কবির প্রতি ভালোবাসা।